শরীফুল রুকন : চট্টগ্রামে বিনামূল্যে শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দিতে চালু হয় ‘শ্রমিক আইন সহায়তা সেল’। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে এই সেল থেকে পরামর্শ নিয়েছেন ৩৮৪ শ্রমিক। একই সময়ে বিচারপ্রার্থী হন ১৬০ শ্রমিক। ৩৪ মামলার সমাধান হয় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে; আদায় হয় ১০ লাখ ৭১ হাজার ১৩৯ টাকা। চাকুরীতে পুর্নবহাল হন ১৪ শ্রমিক। কিন্তু এই সেলের কার্যক্রম এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেলের অফিস সহকারী মোঃ সানাউল্লাহ এসব তথ্য দিয়েছেন।
জানা গেছে, শ্রমজীবী মানুষের আইনগত অধিকার নিশ্চিতকল্পে ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল স্থাপনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই বাংলাদেশে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) জাস্টিস সেক্টর ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিক আইন সহায়তা সেলকে কারিগরি ও জনবলগত সহায়তা প্রদান করে আসছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর ফলে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা এবং আইন কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীর বেতন-ভাতাদি বন্ধ হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে শ্রমিক আইন সহায়তা সেলে একজন করে সরকারীভাবে অফিস সহকারী নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু একজনের পক্ষে অফিস খোলা ও বন্ধ করা ছাড়া তেমন কোন কাজ করা সম্ভব নয়।
আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেলে দিন দিন বিচারপ্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদেরকে আইনগত পরামর্শ প্রদান, কাউন্সেলিং করা, অনুযোগপত্র প্রস্তুত করে দিতে হয়। এছাড়া এডিআরের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়তা করা, আইনজীবী নিয়োগ করা ও মামলার হালনাগাদ তথ্য প্রদান করতে হয়। এসব কাজ করেন আইন কর্মকর্তা। তাদের পদ শূন্য থাকলে শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে।
চট্টগ্রাম শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের অফিস সহকারী মোঃ সানাউল্লাহ বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন বন্ধ হওয়ার পর মৌখিকভাবে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। একই অবস্থা ঢাকা শ্রমিক আইন সহায়তা সেলেরও। বিনাবেতনে আমরা আর কতদিন চাকরি করবো?
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের আইন কর্মকর্তা আবুল হাসনাত কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। এ প্রসঙ্গে জানতে গিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে ইউএনডিপি ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কর্মকর্তার কাছ থেকে।
ইউএনডিপি’র জাস্টিস সেক্টর ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের আইন কর্মকর্তা আবু সাইদ সুমন বলেন, আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যার কারণে প্রকল্পের অধীনে আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ রয়েছে। তবে প্রকল্পের অধীনে আমরা কোন জনবল নিয়োগ করিনি। আমরা শুধু আইন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্পটির মাধ্যমে সহায়তা করেছি। নিয়োগ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এখন যাদেরকে সরকার নিয়েছে, তাদের চাকরির ব্যাপারে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার উপপরিচালক আবিদা সুলতানা বলেন, ইউএনডিপির প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের কর্মকর্তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। কারণ তাদেরকে নিয়োগ দিয়েছিল ইউএনডিপি। তবে আমরা চেষ্টা করছি, এই সেল চালু রাখতে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার জন্য ১৬ জন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দিতে আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এটা অনুমোদন পেতে সময় লাগবে। অনুমোদন পেলে ইউএনডিপির প্রকল্পের মাধ্যমে আসা কর্মকর্তাদের আমরা নিয়োগ দিতে পারবো। আর তারা না থাকলে নতুন নিয়োগ দিয়ে সেলের কার্যক্রম চালু রাখা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি রতন কুমার রায় বলেন, শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের মাধ্যমে দাঙ্গা-হাঙ্গামা না হয়ে আইনগতভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে। অসহায় শ্রমিকরা বিনামূল্যে বিচার পাচ্ছে। এতে করে মালিক-শ্রমিক উভয়ই লাভবান হচ্ছে। এমন চমৎকার উদ্যোগ যাতে বিঘ্নিত না হয়- সেদিকে সবার সতর্ক থাকা উচিত। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সেলের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হোক।