৭ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মিলল ওএমএসের ৫ কেজি চাল!


এম কে মনির, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় যে কঠোর লকডাউন চলছে, তা ওএসএসের লাইনে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভিড় বাড়িয়েছে। বাজার থেকে কম মূল্যে চাল এবং আটা কিনতে এসব ওএসএম কেন্দ্রে সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে মানুষকে।

জানা যায়, সীতাকুণ্ড পৌরসভায় ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ওএমএমের চাল বিক্রি কার্যক্রম। প্রতিদিন একজন ক্রেতা ৩০ টাকা দরে ৫ কেজি চাল ও ১৮ টাকা দরে ৫ কেজি আটা ক্রয় করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে নিজ ওয়ার্ডের ডিলারের দোকানে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড পৌরসভায় চারজন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন একজন ডিলার ১৫’শ কেজি চাল ও ১ হাজার কেজি আটা বিক্রয় করতে পারেন। এ বিক্রয় কার্যক্রম ৭ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় সীতাকুণ্ড উপজেলা যুব চত্বরে ওএমএসের ডিলার বোরহানের বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থিত এ কেন্দ্রে চাল কিনতে আসা পপি আক্তার বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন ৩টা। মাত্র চাল কিনলাম। ৫ কেজি চাল কিনতে এতো কষ্ট জীবনেও করিনি।’

কথা হয় রিকশাচালক আলমগীরের সাথে। তিনি বলেন, ‘সেই সকালে আমি লাইনে দাঁড়িয়েছি। খাওয়া-দাওয়া না করে লাইনে দাঁড়ানো কত যে কষ্ট.. তা অন্য কেউ বুঝবে না। এতো কষ্ট মাত্র ৫ কেজি চাল কিনতে হচ্ছে। করোনাকালে কাজ-কর্ম নেই। আয় রোজগার বন্ধ। জীবন যে আর চলে না।’

একই কথা বলেন লাইনে দাঁড়ানো দিনমজুর হানিফ। তিনি বলেন, ‘আমার ৭ সদস্যের পরিবার। ৫ কেজি চাল নিলে দু’দিন চলে। একদিন পর আবার আসতে হয়। চাল কেনাই এখন কাজ। ১৫০ টাকা ধার করে এনেছি। এখন পর্যন্ত ঋণ হয়েছে ৫ হাজার।’

গৃহিণী আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে দূরে। পশ্চিম আমিরাবাদ থেকে চাল কিনতে এসেছি। একে তো দূরের পথ, আবার দীর্ঘ অপেক্ষা। তারপরও উপায় নেই।’

আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশের পরিবারেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চাকরি হারিয়েছে। যে কারণে কম দামে চাল-আটা কিনতে সেখানে এসেছে।

তাদেরকে দীর্ঘ সময় লাইনের দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে গিয়ে জানা গেল, মাত্র দুইজন বিক্রয়কর্মী কাজ করছেন। যার কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আবার বিক্রয়কর্মীরা কখনো নাস্তা, কখনো ভাত খেতে যাচ্ছেন, ততক্ষণ বিক্রি বন্ধ থাকছে।

অভিযোগের বিষয়ে ডিলার বোরহান বলেন, ‘মানুষের চাপ বেশি হওয়ায় চাল দিতে দেরি হচ্ছে। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা সবাইকে আন্তরিকভাবে চাল দিচ্ছি।’

এ বিষয়ে যুব চত্বর ডিলার বিক্রয় কেন্দ্রের মনিটরিং অফিসার ও উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার শাহ আলম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ওএমএসের চাল-আটা কেনার চাহিদা বেড়েছে, সেজন্য ভিড় লাগার কারণ হতে পারে। আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। কোন অনিয়ম বা হয়রানি করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসার সামশুন্নাহার স্বর্না একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ডিলারদের জনবল বাড়াতে বলেছি। আসলে ক্রেতাদের লাইন দীর্ঘ, তাই এমন হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন মনিটরিং করছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে সামশুন্নাহার স্বর্না বলেন, ‘দিনের লক্ষ্যমাত্রার চাল ও আটা ডিলাররা সঠিকভাবে বিক্রি করছে কি না তা আমাদের মনিটরিং অফিসাররা দেখভাল করছেন। এ বিক্রয় কার্যক্রম ৭ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।’