মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

খাল দখলে কেএসআরএম, ৫০ ফুটের খাল এখন ৩ ফুট নালা

প্রকাশিতঃ ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২ | ৭:২০ অপরাহ্ন


এম কে মনির, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডের ‘আম্বিয়াঢালা খাল’ দখল করার অভিযোগ উঠেছে ইস্পাত নির্মাণ শিল্প প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম’র বিরুদ্ধে। এতে এক সময়ের ৫০ ফুট চওড়া খালটি তিন ফুটের সরু নালায় পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বাড়বকুণ্ডের আম্বিয়াঢালা পাহাড় থেকে নেমে নতুন পাড়া গ্রাম, সেবা ফিলিং স্টেশনের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়েছে একটি খাল; খালটি স্থানীয়দের কাছে ‘আম্বিয়াঢালা খাল’ নামে পরিচিত।

পাহাড় থেকে নেমে আসা এ খালটি বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের নতুন পাড়া, হাছি নগর, বেড়া পাড়া, ইউসুফ আলী শাহ মাজার, বড় দীঘি সংলগ্ন এলাকার পানি চলাচলের একমাত্র পথ। বর্ষাকালে খালটি দিয়ে পাহাড়ি ঢল ও গ্রামগুলোতে জমে থাকা পানি প্রবাহিত হয়ে সাগরে গিয়ে পড়ে। এতে বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে গ্রামবাসীর রেহাই মেলে। এছাড়াও খালের আশেপাশের কৃষি জমিগুলোর সেচও নির্ভর করে এ খালের উপর।

কিন্তু গ্রামের পানি চলাচলের প্রাণ শতবর্ষী এ খালটির সেবা ফিলিং স্টেশনের দক্ষিণ পাশের অংশটি সম্পূর্ণ দখল করে ফেলেছে শিল্প গ্রুপ কেএসআরএম। ইতিমধ্যেই ওই খালের ৩০০ মিটারজুড়ে মাটি ফেলে ভরাট করেছে তারা। এতে ৫০ ফুটের খালটি সংকুচিত হয়ে ৩ ফুটের সরু নালায় রূপ নিয়েছে।

শুধু তাই নয়, খালের উপর নির্মিত মহাসড়কের সংযোগ সেতুটির মুখও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শতাধিক গাছপালা কেটে এসব ঢালাপালা খালে ফেলে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, মূলত খাল দখল নিশ্চিত করতেই মাটি ও গাছের ঢালপালা খালে ফেলছে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ। খাল দখল করে এমন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলেও এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। বর্ষাকালে তাদের ডুবে মরা ছাড়া উপায় নেই।

এলাকাবাসী বলছেন, শত বছরের এ খালটি পানি চলাচলের একমাত্র পথ। বর্ষাকালে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানি এ খাল দিয়েই সাগরে পড়ে। কিন্তু খালটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কেএসআরএম।

শুধু খাল নয়, কেএসআরএম যখন বাড়বকুণ্ডের আনোয়ারা এলাকায় গেড়ে বসেছিল তখন থেকেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে নানা কাজে লিপ্ত ছিল বলে অভিযোগ। এর আগে এলাকার কবরস্থান ও রাস্তা দখল করে ফেলার অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে; এ নিয়ে তৈরি হওয়া বিরোধ এখনও মিমাংসা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ‘খাল দখল করলে কার কী? কষ্ট করলে জনগণ করবে। চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। সবকিছুতেই টাকা আর টাকা।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেএসআরএম’র ভূমি কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে কোন খাল দখল করা হয়নি। খালে মাটি পড়েছিল সেগুলো সরিয়ে দিয়েছি। আপনি একটু গিয়ে দেখে আসেন।’

একপর্যায়ে কামাল উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে, তাই না? পানি চলাচলের পথ হয়েছে তো কী হয়েছে? এটাকে কী করবো এখন? এখানে ইউএনও, চেয়ারম্যান, মেম্বার সবাই আছে। তারা গিয়ে দেখে এসেছে। তারা জানে।’ এসময় খালের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ আগে কত ছিল তা জানা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি এ সম্পর্কে ধারণা নেই বলে জানান।

এরপর শহীদুল ইসলাম নামে একজন সাবেক আনসার কমান্ডার ও কেএসআরএম’র সিকিউরিটি ইনচার্জ পরিচয়ে এ প্রতিবেদককে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসার অনুরোধ করেন। শহীদুল বলেন, ‘আপনি ঘটনাস্থলে আসেন। আমি আপনাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলব এবং দেখাব।’

গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব সিকিউরিটি ইনচার্জের কিনা জানতে চাইলে শহীদুল বলেন, ‘অবশ্যই আমার। আপনি আমার ম্যানেজারকে কল করেছেন। তিনিই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার প্রতিষ্ঠান এটি। কাজেই ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমারও।’

জানতে চাইলে কেএসআরএম’র সিইও মেহেরুল করিম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয় সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। এবং এটি আমার দায়িত্বে নেই।’

এ প্রসঙ্গে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘খাল দখল করার ঘটনাটি আমি অবগত ছিলাম না। কেউ আমাকে অভিযোগও করেনি। এভাবে পানি চলাচলের খাল দখল করার কোন সুযোগ নেই। জনদুর্ভোগ তৈরি করতে দেয়া যাবে না। আমি গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম একুশে পত্রিকাকে তার দপ্তরে বলেন, ‘খালটিতে মাটি সরিয়ে দেয়ার কথা। আমি ব্যবস্থা নিব।’

জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। খালে মাটি পড়েছিল। সরিয়ে নেয়ার কথা ছিল।’