গাঁজা ও রাস্কো


শেখ মোহাম্মদ জুলফিকার বিপুল : গাঁজা নিয়ে পরিচিত একজন আমাকে একটা গান পাঠায়। গানের কথাগুলো ভয়াবহ, প্রথম লাইনটা হচ্ছে- ‘গাঁজার নৌকা পাহাড়তলি যায় ও মিরা ভাই…’

গানটাতে খুবই বিখ্যাত এক সুর ব্যবহার করা হয়েছে। এই গান শুনতে শুনতে মানব চরিত্রের একটা মজার দিক আমি ধরতে পারি- যে বন্ধু আপনাকে কখনোই কাচ্চি বিরিয়ানি বা মোঘলাই খাওয়ার সময় একবারও চাপাচাপি করবে না, সেই বন্ধুটিই কিন্তু মদ বা গাঁজার বেলায় আপনার জন্য হাজার টাকা খরচ করে ফেলবে।

স্টিলওয়াটারে আমি এই রকম একজনের পাল্লায় পড়েছিলাম, নাম রাস্কো। আফ্রিকান আমেরিকান। আমার প্রতিবেশী ছিল। তার জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমাকে গাঁজার উপকারিতা বোঝানো আর খাওয়ানো। একদিন সে আমাকে বলল, এত ভালো জিনিস তুই টেস্ট করবি না? কেমনে হয়।

বললাম- এইসব ব্যাপারে আমাদের প্রফেটের (সা.) কঠিন নিষেধ আছে।
বলল- তোর প্রফেট তো এখন দেখছে না। হোয়াই ডোন্ট ইউ ট্রাই ইট।
বললাম-আমার বিলিভ মতে গড অলমাইটি সব খবরই রাখছেন…

রাস্কো তখন গাঁজার হাজারো উপকারিতা আমাকে বলে যায়। কোথায় কোথায় গাঁজা লিগ্যাল, কেন ওকলাহোমাতেও এটাকে লিগ্যাল করা উচিত সে সম্পর্কে আমাকে বয়ান করে যায়।

বললাম- এক কাজ কর, তুই আমাকে গাঁজার বদলে ‘স্টিল চায়না রেস্টুরেন্টে ৮ ডলারের বাফে খাওয়া।
রাস্কো তখন গম্ভীর হয়ে চলে যায়। আমার আর বাফে খাওয়া হয় না…

আমার রুমমেট ছিলেন রাজন ভাই, প্রয়াত রাজনীতিবিদ মান্নান ভূঁইয়ার বড় ছেলে। সিনিয়র মানুষ, অত্যন্ত ভদ্র, পড়াশুনা আর চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। একদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি গাড়ি পারকিং নিয়ে রাজন ভাইয়ের সাথে রাস্কোর তুমুল ঝগড়া চলছে।

রাস্কো পুরাই স্টোন্ড! রাজন ভাইয়ের সাথে ঝামেলা হলেও আমার অন্য রুমমেট ইফতির সাথে তার খুবই ভালো খাতির। অথচ প্রথমে তাদের মধ্যেও ঝামেলা ছিল। দুইজন মিলেই হিস্প্যানিক এক মেয়ের প্রেমে পড়ে। ওই মেয়ে যখন দু’জনকেই রিফিউজ করে, তখন তাদের কমন দুঃখ ভুলতে তারা প্ল্যান করে টবে গাঁজার চাষ করবে।

আমি রাস্কোকে বললাম- দেখ, এখানে উইডের গাছ লাগালে, আই উইল কল দ্য কপ!

রাস্কো ঠাণ্ডা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চোখ গনগনে লাল। শান্ত গলায় আমাকে বলেছিল- গাঁজা সেবনের পর তার মধ্যে এঞ্জেল অব ডেথ ভর করে। আমার মতো কয়েকটা মানুষ মেরে ফেলা তার জন্য কোন ব্যাপার না…

কদিন আগে মেহেদি ভাই স্টিলওয়াটারে বেড়াতে গেলে আমাদের হাজারো ঘটনাবহুল ৩১৫, সাউথ ডাক স্ট্রিটের ওই বাড়িটার ছবি পাঠান। যেখানে কেটেছে আমাদের ফ্রেসম্যান, সফোমোর ইয়ারের দারুণ সব সময়। বাড়িটা ২০১৮-তেও একই রকম আছে। এখনো ‘ফর রেন্ট’ নোটিশ ঝুলছে।

নতুন সেমিস্টারে হয়তো নতুন কোন বিপুল, রাস্কো বা ইফতি সেখানে উঠবে।

লেখক : শিশুবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্পোর্টিভ-এর কর্ণধার।