জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার : আবারও রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে বড় ধরনের নাশকতার ছক আঁকা হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর খুনি ও তাদের মদদদাতারা একযোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা করেছে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে কথিত মুহিবুল্লাহ খুনের মদদদাতা সংগঠন হিসেবে আলোচনায় আসা আরসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে বৃষ্টি থেমে গেলে কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পের ঘনবসতি স্থানে একযোগে অগ্নিসংযোগ করা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। মুহিবুল্লাহ হত্যা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযান থমকে দিতে নতুন করে এ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারাও অবহিত।
ইতোমধ্যে ক্যাম্পে অগ্নিংযোগের বিষয়ে সজাগ থাকতে রোহিঙ্গাদের পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে সতর্ক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে এবং ক্যাম্পে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছে রোহিঙ্গারা।
এ বিষয়ে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হক একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমরাও একই ধরনের তথ্য পেয়েছি। কোনোভাবে যেন দুষ্কৃতকারীরা ক্যাম্পে নাশকতা করতে না পারে এ জন্য সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
তিনি বলেন, ক্যাম্প থেকে সন্ত্রাসী নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। এরমধ্যে মুহিবুল্লাহ হত্যায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির কাছ থেকে খুনিদের ব্যাপারে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা ও রোহিঙ্গা যুবক হামিদ হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করতে আরসার সন্ত্রাসীদের গোপন বৈঠক করার পরই আমাদের সামাজিক গ্রুপগুলোতে তা প্রচার করে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে রাতে ক্যাম্পে পাহারা বসিয়েছেন। একই সঙ্গে আরসার সন্ত্রাসীদের দেখলে ধরে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা নবী উল আলম জানান, রোহিঙ্গাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক গ্রুপ থেকে জেনেছি, সন্ত্রাসীরা রাতের যে কোনো সময় ক্যাম্পে আগুন লাগানোর চেষ্টা করতে পারে।
তারা আরও জানান, বিষয়টি জানার পর আমরাও বিভিন্ন সামাজিক গ্রুপ ও ফোন করে ক্যাম্পে থাকা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের জানিয়েছি, সবাই এখন সতর্ক। এছাড়া আমরা রাতে ১০ জন করে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে ক্যাম্পের বিভিন্ন পয়েন্টে পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
একই কথা জানান কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা বারাক হোসেনও।
এদিকে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে। খুনি ও তাদের নেপথ্য মদদদাতাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে।
মুহিবুল্লাহর খুনিরা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের আশ্রয়ে!
মুহিবুল্লাহর খুনিরা টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা নয়াপড়া মুছনি ক্যাম্পে স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপের আশ্রয়ে থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুতিয়া গ্রুপ ও গিয়াস বাহিনী নামের এ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো এমন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মুহিবুল্লাহর খুনি হিসাবে আলোচনায় আসা আরসার সক্রিয় সদস্য হামিদ হোসেন প্রকাশ সোনা মিয়া, শফিউল আলম, কেফায়েত উল্লাহ, কোরবান আলি, ইলিয়াস মাঝি মাস্টার হামিদ ও রহিমসহ আরও কয়েকজনকে মুছনি ক্যাম্পের পাহাড়ি এলাকায় দেখা গেছে।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, পুতিয়া বাহিনী ও গিয়াস বাহিনীর আশ্রয়ে রয়েছে মুহিবুল্লাহর খুনিরা। আরসাকে সঙ্গে নিয়ে বহু বছর ধরে পুতিয়া ও গিয়াস বাহিনী ইয়াবা ও অপহরণ-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তথ্য সত্য হলে সেখানে অভিযান চালানো হবে।