ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ঘিরে শঙ্কা সংশয়!

চট্টগ্রাম : প্রথম ময়নাতদন্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রতিবেদন দিয়েছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। কিন্তু দিয়াজের পরিবার বলছে এটি পরিকল্পিত হত্যা। তাই হত্যার অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করে তারা। একই সাথে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পুনঃ ময়নাতদন্তের দাবি জানায় দিয়াজের পরিবার। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুনঃ ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।

মৃত্যুর ২২ দিনের মাথায় কবর থেকে দিয়াজের লাশ তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে। ময়না তদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগ প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় দিয়াজের শরীরের আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানায়। এরপরই নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট সবাই। দিয়াজের পরিবার আশায় বুক বাঁধে এবার কোনো একটা গতি হবে, বিচার হবে দিয়াজ ‘হত্যার’।

কিন্তু দ্বিতীয় ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এক সপ্তাহের মধ্যে দেয়ার কথা বলেও পাঁচ মাসেও সেই প্রতিবেদন দেয়া হয়নি।

ফলে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় করা ‘হত্যা’ মামলার তদন্ত যেমন থেমে আছে, তেমন অজানা আশঙ্কা ভর করেছে দিয়াজের পরিবারে। তাদের অভিযোগ, অদৃশ্য কারণে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, আঘাতের মাধ্যমে দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে এটা অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু তা প্রকাশ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে ফরেনসিক বিভাগ। আর এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝেই পার হয়ে গেছে পাঁচ মাস।

সূত্র মতে, হত্যাকাণ্ড মর্মে প্রতিবেদন দিলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাছাড়া প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করে প্রতিবেদন দিলে অদৃশ্য চাপের মুখে পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে একবার আঘাতজনিত কারণে মৃত্যুর কথা জানানোর পর সেই একই জায়গা থেকে আত্মহত্যার কথা বললে প্রশ্নের মুখে পড়বে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগও।

তাই সবকূল রক্ষা করেই একটি ময়না তদন্ত প্রতিবেদনই শেষ পর্যন্ত জমা দেয়ার চিন্তা করছে ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগ। যে প্রতিবেদনে মামলা চালানো যাবে, ভাবমূর্তিও কিছুটা রক্ষা হবে প্রথম ময়নাতদন্তকারী চমেক ফরেনসিক বিভাগের। এমনটাই দাবি করছে সূত্রটি।

দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন কখন দেয়া হচ্ছে, কেমন প্রতিবেদন আসছে জানেন কিনা প্রশ্নে দিয়াজের বড় বোন অ্যাডভোকেট জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা একুশে পত্রিকাকে বলেন, কখন দেবে, কেমন রিপোর্ট দেবে সেসবের কিছুই জানি না। আমরা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের সদস্যদের দিকে তাকিয়ে আছি। একবুক আশা নিয়ে অপেক্ষায় আছি তাঁরা সঠিক রিপোর্ট দেবেন, আর আমরা প্রাণের স্বজন হত্যার বিচার পাবো।’

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজে দিয়াজের মরদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে গঠিত তিনজনের প্রতিনিধিদল পুনঃ ময়নাতদন্ত করে।

এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর দিয়াজের মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। দুই দিন পর ২৩ নভেম্বর পুলিশ জানায়, দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে এমন আলামত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেলেনি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে তখন মত দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকেরা। তখন এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবারসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশ। তাদের দাবি, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনের সঙ্গে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের কোনো মিল নেই। এরপর আদালতের নির্দেশে দিয়াজের লাশ কবর থেকে তুলে ঢাকায় দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, দিয়াজের রিপোর্ট নিয়ে আরেকটু কাজ বাকি আছে। আমাদের মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা নিয়ে আমরা ব্যস্ত। তাই রিপোর্টটা দেয়া যায়নি। ভাইভা পরীক্ষা শেষ হলে রিপোর্ট দিয়ে দেব।

রিপোর্ট দিতে কতদিন লাগতে পারে প্রশ্নে ডা. সোহেল মাহমুদ জবাব দেন, মাসখানেক লাগতে পারে।

‘রিপোর্ট দেওয়ার আগে এ বিষয়ে বেশি কথা বলা ঠিক হবে না।’ যোগ করেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ সোহেল মাহমুদ।

গত বছরের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।