সঞ্জয়ের ব্যাকুল মন, আগামী মাসেই ফিরছেন ব্রাজিলকন্যা সিলভা (ভিডিওসহ)

মেহেদী হাসান, রাজবাড়ি : ব্রাজিলকন্যা সিলভাকে বিদায় জানানোর পর থেকে সঞ্জয়ের সময় যেন কাটছে না। কোনো কাজে মন বসে না তার। ব্যাকুল মন সারাক্ষণ পড়ে থাকে বিদেশি বধূ সিলভার কাছে। তাকে আকুল হয়ে কাছে পেতে চায়। কিন্তু কীভাবে! সিলভা তো অনেক দূরে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের সাওপাউলোতে।

১০ এপ্রিল নবপরিণীতা স্ত্রী জেইসা অলিভেরিয়া সিলভাকে বিমানে তুলে দেয়ার পর থেকে একপ্রকার নিঃসঙ্গতার মাঝে কাটছে সঞ্জয়ের সময়গুলো।

যে ফেসবুকের কল্যাণে দুই মেরুর দুইজন এক মোহনায় মিললেন সেই ফেসবুক আর ভিডিও কলই এখন ভরসা। সময়-অসময়ে ভিডিও কলের কল্যাণে সিলভার কাছে ছুটে যান সঞ্জয়। কল্পনায় সিলভার স্পর্শ নিয়ে ঘুরে আসেন।

স্বামী সঞ্জয়ের মনের অবস্থা বোঝেন বিদেশিনী বধু সিলভা। স্বামীকে রেখে যাওয়ায় ভালো নেই তিনিও। তারও মনে পড়ে প্রেমিক স্বামীর সঙ্গে কাটানো ক্ষণিকের স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো। বিশেষ করে এফিডেফিটের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে ভিন্ন রীতিতে বিয়ে করা, বিয়ে-পরবর্তী খানিকের দাম্পত্যসময়, বাংলাদেশের মানুষের উচ্ছ্বাস সিলভার কাছে কখনো ভুলবার নয়।

তাই স্মৃতিময় ক্যানভাসের কাছে আবারো ফিরতে চান সিলভা- একথা জানিয়ে সঞ্জয় ঘোষ জানান, আগামী মাসের মাঝামাঝিতে সিলভা পুনরায় বাংলাদেশে আসবে বলে কথা হয়েছে। বাংলাদেশে কিছুদিন অবস্থানের পর ফেরার সময় আমাকেও ব্রাজিল নিয়ে যাবে। সেখানে গিয়ে আমার ভালো লাগলে থেকে যাবো, নয়তো সে-ই বাংলাদেশে এসে স্থায়ীভাবে আমার সঙ্গে বসবাস করবে বলে জানিয়েছে।

এর আগে গত ৩ এপ্রিল রাতে সিলভা প্রেমের টানে ব্রাজিল থেকে চলে আসেন সঞ্জয়ের কাছে। ঢাকা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে প্রেমিক সঞ্জয়ের সঙ্গে সোজা তার গ্রামের বাড়ি চলে যান। বিদেশি তরুণীর আগমন শুনে সঞ্জয়ের গ্রামের বাড়িতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে যায়। মানুষের ভিড় সামলাতে না পেরে পরদিনই সিলভাকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরে এক ভাইয়ের বাসায় উঠেন সঞ্জয়।

৬ এপ্রিল এফিডেফিটের মাধ্যমে খ্রিস্ট্রানধর্ম পরিত্যাগ করে হিন্দু ধর্মগ্রহণ এবং হিন্দু রীতি অনুযায়ী সঞ্জয়কে বিয়ে করেন সিলভা। এরপর পাঁচ দিনের সুখময় সংসার জীবন কাটিয়ে গত ১০ এপ্রিল রাতে পিতৃভূমি ব্রাজিল ফিরে যান সিলভা। যাওয়ার সময় নিয়ে গেছেন শ্বশুর-শ্বাশুড়ির আশির্বাদ।

বলে গেছেন, বাংলাদেশ একটি সুন্দর দেশ। এ দেশের মানুষ অনেক ভালো। তাই তিনি এ দেশে আবারও আসবেন।

সঞ্জয় জানান, ১৬ মাস আগে হঠাৎ করেই জেইসা অলিভেরিয়া সিলভা তার ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। সঞ্জয় জেইসা অলিভেরিয়া সিলভার ফেসবুক প্রোফাইল দেখেন এবং তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন। এর পরই শুরু হয় তাদের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কথা চালাচালি।

কয়েক দিনের মধ্যেই সিলভার সঙ্গে সঞ্জয়ের সখ্যতা গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থান, ভাষা, খাবার, আতিথেয়তা, স্বজনদের প্রতি মমত্ববোধ, ধর্মীয় অনুশাসনসহ খুঁটিনাটি জেনে বাংলাদেশ এবং সঞ্জয়ের প্রতি সিলভার আগ্রহ বাড়তে শুরু করে। যা পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে বাংলাদেশে এসে সঞ্জয়কে বিয়ে করেন।

২৯ বছর বয়সী সিলভা ব্রাজিলের মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনে চাকরি করেন। অন্যদিকে সঞ্জয় ঘোষ (২৮) ঢাকা-কলকাতা শ্যামলী বাস সার্ভিসের একজন কর্মী। রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর গ্রামের বলাই ঘোষের ছেলে সঞ্জয়। দুইভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়।