মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের বীরত্বের ইতিহাস-গাথা


শরীফুল রুকন : বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে রয়েছে অসংখ্য পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগের ইতিহাস। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে ঢাকায় প্রথম গণহত্যা শুরু করে। আর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ওই রাতেই প্রথম প্রতিরোধ শুরু হয়। সেনানিবাস থেকে হিংস্র শ্বাপদের মতো বেরিয়ে আসা সাঁজোয়া যানের বহর দেখে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা সেদিন একটুও ভয় পাননি। অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকেই বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিলেন পুলিশ সদস্যরা। ছেড়েছিলেন বিদ্রোহের হুংকার।

সেই ইতিহাসের খোঁজ পাওয়া গেল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা’, মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের লেখা ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’, জেনারেল রাও ফরমান আলীর লেখা ‘হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড’ ও জামাল উদ্দিনের ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহর’ শীর্ষক বইতে। এসব বইয়ে অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে পুলিশের গৌরবগাথার বিবরণ পাওয়া যায়।

১৯৭১ সালের মার্চের অগ্নিঝরা দিনে পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ছিলেন উজ্জীবিত। অস্ত্রধারী বাঙালি হিসেবে সে সময় সারা দেশে সাধারণ মানুষের একান্ত আপনজন ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত পুলিশ বাহিনীতে তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল বাঙালি। এসব বিষয় পাকিস্তানি সামরিক জান্তার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে ঢাকায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতাকামীদের ওপর গুলি চালানোর প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেই রাজপথে নামানো হয়। পুলিশ বিভাগকে আস্থায় নেওয়ার ঝুঁকি তারা নেয়নি। রাজারবাগ পুলিশ লাইনও সে সময় দখলদার বাহিনীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মূলত এ সময়ে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশের বাঙালি সদস্যরা জনগণের কাতারে এসে দাঁড়ায়।

মেজর রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম তাঁর ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘পাকিস্তান সরকার বুঝতে পেরেছিল যে, ইপিআর এবং পুলিশ বাহিনীই হবে এই অঞ্চলের লোকের সশস্ত্র সংগ্রামের প্রধান উৎস। এ-ও পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক কার্যক্রমে ইপিআর এবং পুলিশ অস্ত্র ধরবে না।’ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের এই ধারণা ২৫ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ পরিকল্পনায় পুলিশ সদস্যদের নিরস্ত্র করার নির্দেশ দেওয়ার মধ্যেই প্রতিফলিত হয়।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত বাঙালি পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ায় পাক সেনা কর্মকর্তারা প্রশাসনিকভাবে চরম অসহায়ত্ব বোধ করতে থাকেন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছুটে আসা সৈন্যরা এ দেশের রাজনীতিকদের যেমন চিনত না, তেমনি পথঘাটও তাদের চেনা-জানা ছিল না। বাঙালি পুলিশ সদস্যদের পরিকল্পিত প্রশাসনিক অসহযোগের কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশা ব্যর্থ হয়ে যায়। বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জেনারেল রাও ফরমান আলীর লেখায় বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

‘হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড’ বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেছিলাম যে, রক্তপাত এড়াতে হলে প্রয়োজনে কূটচাল খাটিয়ে হলেও সকল রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ঢাকা ও অন্যান্য স্থানের সকল উল্লেখযোগ্য নেতার একটি তালিকা তৈরি করে সেসব স্থানে যাওয়ার এবং তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য বিভিন্ন দলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের ফলে পরিকল্পনাটি ফাঁস হয়ে যায় এবং নেতারাও অদৃশ্য হয়ে যান। পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তান আর্মির পক্ষে তাদের চিহ্নিত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একমাত্র শেখ মুজিব ছাড়া উল্লেখযোগ্য অন্য কোনো নেতাকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’

অসহযোগ আন্দোলনের সময় পুলিশের তৎকালীন আইজি তসলিম উদ্দিন আহমেদ বাঙালির অধিকার আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। পুরো দেশে পুলিশ প্রশাসন পাকিস্তানিদের অনুগত না থাকায় সব দায়ভার এসে পড়ে তার ওপর। পাকিস্তানের জেনারেল রাও ফরমান আলীর লেখায় আইজির প্রতি ক্ষোভ ঝরে পড়ে। তিনি ‘হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড’ বইয়ে লিখেছেন, ‘পুলিশ প্রধান সবার আগে তার বাহিনীসহ পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে আওয়ামী লীগ কমান্ডের হাতের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছিলেন এবং তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছিলেন।’ ২৬ মার্চের পর তসলিম উদ্দিন আহমেদকে আইজি পদ থেকে সরিয়ে অবাঙালি মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরীকে নিয়োগ দেয় পাকিস্তানের সামরিক সরকার।

এর আগে মার্চের প্রথম সপ্তাহে পুলিশের আইজি তসলিম উদ্দিন আহমেদ ও বিশেষ শাখার জিআইজি এ এস মেজবাহ উদ্দিন ৩২ নং রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধু পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমরাই এক্ষণে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার। সুতরাং আমাদের নির্দেশ মেনে চলাই আপনাদের উচিত হবে।’ জবাবে বিশেষ শাখার জিআইজি এ এস মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে আপনাদের প্রতি আমাদের অবশ্যই পূর্ণ আনুগত্য রয়েছে।’

উক্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ৬ দফা অর্জনের জন্য প্রদেশের অবনতিশীল অবস্থার মধ্যেও যতটা সম্ভব স্থিতিশীলতা রক্ষা করা দরকার। অরাজকতা শুরু হলে স্বাধিকার আন্দোলনের পথকে চক্রান্তকারীরা আরো কঠিন করে তুলতে চেষ্টা করবে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বঙ্গবন্ধু পুলিশের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে সম্মতি দেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার স্পষ্ট নির্দেশ রইল, যে যেখানে থাকুন নিষ্ঠার সাথে নিজ দায়িত্ব পালন করুন। আন্দোলনকে সংযত রাখুন।’
একইভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার সম্পূর্ণভাবে পুলিশ বিভাগের ওপর ন্যস্ত করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার সম্পূর্ণভাবে পুলিশ এবং বাঙালি ইপিআর বাহিনীর ওপর ন্যস্ত করতে হবে।’

১৬ মার্চ, ১৯৭১। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা বৈঠকে যোগ দিতে বেলা ১১টায় গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের ২৩ বছরে প্রথমবারের মতো কালো পতাকাধারী কোনো গাড়ি প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর গাড়ি প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশকালে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা পূর্ণ মর্যাদার সঙ্গে তাকে অভিবাদন জানায়। কিন্তু সেই সময় সেনাবাহিনী কাঠের পুতুলের মতো নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশ সদস্যরা এ দিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের প্রতিও স্বতস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। এমনকি প্রেসিডেন্ট ডিউটিতে থাকা পুলিশের ট্রাক ও জিপে কালো পতাকা উড়ানো হয়।

এর আগে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নীরব প্রস্তুতি চলতে থাকে। সে সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত ১৯ জন সুবেদার এবং সার্জেন্টের মধ্যে ১৪ জন ছিলেন অবাঙালি। যার ফলে গোপনীয়তা রক্ষা করা কঠিন ছিল। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে করণীয় সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন এবং পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার বিভিন্ন পদ্ধতি নির্ধারণ করেন। সে সময় বাঙালি পুলিশ সদস্যদের দাবির মুখে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগারের সামনে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

পুলিশ সদস্যদের এমন প্রস্তুতি ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতেও চলতে থাকে। চট্টগ্রামের এসপি শামসুল হকের নেতৃত্বে চার হাজার বাঙালি পুলিশ মার্চের শুরু থেকেই পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ৮ মার্চ একদল পুলিশ লালদীঘির জেলা পুলিশ সদর দপ্তরে এবং দামপাড়া পুলিশ লাইনে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এমনকি বিক্ষুব্ধ বাঙালিদের ওপর গুলি চালানোর আদেশ অমান্য করে ইপিআর এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। ২১ মার্চ সন্ধ্যায় আন্দরকিল্লার সবকটি বন্দুকের দোকানের তালা খুলে অস্ত্রগুলো ছাত্রনেতাদের হাতে তুলে দেন এসপি শামসুল হক।

ওই রাতেই তিনি একদল পুলিশ সাথে নিয়ে আদালত ভবন লকার, রাইফেল ক্লাব ও আইচ ফ্যাক্টরি রোডে রেলওয়ে গোডাউনে রাখা অস্ত্রগুলো পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করেন এবং বেশ কিছু অস্ত্র সংগ্রহ করে দামপাড়া পুলিশ লাইনের অস্ত্রভাণ্ডারে নিয়ে মজুত রাখেন। ২৬ মার্চ ভোরেই ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে আসা প্রায় দুশ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য পুলিশ লাইনে আশ্রয় নেয়। এসপি শামসুল হকের আদেশে এসব বাঙালি সৈনিককে অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে দেওয়া হয়। এমনকি দামপাড়া পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগারে রক্ষিত সব ধরনের অস্ত্র এবং আদালত ভবনের মালখানায় থাকা অস্ত্রগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন চট্টগ্রামের এসপি শামসুল হক।

এদিকে, ১৯৭০-৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে কোনো নিয়মিত আনসার বাহিনী ছিল না। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে আনসার বা মুজাহিদ বাহিনীতে লোক নিয়োগ করা হতো। প্রশিক্ষণ শেষে দায়িত্ব পালনের জন্য তাদেরকে নির্দিষ্ট অস্ত্র সরবরাহের নিয়ম ছিল। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশের বাঙালি নীতিনির্ধারকরা ভবিষ্যতের সশস্ত্র সংগ্রাম আঁচ করতে পেরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সে সময় পুলিশের অস্ত্রাগারের মজুদকৃত অস্ত্র বাঙালির হাতে বৈধভাবে তুলে দিতে অধিক সংখ্যক আনসার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গোপন পরিকল্পনা অনুযায়ী, অধিক আনসার নিয়োগের সুযোগে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে এসপিদের সিগন্যাল দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে জেনারেল রাও ফরমান আলী তার বইয়ে লিখেছেন, ‘প্রশাসনের ওপর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ থাকায় পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকা রাইফেলগুলো আনসারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।’ প্রতিরোধ যুদ্ধে এই অস্ত্রগুলোই ছিল মুক্তিবাহিনীর অস্ত্র প্রাপ্তির প্রধান উৎস। পরবর্তীতে এই অস্ত্র হস্তান্তরের জন্য পাকসেনাদের কাছে পুলিশ কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হয়েছিল।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ করে, তখন সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু ট্যাংক, মর্টার আর মেশিনগানের সঙ্গে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি তারা। সেই রাতে প্রায় আটশ পাক সেনা ট্যাংকবহরসহ প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রবেশ করে। এ সময় তাদের হাতে অনেক বাঙালি পুলিশ সদস্য হতাহত হন। সকাল হওয়ার আগেই সেনাবাহিনীর আট-দশটা ট্রাকে করে লাশ সরিয়ে ফেলা হয়।

এর আগে প্রতিরোধ শুরুর খবরটি সারা দেশের পুলিশ স্টেশনগুলোতে বেতারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন তখনকার ওয়্যারলেস অপারেটর কনস্টেবল শাহজাহান মিয়া : ‘বেইজ ফর অল স্টেশনস, ভেরি ইমপরট্যান্ট মেসেজ। প্লিজ কিপ নোট।…উই আর অলরেডি অ্যাটাক্টড বাই পাক আর্মি। ট্রাই টু সেভ ইয়োরসেলফ। ওভার অ্যান্ড আউট।’ এই বার্তা পেয়েই প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন সারা দেশের পুলিশ সদস্যরা।

এ বিষয়ে জেনারেল রাও ফরমান আলী লিখেছেন, ‘২৫ মার্চের রাত ১০টার দিকে পুলিশ বিদ্রোহ করে এবং পুলিশ লাইনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আর্মির ওপর প্রথম গুলি বর্ষণ শুরু করে। রিজার্ভ পুলিশ কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তাদেরকে রাত ৩টার মধ্যে নিরস্ত্র করা হয়। তাদের অনেকে আহত হয়েছিল।’

১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত ৩৩ হাজার ৯৯৫ জন পুলিশের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার সদস্য কর্মস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ১১শ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের অবদানের নানা স্মৃতিচিহ্ন, স্মারক বর্তমানে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে স্থাপিত জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।