রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

এগিয়ে যাচ্ছে সুইমিংপুলের নির্মাণ কাজ (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ ৬ মে ২০১৭ | ১২:১৪ পূর্বাহ্ন

একুশে প্রতিবেদক: মাস দুয়েকের মধ্যে যারা চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামের দিকে যাননি, এখন সেখানে গেলে চমকে যেতে হবে তাদের। যাওয়ামাত্রই চোখে পড়বে পরিবর্তন। আগের চেনা-জানা সেই মাঠের দৃশ্য এখন আর কেউ খুঁজে পাবেন না।

মাঠের বেশিরভাগ অংশজুড়ে টিনের ঘেরাও দিয়ে চলছে নির্মাণ কাজ। বালু, পাথর আর মাটির বিশাল বিশাল স্তুপ। সেই স্তুপ থেকে বালু আর সুরকি যাচ্ছে নির্মাণ এলাকায়। এক্সক্যাভেটরের ছুটোছুটির মাঝে নির্মাণ শ্রমিকদের যেন দম ফেলার সময় নেই।

আশেপাশে শুধু বালু, নির্মাণযন্ত্রের শব্দ আর নির্মাণসামগ্রী। চলছে সুইমিংপুল কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ। টিনের ঘেরাওয়ের ভেতর চলছে তারই বিপুল কর্মযজ্ঞ। শুক্রবার বিকেলে দেখা গেল এ চিত্র।

সব ঠিক থাকলে নয় মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে ৭০ হাজার ৩৮০ বর্গফুটের (৩০৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৩০ ফুট প্রস্থ) সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আউটার স্টেডিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) এই পুলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে; যার সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

অন্যদিকে এই আউটার স্টেডিয়ামেই প্রতিবছর ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়, যার অন্যতম উদ্যোক্তা সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। গত ১০ এপ্রিল লালদীঘি মাঠে এক সমাবেশ থেকে সুইমিং পুল করার উদ্যোগ বন্ধ করতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু মহিউদ্দিনের এ বক্তব্যের সপ্তাহখানেক আগে থেকে আউটার স্টেডিয়াম টিন দিয়ে ঘিরে প্রকল্পের কাজ শুরু করে সিজেকেএস। এরই মধ্যে গত ১৮ এপ্রিল বিকেলে সুইমিংপুল নির্মাণের বিরোধীতাকারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়।

সুইমিংপুলের প্রকল্প এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনার পর নির্মাণ কাজে নেমে এসেছিল ধীরগতি। তবে বর্তমানে পুরোদমে এগিয়ে চলেছে সুইমিংপুলের নির্মাণকাজ।

ইতোমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ কাজ এগিয়ে গেছে বলে জানালেন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন।

তিনি বললেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ৬০জন শ্রমিক এই প্রকল্পে কাজ করছেন। পিলার তোলার কাজ চলছে। প্রাথমিক পর্যায়ে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে সারিবদ্ধভাবে ১২টি করে ২৪টি পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। পুরোদমে কাজ চলছে। এভাবে চলতে থাকলে ৯ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে।’

এদিকে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের চারপাশে রেস্টুরেন্টসহ নানা প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিকভাবে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখন অভিযোগ উঠেছে, আউটার স্টেডিয়াম ঘিরে সুইমিংপুলের নামে স্থাপনা নির্মাণ করে নতুন করে আরও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর ফলে স্টেডিয়াম এলাকা খেলাধুলার পরিবর্তে পরিপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হবে।

গত বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি লিখেছেন, ‘…চট্টগ্রামে তৈরী হচ্ছে সুইমিং কমপ্লেক্স। এ খেলার মাঠে মাঝখানে সুইমিংপুল আর রাস্তার পাশে টাইলসের কোটি টাকার একেকটি দোকান। বলে দিলেই হতো আমাদের দোকান প্রয়োজন সুইমিংপুল না। ইতিমধ্যে রশিদবিহীন দোকান বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিটি ৯০ লাখ, তিনটি কিনলে ২ কোটি ৫০ লাখ।’

জানতে চাইলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সুইমিং কমপ্লেক্সের যে নকশাটি করা হয়েছে, তাতে কোন দোকান নেই। নকশাটি আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থাকেও দিয়েছি। আমরা শুধুমাত্র সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে বুঝিয়ে দেব। এরপর ব্যবহারকারী হিসেবে তারা যদি দোকান করার উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আপত্তি জানাতে পারে।’

‘কোন ভেন্যুতে যখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে তখন সেখানে আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের এই সুইমিং কমপ্লেক্সে আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের।’

অবশ্য সুইমিংপুল কমপ্লেক্স ঘিরে যে ‘দোকান’ গড়ে উঠার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুলের বিরোধী পক্ষ থেকে; তা বাস্তবায়নের কিছুটা ইঙ্গিতও মিলেছে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘… দেখুন, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম নির্মাণ করে দিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তখন কিন্তু নকশায় স্টেডিয়ামের আশপাশে কোন দোকান ছিল না। শুধু স্টেডিয়াম নির্মাণ করে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে হস্তান্তর করা হয়েছিল। পরে স্টেডিয়াম কেন্দ্রীক দোকান তৈরী করে আয় করেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। অবশ্য এটাকে নেগেটিভভাবে নেওয়ার কিছু নেই। কারণ এই টাকার সব তো ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতিতেই ব্যয় হচ্ছে।’

‘চট্টগ্রাম একটি বিভাগীয় শহর হওয়ার পরও এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ সুইমিংপুল নেই। চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই সুইমিংপুলটি নির্মিত হচ্ছে। এটি আমাদের ক্রীড়াবিদদের উৎকর্ষতা সাধনে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের সাঁতারু গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।’ যোগ করেন মো. জাহিদ হোসেন।

শুক্রবার বিকেলে আউটার স্টেডিয়ামের খোলা মাঠের এক পাশে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ক্রিকেট অনুশীলন করছিল বেশ কিছু ছেলে। এদের একজন তাহসিন আহমেদ বলেন, ‘আগে মাঠের দক্ষিণ পাশে অনুশীলন করতাম। ওই দিকে সুইমিংপুলের কাজ চলায় এখন উত্তর পাশে অনুশীলন করছি।’

আরিফুল ইসলাম নামের আরেকজন বললেন, ‘এই মাঠে দুই মাস থাকে বিজয় মেলা। আবার গাড়িমেলা, তাঁতবস্ত্র মেলা, বৃক্ষমেলাও হয় বছরজুড়ে। এসব মেলা শেষ হওয়ার পর যত্রতত্র ইটের টুকরো, পেরেক পড়ে থাকায় খেলতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। এই মাঠে বছরে মাত্র কয়েকটা মাস খেলার সুযোগ পাই আমরা।’