এম মোয়াজ্জেম হোসেন, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী। প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে এলাকার সাধারণ ভোটারদের জানান দিতে নেতাকর্মীদের সাথে ঘরোয়া বৈঠকের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তারা। এদিকে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বিএনপির কোনো প্রার্থীকে এখনো মাঠে তৎপর হতে দেখা যায়নি।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়ার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১৩টিতে নির্বাচন আয়োজনের সময় হয়েছে। স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ও মরিয়ম নগর ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ১৩টি ইউনিয়নে খুব শীঘ্রই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচন হতে যাওয়া ইউনিয়নগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যে যার যার মত করে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে সক্রিয় আছেন।
১নং রাজানগর ইউনিয়ন : রাজানগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। উক্ত ইউনিয়নে আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন তিনি। জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি’র মাধ্যমে আমার ইউনিয়নে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছি। বিভিন্ন খাতে উন্নয়নে এগিয়ে থাকায় টানা ৩ বার উপজেলার শ্রেষ্ঠ ও সফল চেয়ারম্যানের সম্মাননা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের জনগণ আমার দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। এ কারণে ফের রাজানগর ইউনিয়নে আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে তারা দেখতে চান। তাই আমি দলের কাছে আর পাঁচটি বছর চাইবো। আর পাঁচটি বছর হাতে পেলে আমার ইউনিয়নকে আমি উপজেলার মডেল ইউনিয়নে পরিণত করবো এবং শিয়ালবুক্কা সেতু ও রাজঘাটা সেতু নির্মাণ করবো ইনশাআল্লাহ।’
এদিকে রাজানগর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনজু। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমও প্রার্থী হিসেবে দুর্বল নন। এলাকার মানুষের কাছে যেমন তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তেমনি দলেও তার অবস্থান ফেলনা নয়-এমন অভিমত সচেতন মহলের।
২নং হোসনাবাদ ইউনিয়ন : হোসনাবাদ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য; উপজেলা যুবলীগের সাবেক সহ সভাপতি। তিনি এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী দানু মিয়া, সধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক অসীম বরণ সুশীল, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এডভোকেট নুরুল আলম।
হোসনাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এডভোকেট নুরুল আলম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি আমার অভিভাবক তথ্যমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে একজন ভালো ছাত্র হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। নামের আগে এডভোকেট লেখার যোগ্যতা অর্জন করেছি। এ অর্জনের পেছনে আমার অভিভাবক মন্ত্রী মহোদয়েরই অবদান। তিনি যদি আমার পড়াশোনার খোঁজখবর না রাখতেন তবে হয়তো আমি আজকের অবস্থানে আসতাম না। এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আমি ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবো। তিনি যা ভালো মনে করবেন আমি তাতেই সন্তুষ্ট থাকব।’
৫নং পারুয়া ইউনিয়ন : পারুয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জাহেদুর রহমান তালুকদার উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি এবারও শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার পাশাপাশি মনোনয়ন চাইছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি একতেহার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ তালুকদার। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জহুরুল ইসলাম মনোনয়ন চাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।
৬নং পোমরা ইউনিয়ন : পোমরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন। বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনের জামাতা কুতুব চৌধুরী এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। মনোনয়ন আলোচনায় আছেন সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ফজলুল কবির গিয়াস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদুল আলম চৌধুরী আইয়ুব, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দুল আলম তালুকদার।
বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা চারবারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের চারবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করা জহির আহমদ চৌধুরীও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। বার্ধক্যের বিষয়টি সামনে না থাকলে তিনিই হয়তো মনোনয়ন দৌড়ে চূড়ান্তভাবে এগিয়ে থাকতেন– এমনই আলোচনা স্থানীয় সচেতনজনদের।
৭নং বেতাগী ইউনিয়ন : বেতাগী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নূর কুতুবুল আলম; তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এর আগে তিনি বেতাগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে টানা ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তার দৃঢ় আশাবাদ, এবারও তিনি মনোনয়ন পাবেন। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন চাইছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আবছার তালুকদার, থানা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন, বর্তমান ইউপি সদস্য সৈয়দ আবুল মনছুর ও মুস্তাফিজুর রহমান।
৮নং সরফভাটা ইউনিয়ন : সরফভাটা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। এবারও তিনি মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। এ প্রসঙ্গে শেখ ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘যখন ৮ম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম, তখন থেকেই আমি দলের সাথে সম্পৃক্ত। রাজপথে সক্রিয় থাকায় একাধিকবার জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর রাঙ্গুনিয়ার অভিভাবক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মহোদয়ের হাত ধরে আমার ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন হয়েছে। এবারও আমি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে মনোনয়ন চাইবো, যাতে আমার ইউনিয়নের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারি। তিনি যদি আমাকে ভালো মনে করেন তাহলে আমি নির্বাচন করবো। আর যদি আমার চেয়ে ভালো কাউকে তিনি মনোনয়ন দেন তাহলে আমি তার জন্যই মাঠে কাজ করবো। এ বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সিদ্ধান্তই আমি খুশি মনে মেনে নিব।’
সরফভাটা ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আরও আলোচনায় আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুল ইসলাম সরফী, উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বাদশা, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুস, সাবেক ছাত্রনেতা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু তাহের।
নিজাম উদ্দিন বাদশা একুশে পত্রিকাকে বলেন, রাজনীতির জন্য জীবনে বহুবার ঝুঁকি নিয়েছি। বিএনপি-জামায়াতের আমলে জেল-জুলুম, হুলিয়া সহ্য করতে হয়েছে বারবার। তবুও আদর্শিক প্রশ্নে বিন্দুমাত্র পিছপা হইনি। আমার প্রাণের অধিক প্রিয়, রাঙ্গুনিয়ার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান ড. হাছান মাহমুদের হাতকে শক্তিশালী করতে নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে আমি প্রস্তুত। রাজনীতি যাদের ধ্যানজ্ঞান, তাদের মনের ঈশান কোণে জীবনে অন্তত একবার জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছে বা বাসনা থাকে। আমিও সেই ইচ্ছের সলতেটি জ্বালিয়ে রেখেছি। আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ যদি আমাকে উপযুক্ত মনে করেন তাহলে অন্তত একটিবার সরফভাটা ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চাই। রাজনীতিতে আমার জুনিয়র কিংবা সমসাময়িকরাও ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সে হিসেবে এবার মনোনয়ন পাবো বলে আশা করছি। বলেন নিজাম উদ্দিন বাদশা।
এদিকে নিজ থেকে মনোনয়ন না চাইলেও সরফভাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবীণ শিক্ষাবিদ সজ্জন পুরুষ আবদুর রউফ মাস্টারকে নিয়েও আলোচনা আছে সচেতন মহলে।
৯নং শিলক ইউনিয়ন : শিলক ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তালুকদার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক; এবারও প্রার্থী হতে চান তিনি।
জানতে চাইলে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তালুকদার একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের মধ্যে আমার ইউনিয়ন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে রয়েছে। আর এ কাজে আমি সফল হয়েছি মন্ত্রী মহোদয়ের একান্ত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতার কারণে।’ তিনি বলেন, ‘শিলক ইউনিয়নের জনগণ ফের আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান। দলের কাছে ও মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আমি অনুরোধ জানাবো আগামী ইউপি নির্বাচনে যেন আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে ফের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়।’
এদিকে শিলক ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় আছেন উত্তর জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান এম এ মান্নান চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য শহীদুল্লাহ চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাসেম মাস্টার, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বাদশা।
স্থানীয়ভাবে তরুণ তুর্কী ও প্রতিবাদের উচ্চ কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত মাহমুদুল হাসান বাদশা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাস্টার ট্রেইনার। বয়সের তুলনায় রাজনীতি ও সমাজকল্যাণে অগ্রসর ও এলাকাবাসীর প্রিয় এ তরুণ মনোনয়ন আলোচনায় ইতোমধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন।
১০নং পদুয়া ইউনিয়ন : পদুয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম কবির তালুকদার; তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রবীণ এ আওয়ামী লীগ নেতার ব্যাপারে স্থানীয়দের কোনো অসন্তোষ না থাকলেও বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি এবার মনোনয়ন চাইবেন না বলে জানা গেছে। তবে তার সন্তান জাহেদ হাছান তালুকদার মনোনয়ন লাভের আশায় পোস্টার, ব্যানার সাঁটিয়ে গত একবছর ধরে সরব আছেন ইউনিয়নজুড়ে।
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক নাসির উদ্দিন সেলিম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, সাবেক সেনা সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের প্রভাবশালী সদস্য মো. তারেক সোহেল মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
গেল ৪ বছর আগে অবসরে আসার পর তথ্যমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে নানামুখী প্রচেষ্টার পাশাপাশি এলাকায় শিক্ষার প্রসার, সমাজসেবা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জনকল্যাণ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত অনুদান প্রদানসহ নানা ইতিবাচক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে নিজের জনবান্ধব মানসিকতা ও এলাকাপ্রীতি প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে চলেছেন তারেক সোহেল। মধ্যরাতেও যে কোনো বিপদ-আপদে এলাকার মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন জনসেবা করতে হলে নিজস্ব বিলাসব্যসন তুচ্ছ করতে হয়। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ঠিকাদারি ব্যবসা, সেই সাথে মৎস্যখামার গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে ইতিমধ্যে সফল ব্যবসায়ী হিসেবেও তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন।
এদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইউনিয়নের তিনবারের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু জাফরও মনোনয়ন-ইস্যুতে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন। প্রবীণ এই নেতার আগ্রহ খুব একটা না থাকলেও দলীয় হাইকমান্ড এবার তাকেই বিবেচনা করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
১১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন : চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ইদ্রিস আজগর। তিনি টানা দুইবারের চেয়ারম্যান।
এ প্রসঙ্গে ইদ্রিস আজগর একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘১৯৯৪ সালে রাঙ্গুনিয়া কলেজ মাঠে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুল তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগে যোগদান করি। এরপর দায়িত্ব পাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে। ১৯৯৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ২০ বছর একাধারে উল্লেখিত পদে বহাল ছিলাম। ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। সে থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করি। পরে ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। ২০০৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী মহোদয়ের হাত ধরে চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তিনবার শ্রেষ্ঠ ও সফল চেয়ারম্যান হিসেবে সম্মাননা পেয়েছি। এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবো। আশা করছি আগামী নির্বাচনেও জয়ী হয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি মাদকমুক্ত ইউনিয়নে পরিণত করবো।’
এদিকে চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন লাভের দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই সাবেক ছাত্রনেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবু তাহেরও।
তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘১৯৯৩ সালে ক্লাস নাইনে পড়াকালীন সময়ে চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের কাটাখালি থেকে শুরু করে লিচুবাগান পর্যন্ত স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের নিয়ে গঠন করি শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ এবং এ সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ২০০৩ সাল পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে দায়িত্ব পালন করি। ২০০৩ সালে বিপুল ভোটে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হই। রাজপথে সক্রিয় থাকার কারণে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের দেওয়া হত্যা ও ডাকাতিসহ ২৮টিরও অধিক মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছি। ৬ বার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মিথ্যা মামলায় জেল খাটতে হয়েছে। এমনকি বড় ভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে পারিনি। বিএনপির লোকজন ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলায় প্লাস্টিকের বদনায় পানি পান করার দিনও গেছে আমার পরিবারের সদস্যদের। বিএনপি সরকারের ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাকালীন সময়ে অধিকাংশ রাত গেছে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে, কবরস্থান ও হিন্দুদের শ্মশানে।’
ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের আশা প্রকাশ করে আবু তাহের বলেন, ‘আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমার অভিভাবক তথ্যমন্ত্রী মহোদয়। উনার নির্দেশে বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কখনো আমার কাজে কিংবা আমার চলাফেরায় মন্ত্রী মহোদয় কষ্ট পাবেন বা আমার উপর রাগ করবেন এমন কাজ থেকে আমি এখনও পর্যন্ত বিরত আছি। ক্ষমতার লোভ লালসা আগেও ছিলো না, এখনো নেই। গতবার মন্ত্রী মহোদয় বলেছিলেন, আরেকটু বয়স হোক। এবার মন্ত্রী মহোদয় যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মাথা পেতে নেব।’
এছাড়া যুবলীগ নেতা ও সংগঠক ইলিয়াস কাঞ্চন চৌধুরীও আছেন মনোনয়ন-আলোচনায়।
১২ নং কোদালা ইউনিয়ন : কোদালা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুম তালুকদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি; তিনি এবারও ‘নৌকার মাঝি’ হওয়ার দৌঁড়ে আছেন। জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই মেনে নেব।’
এদিকে কোদালা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কাউসার নূর লিটন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউল আলম তালুকদার।
১৩নং ইসলামপুর ইউনিয়ন : ইসলামপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী মিল্টন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক; তিনি এবারও আলোচনায় আছেন। তার পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজউদ্দীন চৌধুরী, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক কামাল উদ্দিন চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা ও ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন তালুকদার।
১৪নং দক্ষিণ রাজানগর : দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আহমদ সৈয়দ তালুকদার এবারও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। এখানে আরও যারা মনোনয়ন চাইছেন তারা হলেন- সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এনামুল হক মিয়া, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির রোকন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ওমর গণি চৌধুরী কাঞ্চন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান সাধন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আবু বকর চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাস্টার ইসকান্দর মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলমগীর হোসেন তালুকদার বাবু, কৃষি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা এস এম ইদ্রিস।
১৫ নং লালানগর ইউনিয়ন : লালানগর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মীর তৌহিদুল ইসলাম কাঞ্চন; তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তার পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক জসিম উদ্দিন তালুকদার, আবদুল মান্নান তালুকদার, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা ও হোছনাবাদ-লালানগর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সিরাজুল করিম বিপ্লব ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী আতাউর রহমান।
মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক জসিম উদ্দিন তালুকদার একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চাইবো। মনোনয়ন পেলে মন্ত্রী মহোদয়ের সহায়তায় লালানগর ইউনিয়ন পরিষদকে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবো।’
তবে করোনাকালীন নানা উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় থাকা তারুণ্যদীপ্ত সিরাজুল করিম বিপ্লবও গুরুত্বপূর্ণ মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনার মূলে আছেন।
এদিকে অসুস্থ থাকায় অর্ধশতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতামত জানা যায়নি। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল মোনাফ সিকদার একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রার্থী নির্ধারণে ৮ জনের একটি কমিটি গঠন করা হবে, আর সে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ৩ জনের নাম পাঠানো হবে জেলায়।’
তিনি বলেন, ‘যদি ৩ জনের অধিক নাম পাঠাতে হয় সেক্ষেত্রে ইউনিয়ন ভিত্তিক ভোটের মাধ্যমে যারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হবে সেই ৩ জনের নাম পাঠানো হবে। আর জেলা থেকেই বাছাই হবে কে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। দলীয় কাজে যিনি সক্রিয় এবং শিক্ষা-দীক্ষায় যিনি এগিয়ে এবং একটি ইউনিয়ন পরিচালনার ক্ষেত্রে যিনি অধিক যোগ্যতা রাখেন এমন ব্যক্তিদেরই বাছাই করা হবে।’
তবে স্থানীয় রাজনীতি-সচেতনদের মতে, দলে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত ব্যক্তিরা নৌকার মনোনয়ন পাবেন না। বিভিন্ন কারণে অন্য দলের লোকজন আওয়ামী লীগে এসে হয়তো পদ-পদবী পেয়েছেন, ব্যবসাপাতি গড়ে তুলেছেন। কিন্তু কোনোভাবেই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবেন না। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ কোনো আপোস করবেন না বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।