আমি কেন পরিমনির পক্ষে


রফিকুল আনোয়ার রাসেল :

আমি কেন পরিমনি’র পক্ষে? ১
আসলে আমি সিনেমার লোক, তাই সিনেমার অবস্থান থেকে বলছি। আমি জানি না, সিনেমা জগতকে কেন সবাই এতো মসজিদ-মন্দির টাইপ জায়গা ভাবেন? পৃথিবীর কেউ কি বলেছে, চলচ্চিত্রের জগত পুতপবিত্র স্থান? এখানে মেধাবী, বৈষ্ণব, পরহেজগার লোকেরা সর্বত্র বিরাজমান? একজন নায়ক-নায়িকা-প্রযোজক-পরিচালক যদি শেষ বয়সে ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, সে অন্যকথা। কিন্তু তাই বলে পৃথিবীর কোথাও পরহেজগার বা হরে কৃষ্ণ টাইপ কোন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আছে বলে আমি জানি না।

শুধু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কেন, কোন ইন্ডাস্ট্রিকেই পূত পবিত্র স্থান বলে ভাবার কারণ নেই। দুর্নীতি, ঘুষ, হিংসা, হত্যা, মামলা, খুন-জখম, ডাকাতি, গুম, উচ্ছেদ, প্রতিযোগিতা– এসব কোথায় নাই? এই যে বড় বড় টেলকো কোম্পানি- সবারই ট্যাক্স, ডিউটি ফাঁকি, এমনকি কল চার্জ চুরির অভিযোগ আছে। পেপারে আসে না, কারণ বিজ্ঞাপন দেয় তারা। আধুনিক রিয়াল এস্টেট ব্যবসায়ীদের অনেককে আগেকার দিনের চর দখলের ডাকাত ভাবতে পারেন। গ্রুপ অফ কোম্পানিজ, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি বা অন্য ফ্যাক্টরি ব্যবসায় লাশ পুড়িয়ে গুম করার, পক্ষ-বিপক্ষকে ম্যানেজ করা– এসব কি হয় না? এখানে কোন কোন সামাজিক-ধার্মিক-সাংস্কৃতিক নৈতিকতা মানা হয়ে থাকে? আর এসব মালিকদের কি বিচার হয়, না ধরা হয়?

পঞ্চাশটা মানুষকে পুড়িয়ে ফেলা আসামিকেও তো এতো বিশাল নাটক করে ধরতে দেখা যায় না। তাহলে, পরিমনি কি তার চেয়ে বেশি ভয়াবহ অপরাধ করে ফেললো? শোবিজ জগতে গ্ল্যমার, টাকা, লাক্সারি, মিডিয়া হাইপ, এসবের সার্বক্ষণিক রঙের প্রাধান্য। মুম্বাই স্টেডিয়ামে শাহরুখ খানের এক মারামারিতে জনৈক রাজনীতিবিদ বলছিলেন, ‘বিপিএল খেলা হচ্ছে সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখা কাহিনীর মতো। নায়ক আছে, নায়িকা আছে, ভিলেইন আছে, একটা মারামারির দরকার ছিল। সেটাও হয়ে গেলো।’

আমি কেন পরিমনি’র পক্ষে? ২
এখন পর্যন্ত তিনি মদ, নানা মাদক টাইপ যে কথাবার্তা গুলো দেখছি, তাতে বড় কোন অপরাধের কিছু দেখছি না। পর্নো বা অশ্লীল কিছু আছে কিনা তাও প্রমাণিত না। আবার দেখা যাচ্ছে, গরীব থেকে বড়লোক, অবৈধ পথে আয়, কোটি টাকার ফ্ল্যাট, মিলিয়ন টাকার গাড়ি, লাখ টাকার পোশাক, উচ্ছৃঙ্খল জীবন, চলচ্চিত্রে নগ্নতা দেখিয়েছে, নিজেই পর্ন করেছে, এসব কি ধরনের মানদণ্ডে অপরাধ, যার কারণে বিশাল বহর নিয়ে, মিডিয়া হাইপ তুলে এই গ্রেফতার করতে হবে– বুঝলাম না। তবে, কুখ্যাত সন্ত্রাসী ‘ওসামা বন লাদেন’কে ধরতেও মনে হয় এই হইচই করতে দেখি নাই। যাই হোক, দেখা যাক তার কি কি অপরাধ যুক্ত হয় ভবিষ্যতে?

আমি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মূলধারার বা বিকল্প ধারার কেউ না। বাণিজ্যিক বা শিল্পসম্মত সিনেমার লোকও না। পরিমনি আমার সিনেমা বা কাজে কোথাও ছিলেন না, সামনে থাকার সম্ভাবনা নাই। এও বলতে পারছি না, পরিমনি কোন অপরাধ করেনি। তার জীবনযাপন শুধুমাত্র একজন নায়িকার জীবনযাপনের চেয়ে অতিরিক্ত। সে অনেকের চেয়ে এগিয়ে। তার অর্থ, যশ, খ্যাতি, লাইফস্টাইল- এসব বর্তমান সিনেমা অবস্থার বাস্তবতার সাথে অসংগতিপূর্ণ। সে ভাতের নেশায় এই রঙিন জগতে এসেছে, তার স্বপ্ন ছিল সে বড়লোক হবে, তার কোটি টাকা হবে, সে বৈধ-অবৈধ কিছু বিচার করে নাই। তার শিক্ষার মধ্যে লোভ সংবরণ করা নাই, কিন্তু কারই বা আছে? তার ভুল হচ্ছে, যারা তাকে ফ্রাংকেনস্টাইন বানাইছে, সে তাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেছে। কিন্তু এটা তো করা যায় না। তার পতন অনিবার্য। হয়তো তার পক্ষে ক্ষমতাবান কেউ ছিল, যাদের উপর সে ভরসা করেছিল। এখন তারা পরিমনির পতন নিয়ে ভাবিত না।

সে মদ খাইছে, বোরকা পড়ে না, নামাজ কালাম পড়েন নাই, নানা লোকের সাথে প্রেম করছে, বড়লোকের সাথে নষ্টামি করেছে, সিনেমায় বেপর্দা হইছে- এসব পাপকাজের জন্য তাকে আল্লাহ পরকালে শাস্তি দেবেন বা দেবেন না, সে অন্য ব্যাপার। এসব তো আর বাংলাদেশ পেনালকোড ভুক্ত কোন অপরাধ না। আমি উনার পক্ষে আছি, যতক্ষণ উনি বাংলাদেশ পেনাল কোডভুক্ত মারাত্মক কোন অপরাধের সাথে যুক্ত হন নাই। আর যদি হয়ে থাকেন, তাহলে তার সাথে উপরে-নিচে, সামনে-পেছনে যারা যারা জড়িত তাদেরকেও আমরা চিনতে চাই। গ্রাম থেকে পিতামাতাহীন দরিদ্র মেয়ের পক্ষে ঢাকা শহরে এসে, দশ বছরে কারো সহযোগিতা ছাড়া ভয়ঙ্কর অপরাধ করে বেড়ানো সম্ভব না, এটা এদেশের গরু-ছাগলও জানে। ধরলাম, সে কুখ্যাত অপরাধী কিন্তু সেটা সে কিভাবে কেন হয়ে গেলো? ইতালির সিনেমা ‘মেলিনা’ নিশ্চয় মনে আছে? থাকবেই কারণ, মনিকা বেলুচি অভিনেত্রী বলে কথা। সেই মেলিনা কিভাবে জার্মানদের কাছে গেলো, নিজেকে বাঁচাতে শরীর বিক্রি করলো। সেই ঈর্ষা থেকে পরবর্তীতে তাঁকে নিজের শহরের লোকেরা কি অবর্ণনীয় নৃশংসভাবে জনসম্মুখে নগ্ন করে অপমান করলো। মেলিনা শহরে ছেড়ে পালিয়ে গেলো সবার অলক্ষ্যে। আমি কি তবে সেই নগরবাসীকে ফেসবুকে দেখতে পাচ্ছি?

আমি কেন পরিমনি’র পক্ষে? ৩
তবুও পরিমনি অপরাধী প্রমাণ হলে তার বিচার হবে, বিচার আমিও চাই। কিন্তু সে তো রাজাকার গোলাম আজম ছিল না, যার হাত লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তে রঞ্জিত। তাঁকে নিয়ে ট্রল, গালিগালাজ, নোংরা বা ‘উচিত শিক্ষা হইছে’ টাইপ কথাবার্তা দেখে শুনে মনে হচ্ছে, কিছু মানুষ অপার আনন্দ লাভ করেছে। এফডিসি, মিডিয়া, অভিনয়, ফিল্মের অনেকে দেখি তাঁকে আর নিজেদের কেউ বলে ভাবতে চাইছেন না। একজন স্বনামখ্যাত অভিনেতা তো বলেই বললেন, স্বপ্নজাল বাদে তাঁকে আর কোন ফিল্মে তিনি দেখেন নাই, বা জানেন না। ভাই, আমাদের মহামতি জ্ঞানীগুনি কবিরা তার শরীরের নানা বাঁক নিয়ে উচ্ছ্বাসিত, এই মুহুর্তে সিনেমার পর্দা বা পর্দার বাইরে, হাই সেনসেশন- অথচ আপনি তাঁকে চেনেন না, তাঁকে দেখেন নাই, অদ্ভুত কথা ! কিছুদিন আগেও তিনি এক চলচ্চিত্রে ‘প্রীতিলতা’ চরিত্রে অভিনয়ের কারণে সবার বাহবা পেয়েছেন, আর আজকে তাকে সবাই ডিজওউন করে ফেললেন।

কয়েক বছর আগে, এক সাংবাদিক ভারতের অভিনেত্রী সানি লিওনকে সাক্ষাতকারে আগের এডাল্ট ইন্ডাস্ট্রির প্রসঙ্গ তুলে বিব্রত করতে বলেছিলেন, মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খান যদি আপনার সাথে অভিনয় করতে না চান, আপনার কেমন লাগবে। সানি লিওন উত্তরে বলতে চাইলেন, তিনি হয়তো করবে না। ঘটনাক্রমে, অনুষ্ঠানটি আমির খান দেখছিলেন। তিনি সাথে সাথে সামাজিক মাধ্যমে জানালেন, যদি সুযোগ থাকে সানি’জির সাথে অবশ্যি তিনি আনন্দের সাথে অভিনয় করবেন। সাংবাদিকের মুখের উপর জবাব দেয়া হলেও, এটা ইন্ডাস্ট্রিতে আত্মিক একটি নজির তৈরি হল। আমির খান অভিনেত্রীর অতীতকে পাশ কাটিয়ে তাঁকে একই ইন্ডাস্ট্রির একজন ভেবে সম্মানিত করলেন। এটাই করে মানুষ নিজেদের পরিবার ভাবলে।

আমি কেন পরিমনি’র পক্ষে? ৪
আবারো বলি, সারা পৃথিবীতে সিনেমায় কাজ করা কোন ভালো জিনিস না। এখানকার হালে পড়ালেখা করা কিছু মধ্যবিত্ত সত্যজিৎ-ঋত্বিক-বার্গম্যান-আইজেনস্টাইনের নাম, কাজ মুখস্ত করে আর দুই হাতের বুড়া আঙ্গুল এক করে এক চোখ বন্ধ করে ফ্রেম ধরে ভাবছে- এবার একশন বললেই আমি ফিল্মমেকার। এরপর কান-বার্লিন-ভেনিস সব আমার গীত গাইবে আজীবন। এইটা এতো সহজ না। মাঝে চিৎকার করছে, সিনেমা হলের পাশে পতিতারা ঘুরে বেড়ায় বলে আমাদের দেশের সিনেমা হলে কেউ যায় না। জানি না এরা মার্টিন স্করসেসের ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ সিনেমাতে জডি ফস্টার অভিনীত ‘আইরিস’কে কি ভেবেছিল? বাবু মশাই, পৃথিবীর সব দেশেই সিনেমা হলের আশেপাশে নানা পেশার লোক থাকে, এতে নিজের মধ্যবিত্তের ক্লাসিক অনুভূতিতে আঘাত পাওয়ার কিছু নাই। সিনেমা হলের এটাই চাকচিক্য, এটাই জৌলুস। এটা ইন্ডাস্ট্রি, এখানে অনেক লোক থাকবে, অনেক মানুষ তার মত করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে। প্রজেকশনিস্ট থেকে লাইটম্যান, টিকেট ব্ল্যাকার থেকে হলমালিক, প্রযোজক থেকে সংস্কৃতিমন্ত্রী আর সানি লিওন থেকে অমিতাভ বচ্চন সবাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অংশ। আপনারা নিজেদের মানুষ চেনেন না, আর সিনেমা বানাবেন? আর সেই সিনেমা দর্শক দেখবে, সম্মান করবে– এটা ভাবা কি ঠিক?

আমাদের দেশে চলচ্চিত্র শিল্পে যারা কাজ করেন, মেইনস্ট্রিম বা অল্টারনেটিভ- এক কথায় সামাজিকভাবে কেউ ঠিকঠাক শিল্পী বা সাংস্কৃতিক সম্মান দেয় না। অভিনেত্রীদের তো বাজারের মেয়ে ভাবে। তাই দশ নম্বরি করে দুইটা পয়সা হইছে যার, সেও ভাবে আমি একটি ধরি। আর কেউ কেউ তো এখন নিজেরাই গায়ক-নায়ক-ফিল্মমেকার হয়ে যাচ্ছে, টাকার জোরে। একজন অভিনেতা বা স্টার খ্যাতির আকাশে ধীরে ধীরে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর একবার যদি, এরকম পা পিছলে ট্রায়ালের শিকার হয়, ক্যারিয়ার শেষ। তখন না পারা যায় সামনে যেতে, না থাকে ঘরে ফেরার উপায়। কত মানুষ যে হারিয়ে গেছে, এই সিনেমার নিকষ ব্ল্যাক হোলে।

সবাই সঞ্জয় দত্তের মতো ভাগ্যবান হয় না, যার সুনীল দত্তের মতো বাবা ছিলেন। কুখ্যাত সন্ত্রাসী আইনে হাতেনাতে অস্ত্র আর অপরাধ সহ ধরার পরেও সঞ্জয় দত্ত স্বাভাবিক জগতে ফিরে আসতে পেরেছেন, কারণ তারা ধনী আর অভিজাত পরিবারের মানুষ ছিল। সুনীল দত্তকে রাজনীতি করতে হয়েছে মুলত ছেলেকে মুক্ত করার জন্য। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিভা হারিয়ে যায়, অভিভাবকহীন হয়ে।

ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বলি– ফিল্মে আসার আগে ভারতের দক্ষিণের অশ্লীল সিনেমার আইকন ‘সিল্ক’র জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘ডার্টি পিকচার’ দেখবেন, তাহলে এই জগতে আসার আগে নিজেকে তৈরি করে নেবেন। এই হাজার হাজার ওয়াটের লাইটের পেছনের কান্না কেউ পাত্তা দেয় না। তাই ফিল্মের মহা দুনিয়া হলিউড নিয়ে মেরিলিন মনরো বলছিলেন-
Hollywood is a place where they’ll pay you a thousand dollars for a kiss and fifty cents for your soul. কে বলবে, এই দার্শনিক মন্তব্য করা মানুষটি সেই ইন্ডাস্ট্রির যৌনতার রোল মডেল।

আমি কেন পরিমনি’র পক্ষে? ৫
পরিমনির গ্রেফতার ঘটনায় রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান প্রগতিশীল-বামপন্থী’রা নিরব। কারণ, তারা এখানে কোন সর্বহারা মানুষের সংগ্রাম-প্রতিষ্ঠা-পতনের গল্প দেখেন না। তারা এখানে শ্রেণী-সংগ্রাম দেখতে পাচ্ছেন না। ভারতীয় উপমহাদেশে বামপন্থীরা অদ্ভুতভাবে মার্ক্স-এঞ্জেলস-লেনিন-মাও এর প্রেসক্রিপশনের বাইরে কোনদিন শ্রেণীহীন মানুষকে চিনতে পারেন নি কেন, জানি না। তাই বামপন্থিদের কাছে, একজন নাম-গোত্র-পরিবার-শ্রেণী বিহীন মানুষের ঢাকা শহরে এসে সিনেমার মাদকতাকে অবলম্বন করে অভিজাত বা উচ্চশ্রেণীতে প্রতিষ্ঠিত হবার স্ট্রাগালকে কোন স্টাডি সার্কেলের সাবজেক্ট মনে হয় না। যেহেতু সে মধ্যবিত্তের ছুপা রুস্তম টাইপের চরিত্রকে পেছনে ফেলে, উচ্চবিত্তদের আসনে পৌঁছে যেতে চেয়েছিল, আর সেখানেই বিপত্তি। সে একজন বিকৃত, বখাটে পুঁজিবাদী। নষ্ট সর্বহারা বা প্রলেতারিয়েত। তাই তাকে নিয়ে কথা বলার কিছু নাই। তিনি যথেষ্ট নিপীড়িত নন। আর এটা স্বাভাবিক, উচ্চবিত্তরা বরাবরের মতোই সর্বহারা শ্রেণীকে নিংড়ে খাওয়া শেষ হলে, আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেয়- তা সে পরিমনি হোক বা সেজান জুসের ছাই হয়ে যাওয়া পঞ্চাশ শ্রমিক হোক। আর তাদের ভোগবিলাসকে জায়েজ করার জন্য মেরুদণ্ডহীন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী তো আছেই। তারা তাই পরিমনি কত নোংরা, কত নগ্ন, কত অশ্লীল তা দেখার আর বোঝার চেষ্টায় আছে।

পরিমনির অপরাধ, ‘সে বামন হয়ে আকাশের চাঁদ ধরার স্বপ্ন দেখেছিল’- বাংলা সিনেমার সেই বিখ্যাত সংলাপ আজ তার জীবনের পরিণতি। সিনেমা তাই অদ্ভুত এক নেশা, এর মাদকতা অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে ভয়ানক। হয়তো সিনেমা দেখেই তার আকাশের চাঁদ ধরার ইচ্ছা হয়েছিল। তার উত্থানে অনেকের যেমন গায়ে ফোসকা পড়েছে, তেমনি তার পতনে অনেকেই খুশি, আবেগে আহ্লাদিত। কিন্তু আমি ব্যাথিত। কারণ, আমিও সিনেমাকে ভালোবাসা লোক। সিনেমা থেকে আমিও স্বপ্ন দেখা শিখেছি। আমি ফিল্ম বানাবো, আমার গাড়ি হবে, বাড়ি হবে, আলোক ঝলমলে জীবন হবে। কার থাকে না প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন?

শুনেছি ‘মেঘে ঢাকা তারা’ চলচ্চিত্রের কোন চরিত্র প্রিয়- এই প্রশ্নের উত্তরে ঋত্বিক ঘটক ‘সীতা’র (নীতার প্রেমিককে যে বিয়ে করে ফেলেছিল) কথা বলেছিলেন। বিস্মিত প্রশ্নকর্তাকে জানিয়ে ছিলেন, একমাত্র সীতাই ছিল তার স্বপ্নের প্রতি ডেস্পারেট। তাই পরিমনির গ্রেফতার আমাকে আহত করে, তার স্বপ্নের পতন আমাকে হতাশ করে।

* পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যে কেউ যেকোনো বিষয়ে দ্বিমত করতেই পারেন। সব কথা ঠিক বলেছি, মেনে নেয়ার চাপ নেবেন না। কেউ কোন কথায় আহত হলে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি পরিমনি ঘটনায় আমার অনুভূতি- মতামত প্রকাশ করলাম।

লেখক : ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর, ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিসার্চ সেন্টার ফর ফিল্ম অ্যান্ড ভিজুয়াল কালচার।