জোবায়েদ ইবনে শাহাদত : দেশের স্থানীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে সংসদ সদস্য বা এমপিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁদেরকে প্রভুত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দেখাতে দেখা যায়। স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী হিসেবে আবির্ভূত হতে অনেকে এমপির সুনজরে থাকারও চেষ্টা করেন।
যদিও গতানুগতিক এই ধারা থেকে ভিন্ন চট্টগ্রাম-৪ সংসদীয় আসনের রাজনৈতিক হিসেবনিকেশ। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই আসনের এমপির চেয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রভাবই বেশি। বিষয়টি আশ্চর্যজনক মনে হলেও এটি সত্য এবং এর পেছনে রয়েছে সুস্পষ্ট কিছু কারণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. দিদারুল আলমের রাজনীতিতে আবির্ভাবই হয়েছিল নৌকার মনোনয়ন পেয়ে। ব্যবসায়ী পরিবার থেকে উঠে আসা দিদারুলের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভিত তেমন একটা শক্তপোক্ত নয়। তবুও নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার বদৌলতে প্রথমবার এমপি হওয়ার চেষ্টায় সফল হন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় দফায়ও একই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
যদিও দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে ‘নব্য′ আওয়ামী লীগার হিসেবে অভিহিত করছেন। তাদের দাবি, এমপি দিদার রাজনীতিতে আনকোরা, অপরিপক্ষ। সীতাকুণ্ডের রাজনীতিতে সাংসদের শক্ত অবস্থান না থাকার প্রধান কারণ হিসেবে অতীত পটভূমির পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততা না থাকার বিষয়টি সামনে আসছে।
যদিও এমপি হওয়ার সুবাদে বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বলতে এমপি দিদারের প্রাপ্তি এতটুকুই। তবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি চেষ্টা করেছেন নিজের আলাদা অনুসারী তৈরি করার। ধীরে ধীরে তার কিছু ভক্ত-সমর্থকও তৈরি হয়েছে। তবে তা উল্লেখ করার মতো নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তাদের মতে, দিদারুল আলম সাংসদ হলেও সীতাকুণ্ডে উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুনের দাপট-প্রভাব ও জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, অনুসারী ও সমর্থকদের দিক দিয়ে মামুনের পাল্লাই সবসময় ভারি। এককথায় সীতাকুণ্ড উপজেলায় আওয়ামী লীগের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন মামুন। তাঁর এই প্রভাব-দাপটের পেছনের বড় কারণ রাজনীতিতে বাবা এবিএম আবুল কাশেম মাস্টারের অবদান।
প্রয়াত এবিএম আবুল কাশেম মাস্টার একসময় স্কুলশিক্ষক ছিলেন। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দু-দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এ নেতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পীকার ছিলেন। আমৃত্যু পালন করে গেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব। ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির কারণে তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তবুও সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২০১৪ সালে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে গেলেন ব্যবসায়ী দিদারুল আলম। ছিটকে পড়েন প্রবীণ নেতা ও রানিং এমপি এবিএম আবুল কাশেম মাস্টার; পরবর্তীতে ২৪ নভেম্বর ২০১৫ সালে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান।
আবুল কাশেম মাস্টার মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়ার পেছনে নিজেরও কিছুটা দায় আছে বলে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছিলেন তখন। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলবিহীন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের স্থায়ীত্ব কয়েকমাসের বেশি হবে না। সেই সংসদ ভেঙে দিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণে দ্রুত ফের নির্বাচন হবে, সারাদেশের মানুষের মতো বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতাও মনে করেছিলেন সেসময়। জানা যায়, আবুল কাশেম মাস্টারও তাই ভেবে স্বল্প সময়ের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। আর সেই সুযোগটি নবাগত দিদার কাজে লাগান বন্দর আসনের এমপি আবদুল লতিফের মধ্যস্থতায় নৌকা বাগিয়ে নিয়ে। অবশ্য দিদার একসময় একুশে পত্রিকাকে বলেছিলেন, ব্যবসায়িক কাজে তিনি বিদেশ ছিলেন। বিদেশ থেকে ডেকে এনে তার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা এস এম আল মামুনের ধ্যান-জ্ঞান জুড়ে রাজনীতি। রাজনীতিতে মগ্ন থাকতেন ছোটবেলা থেকেই। বাবা মারা যাওয়ার পর তারই অনুসারীদের নিয়ে সীতাকুণ্ডে আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরেছেন তিনি। অনেকটা অভিভাবকহীন অবস্থায় নিজের যোগ্যতায় পরপর দুবার সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগ সভাপতি হয়েছেন এস এম আল মামুন।
বর্তমানে সীতাকুণ্ড উপজেলা ও স্থানীয় তৃণমূল আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশের পাশাপাশি যুবলীগও নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন এস এম আল মামুন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে নেতৃস্থানীয় পর্যায়- সবক্ষেত্রেই মামুনের প্রভাব, প্রাধান্য। এক কথায় আল মামুনকে সীতাকুণ্ডের রাজনীতির বরপুত্রও বলছে কেউ কেউ।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মতে, বাবা প্রয়াত হওয়ার পর যোগ্যতার কারণে মামুনেরই হওয়ার কথা ছিল সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য। এছাড়া সীতাকুণ্ড আবুল কাশেম মাস্টারের সাজানো মাঠ, এই মাঠে তারই যোগ্য সন্তান খেলবেন, এমপি হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে মাঠে হঠাৎই উড়ে এসে জুড়ে বসলেন ব্যবসায়ী দিদার, যিনি আগে কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি।
তৃণমূল পর্যায়ে আল মামুনের জনপ্রিয়তা ও জনসম্পৃক্ততার বিষয়ে জানা গেছে সীতাকুণ্ড উপজেলার বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে। পাশাপাশি এমপি হয়েও মামুনের প্রভাবের কাছে দিদারুল আলম কতটা অনুজ্জ্বল সেটাও জানিয়েছেন তারা।
বাড়বকুণ্ড ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘সাংসদ দিদার সাহেব ২০১৪ সালের আগে কখনোই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এমপি পদে মনোনয়ন পেয়েই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার অভিষেক। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বটে, তবে সেখানে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণও তেমন একটা ছিল না। জনসম্পৃক্ততা না থাকায় সীতাকুণ্ডে সাধারণ মানুষের কাছেও তার জনপ্রিয়তা নেই। অন্যদিকে, নবাগত রাজনীতিক হওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছেও তার তেমন একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই।’
‘সে হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান আল মামুন একেবারেই ভিন্ন। পারিবারিক পরিচিতি এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে সীতাকুণ্ডের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ চমৎকার। বাবার মতই তাঁর রয়েছে নেতৃত্বের গুণাবলি। নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন। তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাও দুরদর্শী। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে এমপি হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হলেও এমপির চেয়ে বেশি জনপ্রিয় তিনি। তাঁর প্রভাবের কাছে এমপি দিদার অনেকটা অসহায় বলা চলে।’ বলেন ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী।
একই কথা বলেছেন সৈয়দপুর ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম তাজুল ইসলাম নিজামী। তিনি বলেন, ‘মামুন সাহেবের জনপ্রিয়তার শুরুটাই তাঁর বাবা এবিএম আবুল কাশেম মাস্টারের মাধ্যমে। রাজনৈতিক এ ব্যক্তিত্ব ছিলেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রাণ, মধ্যমণি। বাবার মৃত্যুর পর সীতাকুণ্ডে আওয়ামী রাজনীতিতে নিজের অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন পুত্র মামুন। যা অতটা সহজ ছিল না। অন্যদিকে সাংসদ দিদার একসময় বিএনপি করতেন। আওয়ামী রাজনীতিতে তার কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছেন এটাই তার সম্বল।’
শুধু তৃণমূলেই নয়, সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীদের ভাষ্যও অনেকটা একই। দিদারুল আলম এমপি হলেও মামুনই সীতাকুণ্ডের বরপুত্র। তাদের মতে, রাজনৈতিক চর্চা, অতীত ইতিহাস এবং জনসম্পৃক্ততার দিক দিয়ে আল মামুনের ধারে কাছেও নেই এমপি দিদার।
সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য আ ম ম দিলসাদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এমপি মহোদয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সত্য। মানুষের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা তেমন একটা ভালো নয়। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এজন্যই তার জনপ্রিয়তা তেমন একটা নেই। কিন্তু ব্যবসা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের সম্পৃক্ততা ও জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে চলেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। আর এমপি থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের জনপ্রিয়তা ও প্রভাব বেশি হওয়াটা সীতাকুণ্ডের রাজনীতির জন্য সুখকর বলে আমি মনে করি।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, ‘মামুন যেমন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ তেমনি এমপি দিদারও আগাগোড়া খাঁটি ব্যবসায়ী। তিনি কোনোভাবেই রাজনীতিবিদ নন। আগে কখনও আওয়ামী রাজনীতির সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না। ব্যবসাই তার মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। এখন এমপি হয়েছেন বলে আশেপাশে কিছু কর্মী-সমর্থক দেখা যায়, সামনের বার যদি মনোনয়ন না পান তারাও পাশে থাকবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীতাকুণ্ডের একজন যুবলীগ নেতা বলেন, ‘আল মামুন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। তার জন্মও রাজনৈতিক পরিবারে। রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। নিজের দক্ষতা দিয়ে বাবার শূন্যস্থানে নিজের যোগ্যতাও প্রমাণ করেছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে বলা ভলে এখন সীতাকুণ্ড আওয়ামী রাজনীতির অভিভাবক তিনি। তাঁর জনসম্পৃক্ততা, জনপ্রিয়তা, প্রভাব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান। যদিও তার হওয়ার কথা ছিল এই আসনের সংসদ সদস্য। কিন্তু রাতারাতি মনোনয়ন ভাগিয়ে এনে এমপি হয়েছেন দিদারুল আলম।’
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকের ভূঁইয়া এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। অবশ্য এর কারণও আছে। স্থানীয়দের মতে, বাকের ভূঁইয়া ব্যালেন্স করে রাজনীতি করছেন। কখনো উপজেলা চেয়ারম্যান আবার কখনও এমপি’র সঙ্গে সখ্যতা বজার রেখে রাজনীতি করেন তিনি। গত নির্বাচনে ওই আসন থেকে আল মামুনের পাশাপাশি নৌকার মনোনয়ন প্রার্থী হয়েছিলেন বাকের ভূঁইয়া। সে সময় বাকেরই নৌকার টিকেট পেয়েছেন এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিদারুল আলমই পেয়েছিলেন সেই নৌকার মনোনয়ন।
যদিও একজন সাংসদ হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার সুনাম আছে এমপি দিদারের। একারণে সাধারণ মানুষের কাছে কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এমপি দিদার। সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজনীতিতে তাঁর হাতখোলা মনোভাব, টাকা ছিটিয়ে মানুষ ভেড়ানোর একটা বড় প্রবণতা ছিল শুরু থেকে। ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাদে স্থানীয় তরুণ ও যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগও করে দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক অপরিপক্কতা, সীমিত জনসম্পৃক্ততা ছাড়া এমপি দিদারের তেমন একটা দুর্নামও শোনা যায় না। অনেকেই বলে থাকেন, দিদার রাজনীতি বোঝেন না, বোঝেন না রাজনীতির মারপ্যাঁচ। তবে ব্যবসা ভালোই বোঝেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের রাজনীতিতে আমার প্রভাব নয়, আমি বলবো এটি জনসম্পৃক্ততার জায়গা থেকে তৈরি হওয়া জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ। আমার পিতা মরহুম এবিএম আবুল কাশেম মাস্টার কেবল সাবেক সংসদ সদস্য নন, এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। তাঁর হাত ধরেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। স্কুল জীবনে ছাত্রলীগ, এরপর যুবলীগ আর বর্তমানে আওয়ামী লীগ- দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন আমার। সেই সুবাদে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি, জনগণের কাছে যেতে পেরেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন সেটাই আমার জন্য শিরোধার্য। তিনি যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাঁকেই নৌকা দিয়েছেন। যখন তিনি আমাকে যোগ্য মনে করবেন তখন আমাকেও দেবেন- এটা আমার বিশ্বাস। তবে আমাকেই দিতে হবে- এমনটা আমি মনে করি না। আমাকে মনোনয়ন না দেয়া হয়তো আমার জন্য ভালো ছিল। আল্লাহ যেটা মঙ্গল মনে করছেন সেটা করেছেন। তবে কে কতটা যোগ্য সেটা জনগণই ভালো বলতে পারবেন, তারাই আমাদের বিচারক।’
এমপির সঙ্গে মতবিরোধ বা আড়ালে দ্বন্দ্ব রয়েছে- এমন জনশ্রুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এস এম আল মামুন বলেন, ‘আমার সঙ্গে এমপির কোনও মতবিরোধ বা দ্বন্দ্ব নেই। অনেকে অনেক কিছু বলেন বা মনে করেন। আমার সঙ্গে এমপির ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো। আমাদের মাঝে কোনও বিরোধ বা চোখ রাঙানি সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না।’
সীতাকুণ্ডের রাজনৈতিক সমীকরণে এমপির চেয়ে এগিয়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতা সব জায়গায় থাকে। প্রতিযোগিতার মধ্যে কেউ কখনো এগিয়ে যায়। কেউ পিছিয়ে যায়। প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে যে কোনও কাজ করলে কাজের গতি বাড়ে। সবকিছু ভালো হয়। দিনশেষে আমার কাজের হিসাব কী, কী পেলাম, জনগণকে কী দিতে পারলাম, জনগণের কাছে কতটুকু যেতে পারলাম- সেটাই প্রতিযোগিতার ফলাফল।’
এমপি দিদারুল আলমের দলীয় পদ-পদবি প্রসঙ্গে এস এম আল মামুন বলেন, ‘তাঁর পূর্বের বিষয়ে আমি জানি না। কিন্তু বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য। এছাড়াও উনাকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য করা হয়েছে। এটা তো সাংসদ বলে দিতেই হয়।’
অন্যদিকে সংসদ সদস্য দিদারুল আলম নিজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকেই মনে করেন নিজের শক্তি। তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্য হওয়ার পর এ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমি আমার আঙ্গিকে উন্নয়ন করছি। প্রতিবার আমাকে নৌকা দিয়ে এমপি বানাবেন তা নয়। দলের জন্য, দলের ভাবমূর্তি ধরে রাখা, মানুষের জন্য কাজ করাই আমার কাজ।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি চোর-ডাকাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রাখি না। চাঁদাবাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রাখি না। দাঙ্গা-মারামারি চাই না। আপনি যদি চোরের সঙ্গে কথা বলেন, তাহলে চোরের গল্প শুনবেন। ডাকাতের সঙ্গে কথা বললে ডাকাতের গল্প শুনবেন। কে কোন দল করে সেটা দেখার বিষয় নয়। মানুষের জন্য কাজ করাই আমার লক্ষ্য। নৌকার জন্য ভোট আদায় করাই আমার কাজ। নৌকাকে আমি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি।’
সীতাকুণ্ডের গ্রুপিং রাজনীতির বিষয়ে এমপি দিদারুল আলম বলেন, ‘যে ইউপি চেয়ারম্যানগুলো এখন আমার সাথে নেই, তারা একসময় আমার সাথে ছিল। দুই বছর হয়ে গেলেও এখনো উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি হয়নি। দলীয় কমিটি না হওয়া পর্যন্ত এখনো কে কার সাথে আছে সেটা বলা মুশকিল। ২০১৯ সালে দলীয় কাউন্সিলে মামুন সাহেব গিয়েছেন সভাপতি হওয়ার জন্য। অথচ সেক্রেটারি নিয়ে চলে আসলেন।’
রাজনৈতিক পদ-পদবী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমানে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আমি প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি করি। তিনি যা বানাবেন, যেদিকে বানাবেন, সেটাই হব। পদ-পদবী ছাড়া তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরা একজন বড় নেতার কাছে যেতে পারেন না। অথচ তারা আমার কাছে আসছেন।’