এম কে মনির, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ মহাদেবপুর গ্রামে পাহাড় থেকে প্রবাহিত হয়ে আসা ইকোপার্ক ছড়াটি একদিকে যেমন আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের পানি চলাচলের একমাত্র পথ, অন্যদিকে স্থানীয় কৃষকদের সেচ ব্যবস্থার ভরসাও। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে যখন গ্রামগুলো টইটুম্বুর, তখন এই ইকোপার্ক ছড়া জলাবদ্ধতা থেকে গ্রামবাসীকে বাঁচিয়ে নেয়।
সম্প্রতি এ ছড়াটির সম্মুখ অংশ পুরোপুরি দখলে নিয়ে নতুন কারখানার সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এলবিয়ন। ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা তৈরির আশংকা তৈরি হয়েছে। নতুন কারখানার কাজের শুরুতে কেবল ছড়া দখলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি প্রতিষ্ঠানটি। ইকোপার্ক সংলগ্ন দক্ষিণ মহাদেবপুর গ্রামে পাহাড়ের পাদদেশের কৃষি জমিগুলোতেও কোপ বসিয়েছে তারা।
কৃষি জমির ‘টপ সয়েল’ কেটে নতুন কারখানার জমি ভরাট অব্যাহত রেখেছে এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ। ফসলি জমিতে পুকুর কাটতে হলে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি নিয়ে করার নিয়ম থাকলেও তা মানতে নারাজ এ প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যেই আইনকে উপেক্ষা করে ওই এলাকার ১০ একর তিন ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নতুন কারখানার নিম্নভূমি ভরাট করেছে ঔষধ উৎপাদনকারী চট্টগ্রামের এ প্রতিষ্ঠান। এতে আশংকাজনক হারে ওই এলাকার কৃষি জমি কমে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে।
সরেজমিনে দক্ষিণ মহাদেবপুরে নির্মাণাধীন এলবিয়নের নতুন কারখানা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নতুন কারখানার উত্তর পাশে অবস্থিত ইকোপার্ক ছড়ার সম্পূর্ণ অংশ দখলে নিয়ে সুউচ্চ আরসিসি ঢালাই সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। ছড়ার জায়গাতেই স্থাপন করা হয়েছে এলবিয়নের কারখানার ‘টয়লেট ট্যাংক’। ছড়ার অপর অংশে কারখানার বর্জ্য ফেলে দূষণ করার মাধ্যমে ছড়াটির পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। আশেপাশের কৃষি জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে বর্জ্যে দূষিত দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানি।
অন্যদিকে কারখানাটির দক্ষিণ পাশে পাহাড়ের পাদদেশে ১০ একর কৃষিজমিতে দুটি স্কেভেটর যন্ত্র দিয়ে ‘টপ সয়েল’ কাটতে দেখা গেছে। মাটি কেটে সেগুলো মিনি ড্রাম ট্রাক যোগে ফেলা হচ্ছে রেললাইন সংলগ্ন এলবিয়নের নতুন কারখানার পশ্চিম পাশের নিচু খালি জমিতে। ইতিমধ্যে ওই স্থানে ৩ হাজার ট্রাক মাটি ফেলা হয়েছে। একদিকে ছড়া দখল ও অন্যদিকে নির্বিচারে কৃষি জমির টপসয়েল কাটার ফলে জলাবদ্ধতা তৈরির আশঙ্কার পাশাপাশি সেখানকার কৃষি জমিগুলো গভীর পুকুরে পরিণত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে কমছে গ্রামের কৃষি জমি কমে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে।
স্থানীয়ের অভিযোগ, এলাকার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ছড়া দখল, ছড়ায় দূষিত বর্জ্য ফেলে দূষণ, কৃষি জমি টপসয়েল কেটে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এলবিয়ন। গত বছরের এই সময়ে একই স্থান থেকে ৫ একর কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে মাটি ভরাট করে প্রতিষ্ঠানটি। যা এখনো চলমান রয়েছে। এতে ওই এলাকার কৃষি জমির পরিমাণ যেমন কমছে তেমনি খাল দখল-দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রকৃতি-পরিবেশ ও পাহাড়ি ছড়ার জীববৈচিত্র্য। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বর্ষা মৌসুমে রহমত নগর, ইকোপার্ক, মহাদেবপুর, হাছনাবাদ, ঢালিপাড়াসহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হওয়ার।
তারা আরও জানান, এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ কয়েক মাস আগে ইকোপার্ক ছড়াটি দখলে নিয়ে নতুন কারখানার সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে। এতে খালটির সম্মুখ অংশ সম্পূর্ণ দখল হয়ে পানি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। গত বছরের ন্যায় এবারও এলাকার কৃষি জমিগুলোকে ধ্বংস করছে এলবিয়ন। যা এলাকার কৃষি, পরিবেশ ও জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এ বিষয়ে এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনার যা মন চায় তা লিখেন, আমার কিচ্ছু যায় আসে না।’ নিজেকে একটি সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য ও একটি জাতীয় পত্রিকার পাঠক ফোরামের উপদেষ্টা বলে জাহির করে প্রতিবেদকের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন তিনি। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের দিয়ে এ প্রতিবেদককে ফোন করিয়ে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টাও চালান।
এ প্রসঙ্গে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘তারা ইউএনও’র নিকট একটি আবেদন করেছিল। অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কিনা আমি জানি না। মাটি কাটার পরিমাণ বেশি জানি। আমি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেনকে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।