ক্যান্সারে আক্রান্ত জেনেও বিয়ে করলেন ভালোবাসার মানুষকে

চট্টগ্রাম : দু’জন দু’জনকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। আর সে কারণেই ভালোবাসার মানুষকে হারাতে চাননি। তাই মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও প্রেমিকাকেই বিয়ে করলেন কক্সবাজারের চকরিয়ার ছেলে মাহমুদুল হাসান।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন মাহমুদুল হাসান। আর চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়াতে জন্ম নেওয়া ফাহমিদা কামাল ইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছেন। শিক্ষাজীবনে তাদের দুজনের পরিচয়। লাবণ্যময়ী স্মার্ট সুন্দরী তরুণী ফাহমিদাকে ভাল লাগতে শুরু করে হাসানের। এর পর আস্তে আস্তে দুজন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

হঠাৎ করেই ফাহমিদা অসুস্থতা অনুভব করেন। চলে যান হাসপাতালে। চিকিৎসা নিয়ে জানতে পারেন যে তার শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণরোগ ক্যান্সার। শুরু হয় চিকিৎসা। প্রথমে ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতাল, পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাকে নেওয়া হয়।

সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তারেরা সাফ জানিয়ে দেন- ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেয় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। পাথরচাপা কষ্ট নিয়ে পরিবারের লোকজন ২০ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করান। সেখানে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শারীরিক অবস্থায় অবনতি হতে থাকে।

ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট, যন্ত্রণা প্রেমিক হাসানের সহ্য হয় না। ফাহমিদার কষ্ট হাসান ভাগ করে নিতে চান। কপালে হাত রেখে বলতে চান- আমি আগের মত এখনো তোমার পাশে আছি। তুমিই আমার জীবন, তুমিই আমার সব। বুকে জড়িয়ে নিয়ে কষ্টগুলো নিজের করে নিতে চান। কিন্তু তা কী করে সম্ভব! হাসান ফাহমিদার প্রেমিক হলেও সমাজের চোখে পরপুরুষ। মৃত্যুযন্ত্রণায় ফাহমিদা নিঃশেষ হতে চলেছে।

এবার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন হাসান। ফাহমিদাকে যদি মরতে হয়, তাহলে তার বুকে মাথা রেখেই মরবে। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দিল সে সহসা ফাহমিদাকে বিয়ে করবে। মৃত্যু পথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই হতবিহ্বল। হাসানকে বুঝানোর ব্যর্থচেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অটল।

অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে প্রিয় হাসানের দিকে। ফাহমিদার মুখে ফুটে উঠে নির্মল স্বর্গীয় হাসি।

অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গত ৯ মার্চ রাতে মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দুজন মিলে কেক কাটে, মালাবদল হয়। খেজুর, মিষ্টি খাওয়ানো হয়।

ক্ষণিকের জন্য মরণঘাতি ক্যান্সারকে জয় করে ফাহমিদা হয়ে উঠেন অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা। সমস্ত স্বর্গীয় সুখ তাকে ঘিরে রাখে। হারিয়ে যাওয়া সোনালী দিনগুলো আবার যেন ফিরে পান।

এ ঘটনা জেনে ফেসবুকে সাইমা আক্তার নামের একজন নারী লিখেছেন, “এমন ভালোবাসা খুব কমই আছে। আর এমন কিছু নিদর্শন আছে বলেই মানুষ প্রেমে পড়ে। খুঁজে বেড়ায় এমন আপন একজন মানুষ। দিন শেষে বেশিরভাগই ব্যর্থ প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা! ভাগ্যক্রমে যার সঠিক ভালোবাসার মানুষটি মিলে যায় সে আসলেই ভাগ্যবতী হয়। আল্লাহ ভালো রাখুন এই দম্পতিকে। সুস্থতা দান করুন।’

সোনিয়া আহমেদ লিখেছেন, “সত্যি মেয়েটা খুব ভাগ্যবতী। ভালোবাসা এমনিই হওয়া উচিত। সব পরিস্থিতিতে আগলে রাখার চেষ্টা, তার সবটাকে ঘিরেই ভালোবাসা, এটাই হলো সত্যিকারের প্রকৃত ভালোবাসা। মন থেকে ভালোবাসা কজনেরই বা ভাগ্যে থাকে, দোয়া করি বেঁচে থাকুক তাদের ভালোবাসা যুগ যুগ ধরে।”