রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে বেড়িবাঁধ রক্ষার কাজ

প্রকাশিতঃ ১ অগাস্ট ২০২১ | ১০:২৩ অপরাহ্ন


মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : কোদাল দিয়ে মাটি কাটছেন, আরেক দল সেই মাটি হাতে নিয়ে ভাঙা বেড়িবাঁধে ফেলছে। এভাবে জোয়ারের পানি থেকে খেতের ফসল ও বসতভিটা নিরাপদ রাখতে বেড়িবাঁধ রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

আজ রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে ছনুয়া ছেলবন গ্রামে জলকদর খালের বেড়িবাঁধ এলাকায় এ দৃশ্য দেখা গেছে। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকা বন্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন।

এলাকাবাসী জানায়, বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকা ছনুয়া ইউনিয়নে লবণের মাঠে চলতি বর্ষা মৌসুমে লবণাক্ত ও খরা সহিষ্ণু ধানের চাষ করা হয়েছে ব্যাপকভাবে। কিন্তু ছনুয়া ছেলবন গ্রামে জলকদর খালের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোনা পানি প্রবেশ করছিল। এ অবস্থায় বাঁধ রক্ষা করা না গেলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে সদ্য রোপনকৃত ধানের চারা গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া বেড়িবাঁধটি দিয়ে মানুষজন যাতায়াতও করে থাকেন।

এ অবস্থায় লবণাক্ত পানি থেকে ফসল রক্ষা করতে এবং জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বেড়িবাঁধ মেরামতে স্থানীয় লোকজনকে আহ্বান জানানো হয়। এরপর এগিয়ে আসেন বাদশা মাঝি, মোহাম্মদ মিজান, মোহাম্মদ মনছুর, মোহাম্মদ জকরিয়া, মোহাম্মদ ইউছুফ, মোহাম্মদ নেজাম, ছরওয়ার আলমসহ ছেলবন গ্রামের বাঁচা মিয়া পাড়ার বাসিন্দাদের অনেকেই।

ছেলবন গ্রামের বাসিন্দা মো. জকরিয়া একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘অতি বৃষ্টির কারণে কাদাযুক্ত হয়ে ছোট-বড় গর্ত হয়ে চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বেড়িবাঁধ। বৃষ্টির পানিতে পার্শ্ববর্তী জলকদর খালে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লবণাক্ত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে আগের তুলনায় বেশি। আবার ছনুয়ার সীমান্তবর্তী এ বেড়িবাঁধই এলাকার মানুষের চলাচলের অন্যতম মাধ্যম।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও কলেজছাত্র কায়সার হামিদ বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে অবহেলিত আমাদের গ্রাম। এখানে দিনমজুর লবণ চাষীরা জীবিকা নির্বাহ করতে বর্ষাকালে অনেক কষ্টের বিনিময়ে ধান চাষ করেন। সেই ধানের চারা যদি লবণাক্ত পানির কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তো নিজেদেরই ক্ষতি। তাই এ ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য স্থানীয়দের এমন উদ্যোগ।’

এ বিষয়ে ছনুয়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল আবছার সিকদার বলেন, ‘আজ থেকে ১০-১৫ দিন আগে ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এই বেড়িবাঁধটি পরিদর্শনে এসেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে কোন অগ্রগতি দেখলাম না। বর্তমানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জমির আইলে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ঢুকছে জোয়ারের পানি। জনসাধারণের ভোগান্তির শেষ নেই। আমি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, ‘আমাদের কর্মকর্তারা জোয়ারের পানি ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছেন। সবাই মাঠে রয়েছেন। ছনুয়াসহ বাঁশখালীর কিছু কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ টপকে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাঈদুজ্জামান চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ মেরামতের কোন তথ্য আমার কাছে নেই। ছনুয়ার চেয়ারম্যানের সাথে কিছুক্ষণ আগেও আমার কথা হয়েছে। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে আমাকে কিছু জানাননি। আমি এই বিষয়ে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’