আবছার রাফি : মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশ অমান্য করে ২ নভেম্বর থেকে নগরের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ ‘অ্যাসাইনমেন্ট টেস্ট’ নিতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই পরীক্ষা গ্রহণের পরপরই ২৪ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মাউশি ঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ী ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা আর ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ফলে একই মাসের ভেতর দুইবার পরীক্ষা নেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়তি চাপ এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বুধবার (১৩ অক্টোবর) মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মুহাম্মদ গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, ‘২৪ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা এবং ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ গণিত বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ২০২১ শিক্ষাবর্ষে এই পরীক্ষা ব্যতীত অন্য কোনো পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।’
মাউশির পক্ষ হতে নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষা না নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করে গত ২২ (অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ইস্পাহানি স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগামী ২ নভেম্বর থেকে ‘অ্যাসাইনমেন্ট টেস্ট’ গ্রহণ করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রিয় শিক্ষার্থী, ৩য় থেকে ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি যাচইয়ের উদ্দেশ্যে আগামী ২নভেম্বর থেকে একটি মূল্যায়ন অভীক্ষা (অ্যাসাইনমেন্ট টেস্ট) অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক শ্রেণিসমূহে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বিজ্ঞান এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক এবং আইসিটি বিষয়ে, ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে পদার্থ বিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান, রসায়ন, ফিন্যান্স, জীববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ, উচ্চতর গণিত এবং সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ভাই আমার নামটা বলিয়েন না, তাহলে আমার বাচ্চার ক্ষতি হবে। অন্য কোনো স্কুল এই পরীক্ষা নিচ্ছে না, শুধু ইস্পাহানি স্কুল নিচ্ছে। এক সপ্তাহের ভেতর নোটিস দিয়ে পরীক্ষা দিতে বলা হচ্ছে। ভালোমতো প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ খুবই কম সময়। না হয় পরীক্ষা নিচ্ছে তা ভালো দিক কিন্তু প্রস্তুতি নেওয়ার সময় দেওয়ার দরকার ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল ও কলেজের মাধ্যমিকের একজন শিক্ষার্থী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় না দিয়ে পরীক্ষা হচ্ছে। এই পরীক্ষার ফি নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো কিছু জানানো হয়নি। তবে কয়েকজন ক্লাস শিক্ষক বলেছেন, এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে প্রমোশন হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এদিকে ৬টা অ্যাসাইনমেন্ট এখনো জমা দেওয়া হয়নি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ক্লাস না হওয়ায়। তাই এই পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
এদিকে শনিবার (২৩ অক্টোবর) এই মূল্যায়ন অভীক্ষা (অ্যাসাইনমেন্ট টেস্ট) গ্রহণের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিলেবাসও বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।’
ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল ও কলেজের মাধ্যমিকের আরেকজন শিক্ষার্থী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদেরকে পূজার বন্ধের আগে বললেও আমরা প্রস্তুতি নিতে পারতাম। ২২ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত তো আমরা সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ গণিত পড়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ২২ অক্টোবর বললো ২ নভেম্বর পরীক্ষা নেওয়া হবে। মাঝখানে যে ১০-১৫ দিন পূজোর বন্ধ গেল তখন তো কিছু বলেনি কিংবা কোনো ইঙ্গিতও দেওয়া হয়নি যে অন্যান্য একাধিক বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হবে। এখন এই পরীক্ষাও দিতে হবে আবার অ্যাসাইনমেন্টও করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু সরকার বলেছে, অ্যাসাইনমেন্টের ওপর ৪০ নাম্বার যোগ করা হবে বার্ষিক পরীক্ষার সাথে। আমাদেরকে এখনো বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাসও দেওয়া হয়নি। এই মূল্যায়ন পরীক্ষা ১১ নভেম্বর শেষ হবে বলা হয়েছে। এখন ১১ তারিখ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে মাউশি ঘোষিত বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস শেষ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলও খারাপ আসতে পারে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ইস্পাহানি স্কুল ও কলেজ যদি পরীক্ষা বেশি নেয় তাহলে তারা অবশ্যই মাউশির নির্দেশনা অগ্রাহ্য করেছে। মাউশির নির্দেশ না মানার লিখিত অভিযোগ পেলে পরীক্ষা বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্ণেল (অব.) মইনুল ইসলাম চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা অভীক্ষা, পরীক্ষা নয়। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থেকে ছাত্রছাত্রীদের অগ্রগতি যাচাইয়ের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো ফি নেওয়া হচ্ছে না, কাউকে বাধ্যও করা হচ্ছে না। গার্ডিয়ানদের অনুরোধের ভিত্তিতে এই অভীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর মাউশির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা হবে তিনটা বিষয়ে, এছাড়া বাকি যে বিষয়গুলো আছে তা পড়া বাদ দিয়েছে শিক্ষার্থীরা; তাই গার্ডিয়ানদের পরামর্শে এটা নেওয়া হচ্ছে। যেহেতু এটা অভীক্ষা, কোনো প্রমোশনাল পরীক্ষা নয়, সেহেতু মাউশির নির্দেশনা এখানে অমান্য করা হচ্ছে না।’