ফেসবুকে ১০ লাখ লাইক, তাই আলোচনা সভা ও ইসলামী সঙ্গীতানুষ্ঠান


আবছার রাফি : ফেসবুক পেইজে ১০ লাখ লাইক আর ইউটিউবে এক লাখ সাবস্ক্রাইবার পূর্ণ হওয়ায় আলোচনা সভা ও ইসলামী সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন ঢাকা মারকাজুত তাহফিজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক শায়েখ নেছার আহমাদ আন নাছিরী।

সম্প্রতি ফেসবুকে এই আলোচনা সভা সংক্রান্ত একটি পোস্টার ভাইরাল হলে সমালোচনা শুরু হয়। ব্যঙ্গাত্মক নানা মন্তব্যে ভরে যায় শায়েখ নাছের আহমাদ আন নাছিরীর বিভিন্ন ফেসবুক পোস্ট।

‘কমেন্ট অপশনে’ ব্যঙ্গবিদ্রুপ ছাড়াও অনেকে জানতে চেয়েছেন এই আলোচনার সভার যৌক্তিকতা কতটুকু বা এ বিষয়ে শায়েখ কী বলবেন- এমন প্রশ্ন করে। ভক্তদের এমন মন্তব্যের কোনো সদুত্তর না দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে মন্তব্য মুছে দিতে দেখা যায় শায়েখ নাছের আহমাদ আন নাছিরীকে।

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবিতে দেখা যায়, শায়েখ নাছের আহমাদ আন নাছিরীসহ বিভিন্ন মাদরাসার প্রধান, মসজিদের খতিব, ইসলামী সংস্থার নানা ব্যক্তিবর্গ সারিবদ্ধভাবে একটি মঞ্চে উপস্থিত আছেন। মঞ্চের পেছনের দেওয়ালে সাঁটানো রয়েছে একটি ডিজিটাল ব্যানার। তাতে লেখা আছে, “শায়েখ নাছের আহমাদ আন নাছিরীর ফেসবুক পেইজে এক মিলিয়ন প্লাস ফলোয়ার ও ইউটিউবে একলক্ষ প্লাস সাবস্ক্রাইবার পূর্ণ হওয়ায় আলোচনা সভা ও ইসলামী সঙ্গীতানুষ্ঠান।” এই ছবিটি ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকটা তোপের মুখে পড়তে দেখা যায় শায়েখ নাছের উদ্দিন আন নাছিরীকে। আলোচনা-সমালোচনায় ভরে ওঠে তার ফেসবুক টাইমলাইন।

এস. এম. শাহেল নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী শায়েখ নেছার আহমাদ আন নাছিরীর এক পোস্টে মন্তব্য করেছেন, ‘এসব কেমন ভণ্ডামি? আপনাদের এসব ভণ্ডামির কারণে আলেম সমাজের সন্মানহানি হচ্ছে!’, আস সাইফ নামের আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘আচ্ছা হজরত এটা তো একটা ছোট বাচ্চাও করবে না। কে বুদ্ধি দিলো আপনাকে দয়া করে এগুলো পরিত্যাগ করুন।’ মোল্লা সরকার নামে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘আর কী দেখার বাকি আছে। আমার ভক্তরা কী পারবে এমন একটা আয়োজন করতে।’

ফেসবুকে মিজানুর রহমান নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এই ধরনের কার্যকলাপ আপনাদের মতো আলেমদের থেকে আশা করি না।’। কাউছার বিন সুলেইমান নামের একজন লিখেছেন, ‘হিরো আলমের এক মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারের চেয়েও বেশি হয়েছে। সে তো একটাও আলোচনা সভা করলো না আর আপনি হিরো আলমকেও হার মানালেন’। জাকির হোসাইন নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ডিজিটাল শায়েখ ফেসবুক ও ইউটিউব নেছার আহমাদ নেছারীকে বলতে চাই, আপনিই মনে হয় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, এইসব ফাইজলামি বন্ধ করেন।’।

মুফতি মানজুর হোসাইন নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ওনাদের (কওমি হয়রতদের) সকল অনর্থক ও নিকৃষ্ট আয়োজন জায়েজ। শুধু মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত মাহফিল নাজায়েজ।’ হিজবুল্লাহ ইসহাকি নামের একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আলেমদের মান-মর্যাদা ও শান-শওকত জাহেলদেকেও হার মানালো!’

জানা যায়, বুধবার (২০ অক্টোবর) কক্সবাজারের হোটেল অস্টার ইকোতে হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরপরই এই আলোচনা সভা ও ইসলামী সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ফেসবুকে সমালোচনার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় শায়েখ নাছের আন নাছিরীর সঙ্গে। প্রসঙ্গ তুলতেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। পরে বারবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে আলোচনা সভা ও ইসলামী সঙ্গীতানুষ্ঠানে শায়েখ নাছের আহমাদ আন নাছিরী ছাড়াও হ্নীলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মো. আফসার উদ্দিন, ইসলামী সঙ্গীতশিল্পী আসহাব উদ্দিন আল আজাদ, হুফ্ফাজুল কুরআন ফাউণ্ডেশন কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা জামাল উদ্দিন, হফ্ফাজুল কুরআন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা ইউনুস ফরাজি, তালিমুল কুরআন মডেল মাদরাসার পরিচালক হাফেজ ইব্রাহীন রোহান, চট্টগ্রাম প্রাইভেট মাদরাসা চেয়ারম্যান হাফেজ মো. আবু তৈয়ব, কক্সবাজার ঈদগাহ মসজিদের খতিব মুফতি সোলাইমান কাসেমী, হাফেজ ক্বারী মাওলানা রফিক আহমাদ উসমানী, হাফেজ ক্বারী মাওলানা আবদুল ওয়াদুদসহ হিফজুল কুরআন প্রতিয়োগিতায় আগত কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানের হাফেজ, ক্বারী ও আলেমগণ উপস্থিত ছিলেন।