শরীফুল রুকন : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের লাশঘরে মৃত এক নারী ও শিশুর সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ করার মামলায় গ্রেপ্তার মো. সেলিম ২০১৭ সালে চমেক এলাকায় গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন; তবে ‘আইনগত সাক্ষ্যের অভাবে’ ওই মামলা থেকে খালাস পান তিনি।
অপমৃত্যু হওয়া এক নারী ও এক কিশোরীর মরদেহের সঙ্গে শারীরিক সংসর্গের অভিযোগে গত সোমবার চমেক হাসপাতালের লাশঘরের ‘পাহারাদার’ মো. সেলিমকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট চমেক মেডিকেল মর্গের পাশের পরিত্যক্ত জায়গায় ১৮ বছর বয়সী এক নারী গণধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনার দুইদিন পর ১৭ আগস্ট ভুক্তভোগী পাঁচলাইশ থানায় সেলিম ও সেকান্দার এবং সাজু দাশ নামে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চকবাজারের বাসা থেকে স্বামী তাকে বের করে দিলে আসামিদের কাছ থেকে সহযোগিতা চান। এক পর্যায়ে প্রধান আসামি সাজু দাশ তাকে কেন্টিনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মর্গের পাশের পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসে সেকান্দার ও সেলিম। প্রথমে সেলিম ও সেকান্দার এবং পরে সাজু দাশ তাকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করেন।
২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর এজহারভুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পরবর্তীতে আদালত পুলিশের দেওয়া চার্জশিট গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এরপর ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর গণধর্ষণের ওই ঘটনায় সাজু দাশকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা। ওই মামলায় সেকান্দার ও সেলিম নামের অপর দুজনকে খালাস দেয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় সাজু দাশ ও সেলিম আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
খালাস পাওয়া ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনই চমেক হাসপাতালের মর্গসহ নানা কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন পিপি খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, ধর্ষণের অপরাধের সাথে জড়িত প্রমাণিত হওয়ার পরও সেকান্দার ও সেলিম নামের অপর দুজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। আইনগত সাক্ষ্যের অভাবেই তাদেরকে এ খালাস দেন আদালত।
খালাস পাওয়ার পর আবার বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেন সেলিম। এবার লাশের সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ করে বসেন তিনি।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে ৩২ বছর বয়সী এক নারী ও ১২ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুর অপমৃত্যু হয় এক বছর আগে। ময়নাতদন্তের আগে লাশগুলো ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের লাশঘরে। তারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কি না, তা পরীক্ষা করতে প্রতিটি মরদেহের ‘হাই ভেজাইনাল সোয়াব (এইচভিএস)’ সংগ্রহ করে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। কিন্তু পাওয়া গেল একই পুরুষের শুক্রাণুর উপস্থিতি।
সিআইডি বলছে, মরদেহগুলো লাশকাটা ঘরে আসার পর সেগুলোর সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ করেছিলেন মো. সেলিম। গত সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এই ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় সিআইডির পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে।
জরুরি বিভাগের পাশে পুলিশ বক্স–সংলগ্ন লাশঘরটি। ওখানে অপঘাতে মৃতদের প্রথমে নেওয়া হতো। সেখানে সুরতহাল করার পর, তা মর্গে পাঠানো হতো। সেলিম ছিলেন ওই লাশঘরের অঘোষিত পাহারাদার।
হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র জানায়, সেলিম মূলত লাশকাটা ঘর পাহারা দিতেন। তিনি গাড়ি থেকে লাশ ওঠানো-নামানোর কাজ করতেন। হাসপাতাল থেকে কোনো বেতন না পেলেও মৃত ব্যক্তিদের স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিতেন।
এদিকে আজ বুধবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশে পুলিশ বক্স–সংলগ্ন লাশঘরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে জরুরি বিভাগের ভেতরের লাশঘরে মরদেহ রাখা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, এখন থেকে পুলিশ বক্স–সংলগ্ন লাশঘরটি বন্ধ থাকবে। নতুন জরুরি বিভাগের বারান্দায় অপঘাতে মৃতদের মরদেহ রাখা হবে। সেখান থেকে পুলিশকে বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর সুরতহাল করে লাশ মর্গে নিয়ে যাবে পুলিশ।