শান্তনু চৌধুরী : করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়াচ্ছে দ্রুত। তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। যদিও প্রতিদিন মানুষকেও সচেতনতা করা থেমে নেই। কিন্তু তবুও মানুষের মাঝে কোনো হেলদুল নেই। মাস্ক পরা যেন ছেড়েই দিয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। এই অবস্থায় বাড়ছে আতংক। কারণ কঠোর বিধিনিষেধ দেয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের। কর্মসংস্থান হারান লাখ লাখ মানুষ।
প্রথমে ভাবা হয়েছিল, করোনার ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ খুব বেশি গুরুতর হবে না। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহামারির শেষ পর্যায়ে এসে আরও বিপজ্জনক ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামকরোগবিষয়ক বিশেষজ্ঞ স্টুয়ার্ট ক্যাম্পবেল রে বলেন, অনেকের ধারণা, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে এমনটা মনে করার খুব বেশি কারণ নেই। আমার মনে হয় না সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটি কম প্রাণঘাতী হবে এমনটা ভাবার খুব বেশি সুযোগ আছে।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের সায়েন্টিফিক অ্যাডাইজরি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সিস বলছে, গরমের শুরুতে ওমিক্রন ধরনের নতুন সংক্রমণ হতে পারে। কারণ, এ সময় মানুষ সামাজিক কর্মকাণ্ড শুরু করবে। এ ছাড়া এখন ওমিক্রনে সংক্রমিত হয়ে যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, তা আবার ওই সময় কমে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুসারে, ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণের পর কী হতে পারে এ রকম পাঁচটি আভাস দেওয়া হয়েছে, ১. বিশেষজ্ঞরা বলছেন ওমিক্রন ধরনে একাধিকবার সংক্রমণ হতে পারে। ডেলটা, করোনার অন্য ধরন, এমনকি ওমিক্রনেও একাধিকবার সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আছে। ২. প্রাথমিকভাবে ওমিক্রন কম প্রাণঘাতী বলে মনে হলেও পরবর্তী সময় এটি রূপ বদলাতে পারে। করোনাভাইরাস সর্দিজ্বরের মতো মৃদু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি কম প্রাণঘাতী থাকবে না। ৩. ওমিক্রনে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে হালকা উপসর্গ দেখা যায়। অন্যদের মধ্যে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে পারে। ৪. করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরন পশুপাখির মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। পশুপাখি থেকে এটি আবার নতুন রূপে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। ৫.অমিক্রন ডেলটার সঙ্গে মিলে নতুন ধরন তৈরি করতে পারে। নতুন সেই ধরনের মধ্যে ডেলটা ও অমিক্রন দুটোরই বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে।
করোনা শুরুর পর থেকেই এটি নিয়ে যেমন গবেষণার শেষ নেই তেমনি নানা মজার মজার ঘটনা ও আবিস্কার হয়ে আসছে। আফিম, গাঁজায় থাকা এমন দু’টি রাসায়নিক যৌগের হদিশ মিলল যারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত রুখে দিতে পারে।
দেখা গেল, ওই দু’টি যৌগ ভাইরাসের বাইরের স্তরে থাকা শুঁড়ের মতো দেখতে স্পাইক প্রোটিনের বিভিন্ন অংশকে দ্রুত বেঁধে ফেলতে পারে। ফলে, মানবশরীরে ঢুকে ভাইরাস আর কোষে নোঙর ফেলতে পারে না। সংক্রমণও হয় না।
আমেরিকার ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জার্নাল অব ন্যাচারাল প্রোডাক্টস’-এ।
করোনা মহামারিতে যখন বিশ্বের ১৪ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন, ঠিক তখনই এশিয়ায় ২০ জন নতুন ধনকুবের তৈরি হয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অক্সফামের প্রতিবেদনে ওই ২০ জনকে ‘মহামারি কোটিপতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান–এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে ২০ জনের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করেনি অক্সফাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত বছরের মার্চ পর্যন্ত কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ফার্মাসিউটিক্যালস, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পরিসেবাগুলো থেকে অর্জিত মুনাফা এই ২০ জনকে নতুন করে কোটিপতি বানিয়েছে। যখন লকডাউনসহ নানা রকমের বিধিনিষেধে অর্থনৈতিক স্থবিরতায় আরও কয়েক কোটি মানুষের জীবিকা ধ্বংস করেছে।’ অক্সফামের এশিয়া প্রধান মোস্তফা তালপুর বলেন, ‘এশিয়ার ধনী এবং সুবিধাভোগীরা তাদের ভাগ্য গড়ে তোলেন এবং স্বাস্থ্য রক্ষা করেন। একই সময়ে এ অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ, নারী, স্বল্প-দক্ষ কর্মী, অভিবাসী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এদিকে করোনা মহামারীতে মানুষের মাঝে যে একেবারে পরিবর্তন আসেনি তা কিন্তু নয়। ভারতে ২০২২ সালে প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে চারটিই, অর্থাৎ ৮০ শতাংশ পরিবার চার চাকার গাড়িসহ দামি কোনো সম্পদের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করবে না। আর ৭৮ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, এ বছরে তাদের জুয়েলারি বা গয়না কেনার কোনো পরিকল্পনা নেই। লোকালসার্কেলস নামের একটি কমিউনিটিভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্কের পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটি ৪৭ হাজার পরিবারের ওপর জরিপটি পরিচালনা করে। এতে মাত্র ১৫ শতাংশ বা চার কোটি পরিবার জানিয়েছে যে, চলতি বছরে তাদের সম্পত্তি, গাড়ি ও গয়না কেনার পরিকল্পনা আছে। বাকি পাঁচ শতাংশ পরিবার জানায়, তারা এখনো সম্পত্তি, গাড়ি ও গয়না কেনার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। যা-ই হোক, বাজারে আবার চাহিদা বাড়ছে বলে মনে করেন লোকালসার্কেলসের প্রতিষ্ঠাতা শচীন তাপারিয়া। তিনি বলেন, প্রতি সাত পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার আবাসন সম্পদ কেনার পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছে। আর প্রতি ছয় পরিবারের মধ্যে একটি জানিয়েছে তারা চার চাকার গাড়ি কিনতে আগ্রহী।…
ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট বা ধরনের কারণে করোনার যে তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তা অর্থনীতিতে ক্ষণস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। তবে করোনা হোক আর যাই হোক বিয়ে কিন্তু থেমে নেই। তেমনি বিয়েতেও দেখা যাচ্ছে আজব আজব কারবার। বিয়ের জন্য পাত্রপাত্রী খুঁজতে পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রচলন বহু আগে থেকেই চলে আসছে। কিন্তু বিয়ের পাত্রী খুঁজতে বড় বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দেওয়ার নজির বোধহয় বেশি নেই। সেই অনন্য নজিরই স্থাপন করেছেন এক যুবক। দেখাশোনা করে বিয়ে বা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে তার দারুণ ভয়। তাই উপযুক্ত স্ত্রী খুঁজে পেতে রীতিমতো বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম জুড়ে বেশ কয়েকটি বিলবোর্ডে চোখে পড়বে হাস্যোজ্জ্বল এক তরুণের বিজ্ঞাপন। মূলত স্ত্রীকে খুঁজে পেতেই এই অভিনব পন্থা খুঁজে বের করেছেন মোহাম্মদ মালিক ২৯ বছর বয়সী ওই যুবক।
২০ ফুট বিলবোর্ডে দেওয়া বিজ্ঞাপনে নিজের হাসিমুখে তোলা ছবির পাশে মালিক লিখেছেন, আমাকে আরেঞ্জ ম্যারেজের হাত থেকে রক্ষা করুন। মালিক পেশার একজন ইনোভেশন কনসালট্যান্ট এবং উদ্যোক্তা। লন্ডনের বাসিন্দা মালিক বার্মিংহামকেই তার সেকেন্ড হোম মনে করেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বার্মিংহাম লাইভকে তিনি বলেন, বিশেষ কাউকে খুঁজে পাওয়ার প্রচলিত পদ্ধতিতে কাজ না হওয়ায় এই অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছেন তিনি। মুসলিম এই যুবক জানান, তার স্ত্রীর বয়স হতে হবে ২০ এর কোঠায়। এছাড়া তাকে ধার্মিক হতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শান্তনু চৌধুরী: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক