রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

চট্টগ্রামের গোপন রঙ্গ, কী হচ্ছে সেখানে?

প্রকাশিতঃ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩:১৭ অপরাহ্ন

একুশে প্রতিবেদক : গেলো সপ্তাহে ‘চট্টগ্রামে নামীদামী হোটেলে ‘যৌনতা’ বিকিকিনি নিয়ন্ত্রণে ৬ নারী!’ শিরোনামে একুশে পত্রিকার অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক ধাক্কা লাগে চট্টগ্রাম নগরীর হোটেলভিত্তিক যৌনতা বিকিকিনিতে। প্রশাসনও নড়েচড়ে বসে তাতে। ফলে বেড়েছে নজরদারি।

কিন্তু এই নজরদারির মাঝেও থেমে নেই ‘শরীরবাণিজ্য’। তবে এক্ষেত্রে পালন করা হচ্ছে কঠোর গোপনীয়তা। সমূহবিপদ এড়াতে একেবারে রেখেঢেকে, খুব সন্তর্পণে চালানো হচ্ছে নিষিদ্ধ জগতের এই ব্যবসা। একুশে পত্রিকার গভীর অনুসন্ধানে মিলেছে এসব তথ্য।

অনুসন্ধান মতে, সংবাদ প্রকাশের পর নারী সাপ্লাইয়ার ৬ নিয়ন্ত্রকই কৌশল পাল্টিয়েছেন। অপরিচিত কোনো নাম্বারের ফোন তারা এখন আর ধরছেন না। খুব ঘনিষ্ঠ, বিশ্বস্থ খদ্দেরদের তারা ‘অ্যালাউ’ করছেন। ফলে রমরমা ‘শরীরবাণিজ্যে’ পড়েছে ভাটা। এ অবস্থায় নগরের হোটেলগুলোও সেই ৬ নারী থেকে আগের মতো ‘যুগল কাস্টমার’ পাচ্ছে না।

জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে হোটেলগুলো ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা পূর্বপরিচিতের ‘সেক্সপার্টনারদের’ হোটেলে জায়গা করে দেওয়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে বেশি উদারতা দেখাচ্ছে। নগরে যারা ৬ নারী নিয়ন্ত্রকের পুরোনো বা দীর্ঘদিনের নিয়মিত কাস্টমার, তারা এমনিতেই ৬ নারীর কাছে দ্বারস্থ কম হন। অতীতে তাদের মধ্যস্থতায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব তরুণীকে তারা ‘কাছে’ পেয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে স্বস্তি ও তৃপ্তিদায়ক মনে হয়েছে তাদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে নিয়েছেন বেশিরভাগ যৌনলিপ্সু পুরুষ।

পরবর্তীতে তারাই ওয়ান টু ওয়ান কন্টাক্টের মাধ্যমে মিলিত হচ্ছেন নগরের হোটেল বা নির্জন বাসাবাড়িতে। একই নারীর সঙ্গে বারবার মিলিত হওয়ার ফলে কখনো অনীহা এসে গেলে তখন ওই ৬ নারীর কোনো একজনের সঙ্গে কন্টাক্ট করে নতুন ‘কালেকশান’ খোঁজেন তারা। অবশ্য নতুন ‘কালেকশান’ হলে সাপ্লাইয়াররা নিজ থেকেও নতুন নতুন, স্বল্পবয়সী ললনাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ব্যাকুল পুরুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়ে দেন আপডেট তথ্য।

নগরের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে বসবাসরত নগরের ‘শরীরবাণিজ্যের’ অন্যতম নিয়ন্ত্রক ‘সা’ আদ্যাক্ষরের সাপ্লাইয়ার তার পরিচিত এক খদ্দেরের সঙ্গে টেলিফোন-আলাপে বলতে শোনা যায়, যে মেয়ে একবার কাপড় খুলে টাকা কামানো শিখে যায়, পৃথিবীতে কেউ আর তাকে থামাতে পারে না। সেই মেয়েরাই আবার বান্ধবী, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত মেয়েদের বিলাসী জীবনের লোভ দেখিয়ে কৌশলে নিয়ে আসছে তাদের জগতে। ফলে চট্টগ্রামের এই জগৎটা দিন দিন বড় হচ্ছে।’

সেই কথার সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে একুশে পত্রিকা। তাতে দেখা যায়, মডেলিংয়ের ফাঁদে পড়ে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী থাকাকালেই আধুনিক ‘যৌনবাজারে’ অভিষেক ঘটে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের কিশোরীর। অসম্ভব বিলাসী জীবনযাপনকারী সেদিনের কিশোরী এখন কলেজ ছাত্রী। কালের বিবর্তনে তার হাত ধরেই এই জগতে পা দিয়েছে তার বেশ কয়েকজন সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব। একজন তো তার আপন ভাইয়ের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রেমিকাকেও সাময়িক স্বচ্ছলতার প্রলোভনে এই জগতে নিয়ে এসেছিল ‘পার্টটাইমার’ হিসেবে।

অনুসন্ধান মতে, চট্টগ্রামের এক তরুণ ব্যবসায়ী ‘জ’ আদ্যাক্ষরের ওই নারী সাপ্লাইয়ারের নিয়মিত গ্রাহক। সেই সাপ্লাইয়ারের সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীকে ফোনে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আপা, আপনি নতুন জিনিস দেন, ঢাকায় যেরকম দিয়েছেন ঠিক সেরকম।’ সাপ্লাইয়ার বলছেন, ‘ঢাকারটা ভাই ঢাকা। এটা তো আর ঢাকা নয়। আপনার কাছে যে ছবিগুলো পাঠিয়েছি এই যে ১০-১৫ জন, আপাতত এর বেশি কালেকশান আমার হাতে নেই।’ একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ধরে ব্যবসায়ী বলছেন, ‘ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েটা দেন না।’

সাপ্লাইয়ারের জবাব, ‘আপনি বলার পর তাকে ৮-১০ বার ফোন দিয়েছি। কোনো কারণে সে হয়তো ফোন ধরছিল না। পরে অন্য নাম্বার থেকে ফোন দিলে সে জানায় তার ‘বয়ফ্রেন্ডের’ সঙ্গে নাকি তার একটু ঝামেলা যাচ্ছে। কয়েকটা দিন পর সে সময় দিবে বলেছে।’ এরপর সাপ্লাইয়ারকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাই আমার উপর আস্থা রাখেন। আমি আপনাকে খারাপ জিনিস দেবো না। আপনাকে আজ এমন একটা জিনিস দেবো, ব্যবহার করে দেখেন, মজা পাবেন।’

সূত্র মতে, ওই ব্যবসায়ী নিজের পথ ধরে তার যৌনবিলাসী বন্ধুদেরও মাঝে মাঝে তৃপ্ত করার চেষ্টা করেন। কখনো কখনো তাদের নিয়ে যান অপেক্ষাকৃত নিরাপদ যৌনডেরায়। এই দলে আছে একজন চিকিৎসকও। তরুণ ওই চিকিৎসকের সঙ্গে ‘স্বাদ’ বা নিয়মিত ‘রুচি’ বিনিময় হয় আলোচ্য ব্যবসায়ীর। ব্যবসায়ী পাঠান চিকিৎসকের কাছে, চিকিৎসক পাঠান ব্যবসায়ীর কাছে। যৌথভাবেও ‘বিশেষ’ সময় কাটান তারা।

জানা যায়, একবার ওই চিকিৎসক ১৭ বছর বয়সী এক তরুণীকে পাঠান ব্যবসায়ীর কাছে। বলেন, ‘কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ৫-৭ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েন। পড়ালেখা করে। অভাবী মেয়ে। আপনিও আনন্দ পেলেন, তারও একটু উপকার হলো।’ টেলিফোন-কন্টাক্টে শহরতলী থেকে আসা ওই তরুণীকে নিয়ে দুই হাজার টাকা দামের নগরের একটি হোটেলে ওঠেন ব্যবসায়ী। ঘণ্টাখানেক সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ীর সঙ্গে দ্রুত সখ্যতা হয়ে যায় কথিত অভাবী তরুণীর। একপর্যায়ে তরুণী বললেন, আপনি একঘণ্টায় ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। আর আপনার ডাক্তার বন্ধুটি কিছুদিন আগে তার এক বন্ধুর বাসায় রাতভর ঝড় তুলে দিলেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে এই কথাটি ওই ব্যবসায়ী তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে শেয়ার করেন।

এদিকে, নগরের ৫-৬ জনের একটি ধনাঢ্য গ্রুপ আছে, যারা নগরের একটি অভিজাত হোটেলের নিয়মিত কাস্টমার। সেই হোটেলে কয়দিন পরপর তারা গ্রুপ-সেক্সের আসর বসান। কখনো পুরোদিন বা পুরোরাত চলে সেই আসর। সেই আসরের নেতৃত্বে আছে ‘ল’ আদ্যাক্ষরের এক ব্যবসায়ী। তার ৮-১০ সদস্য বিশিষ্ট সেই গ্রুপে আছে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, মোবাইল ব্যবসায়ী, মাঝারি মানের বিএনপি নেতা ও ‘র’ আদ্যাক্ষরের এক তরুণ ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে বন্ধুতার সুবাদে সে আসরে মাঝে মাঝে অংশ নেন ওয়ার্ড পর্যায়ের এক যুবলীগ নেতাও। কখনো অতিথি হিসেবেও নতুন কাউকে সেখানে নিয়ে গিয়ে ‘এন্টারটেইন’ করেন তারা।

সেই আসরে একজনকেই নানাভাবে তৃপ্ত করছে ২ থেকে ৩ তরুণী। আবার পাশের নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে একজন তরুণীই গ্রুপ সেক্সের মাধ্যমে একাধিক পুরুষকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী তৃপ্ত করার চেষ্টা করছে। আসরের মধ্যমণি ব্যবসায়ীর ‘মজাপর্ব’ শেষ হলে এবার তিনি পর্যায়ক্রমে ফোন করে ডেকে আনেন তার অপরাপর গ্রুপ-সতীর্থদের। এভাবে দেখা যায়, পুরো দিন বা রাতে অন্তত ৮-১০ জন পুরুষের সঙ্গে মিলিত হতে হচ্ছে ওই ২-৩ জন তরুণীকে। কোনো কোনো পুরুষ আবার ‘স্বাদ’ পাল্টাতে মিলিত হচ্ছে প্রত্যেক তরুণীর সঙ্গে। দীর্ঘসময় ধরে মদ-নারীর যৌথ ‘স্বাদ’-এর সুযোগ দেওয়ার বিনিময়ে গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা করে অনায়াসে তুলে নেন তরুণ ব্যবসায়ী।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিজাত সেই হোটেলটির ৫-৬ তলার বড় একটি কক্ষে বসানো হয় রমরমা দেহ ও মদের আসর। সে আসরের বেশিরভাগ সময়ের আয়োজক ‘ল’ আদ্যাক্ষরের ওই ব্যবসায়ী। আসরে আগে থেকে নিয়ে আসা হয় ১৫ থেকে ২০ বছরের ২-৩ জন তরুণী, যারা বিভিন্ন মাধ্যমের শিক্ষার্থী। বিদেশি মদের সাথে সেখানে চলে গ্রুপ-সেক্স, বিদেশি সেক্স।

জানা যায়, সেই আসরে একজনকেই নানাভাবে তৃপ্ত করছে ২ থেকে ৩ তরুণী। আবার পাশের নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে একজন তরুণীই গ্রুপ সেক্সের মাধ্যমে একাধিক পুরুষকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী তৃপ্ত করার চেষ্টা করছে। আসরের মধ্যমণি ব্যবসায়ীর ‘মজাপর্ব’ শেষ হলে এবার তিনি পর্যায়ক্রমে ফোন করে ডেকে আনেন তার অপরাপর গ্রুপ-সতীর্থদের।

এভাবে দেখা যায়, পুরো দিন বা রাতে অন্তত ৮-১০ জন পুরুষের সঙ্গে মিলিত হতে হচ্ছে ওই ২-৩ জন তরুণীকে। কোনো কোনো পুরুষ আবার ‘স্বাদ’ পাল্টাতে মিলিত হচ্ছে প্রত্যেক তরুণীর সঙ্গে। দীর্ঘসময় ধরে মদ-নারীর যৌথ ‘স্বাদ’-এর সুযোগ দেওয়ার বিনিময়ে গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা করে অনায়াসে তুলে নেন তরুণ ব্যবসায়ী। এভাবে ৮-১০ জনের কাছ থেকে দেড়-দুই লাখ টাকা নেওয়ার পর ৩ তরুণীকে প্রদান করা হয় ২০ হাজার টাকা করে ৬০ হাজার টাকা। হোটেল ভাড়া ২০ হাজার টাকা। আর মদের বিল মেটাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা। এরপর দেখা গেলো, এই পন্থায় আয়োজক ব্যবসায়ীর হাতে থাকছে অন্তত ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। অর্থাৎ একদিবস বা রাতেই কৌশলে আমোদ-ফূর্তির আসর বসিয়ে ওই ব্যবসায়ী উপার্জন করে নিচ্ছেন লাখ টাকা। সপ্তাহে তিনি অন্তত এ ধরনের ৩-৪টা আসরের আয়োজন করেন বলে তথ্য রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে নগরের একটি মহিলা কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রীকে (যিনি ৪-৫ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত) ফোন দিয়ে অভিজাত হোটেলটিতে নিয়ে আসে গ্রুপটি। ১২ বছরের এক কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে আসেন ওই ছাত্রী। গ্রুপের লোকজনকে কিশোরীকে প্রতিবেশি পরিচয় দেন ওই ছাত্রী। এরপর ৩-৪ জনের সঙ্গে ওই ছাত্রী নির্ধারিত কক্ষে গ্রুপ-সেক্সে যুক্ত হয়ে যান। এসময় কিশোরী মেয়েটিকে গ্রুপের এক সদস্য নিয়ে যান অন্য কক্ষে। পাষণ্ড যুবকের উন্মত্ততার ধকল সইতে না পেরে কিশোরী মেয়েটির একপর্যায়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে।

এরপর তড়িঘড়ি করে গ্রুপের সবাই মিলে কিশোরীর চিকিৎসা খরচসহ সর্বমোট ৩০ হাজার টাকা ওই ছাত্রীর হাতে তুলে দিয়ে কোনোরকমে বিদায় দিয়ে সেদিন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। পরবর্তীতে রক্তাক্ত ওই কিশোরীর চিকিৎসা কোথায় হয়েছে, বা তিনি এখন কেমন আছেন- সে খবর তারা আর রাখেননি। জানা যায়, ঢাকাইয়া অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী ও মডেল এনেও আসর বসান গ্রুপটি। সেক্ষেত্রে বেড়ে যায় টাকার পরিমাণ।