রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

মন্ত্রীসভার সব সদস্য ডাকাত বললেন মহিউদ্দিন চৌধুরী!(ভিডিওসহ)

প্রকাশিতঃ ৩০ এপ্রিল ২০১৭ | ১০:৪৭ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : মন্ত্রীসভার সব সদস্য ডাকাত বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার বাসভবনে অভ্যাগত কারো সঙ্গে এক ঘরোয়া আলোচনায় তিনি এই মন্তব্য করেছেন, যা এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে।

দুই মিনিট ৯ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটি সম্প্রতি একুশে পত্রিকার হাতে এসেছে। সেখানে মহিউদ্দিন চৌধুরী মন্ত্রীসভার সদস্যরা সবাই ডাকাত, তাই তাঁর মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখানসহ নানা ইস্যুতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছেন।

পুরো ভিডিওটি দেখে মনে হয়েছে, তাঁর বাসভবনের কোনো এক আড্ডায় এই আলাপচারিতা। আলাপচারিতার ফাঁকে ভিডিওতে হালকা করে কয়েকজনের প্রতিউত্তর শোনা গেলেও তিনি আসলে কে বা কার সঙ্গে এই আলাপচারিতায় মেতেছিলেন তা স্পষ্ট নয়। এই আলাপচারিতার সময় প্রথম দিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কানে মাইক্রোফোন লাগানো থাকতে দেখা যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, শুরুতে মহিউদ্দিন চৌধুরী একটি ইংরেজি বাক্য বলেন। বাক্যটির ‘অ্যাম আই চাইল্ড?’ পর্যন্ত বোঝা গেলেও পরের অংশটি পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। এরপর কোনো একজনকে উদ্দেশ্য করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন ‘গুন্ডই ন গরিস বা-জি, গুন্ডই গরি লাভগান কী? অর্থাৎ- গুন্ডামি করিস না বাবা, গুন্ডামি করে লাভটা কী?

এরপর আঞ্চলিক ভাষায় তিনি যা বলেন শুদ্ধ বাংলায় তার অনুবাদ দাঁড়ায়- ‘গুন্ডাপ্রশ্রয়, গুন্ডা কি আমি বানাতে পারি না। চট্টগ্রাম শহরে একসময় আমি ত্রাস সৃষ্টি করেছি। চোর-চাট্টা গিড়াকাটাদের মেরে শায়েস্তা করেছি।’

তারপর বলেন, ‘আমার সঙ্গে চালাকি করা হয়েছে। আমি চিটাগনিয়ান। এটা হলো আমার অপরাধ! আই অ্যাম অ্যা ডাই। আমাকে অ্যাপ্রোচ করা হচ্ছে মন্ত্রী হওয়ার জন্য। আমার দরকার নাই। আমি ঢাকা যাবো না। আমাকে আজকেও বলা হয়েছে মন্ত্রী হওয়ার জন্য। বলেছি আমি নিব না। মন্ত্রীসভায় সবাই ডাকাত। আমি ডাকাতের সাথে বসবো না। আই অ্যাম অ্যা ডাই। আমার দরকার নেই তো!’

এরপর বলেন, ‘আমি যে নেম অ্যান্ড ফেম জোগাড় করেছি কষ্ট করে, না খেয়ে না দেয়ে, সেটা আমার জন্য অনেক কিছু। মানুষ আমাকে কলেমা পড়ে, কাধে নিয়ে জানাজা পড়বে। আমি চাচ্ছি সেটা।

এরপর প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে তার মালিকানাধীন বিজয় টেলিভিশন নিয়ে কথা বলেন। বলেন, ‘বিজয় টিভি করলাম! কিন্তু আমি সেটিসফাইড না। আমার কাছে টাকাও নাই। যেটা করার সেটা করতে পারছি না। শুধু বক বক করে, কথা বলে। মেধা লাগবে তো, লেখাপড়া লাগবে তো! তোমাদের মাঝে শুধু তুমি একটু আছ, আর কে।’

বিজয় টিভির সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বললেও উপরের প্যারার শেষ অংশটি উপস্থিত কাউকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে।
এরপর আবারও নিজের প্রতি অবজ্ঞা ও মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে ফিরে যান মহিউদ্দিন চৌধুরী। বলেন- ‘আমি চিটাগনিয়ান, সেজন্য আমাকে ফেলে দিয়েছে। আমি ছাড়বো না। আমি আবার ঘুরে দাঁড়াবো। আমাকে মন্ত্রীত্ব নেওয়ার কথা বলছে, আমি নেব না। সবাই বলছে আপনাকে পেছনে ফেলে দিয়েছে আপনার ছেলেকে তোলার জন্য।’

-‘আমি ইচ্ছা করে বলেছি। আর্মি আহ্বান করার জন্য বলেছি। বলছে না তো তারা। ক্যান্টনমেন্টে আর্মি রেখে লাভ কী। এটা তারা বলতে পারছে না কেন?’ আফসোস নিয়ে বলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

ভিডিওতে তাঁর এই বক্তব্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গেলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শুরু থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছিল বিএনপি। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রাথমিক সিদ্ধান্তও গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু পরবর্তীতে বলা হয় নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে নয়, ব্যারাকে থাকবে সেনাবাহিনী। কোথাও গোলযোগ হলে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া যাবে। সেসময় বিষয়টিতে বিএনপি সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

সেই প্রসঙ্গ টেনে মহিউদ্দিন চৌধুরী নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে ছিলেন সেকথাই বোঝাতে চাইছেন বলে মনে হচ্ছে ভিডিও বিশ্লেষণে। আর সেই কারণেই তিনি সেনাবাহিনী প্রত্যাশীদের আর্মি আহ্বানে অনড় থাকতে পরামর্শ দেওয়ার কথা বলেছেন।

ভিডিও’র একেবারে শেষের দিকে তিনি বলছেন- ‘ও ডাকাত একটা। চিটাগাংয়ের কপালে দুর্ভোগ আছে। ও জামায়াতের মানুষ। ওর ঘরে সব জামায়াত তো! হয়ে যাবে-মারে মা! হয়েই ও আমার পাছায় দারা দেবে। দারা দিলে কি আমি বসে থাকব? হয়ে যাবে, হয়েই ও আমার পাঁছায় দারা দেবে-এই কথা থেকে ধারণা করা হয়, তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকেই উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছেন এবং নির্বাচনের একেবারে আগ মুহূর্তে বলেছেন কথাগুলো।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য রোববার দুপুরে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মোবাইলে একাধিবার ফোন করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।