ইকবাল মাহমুদ, সিলেট : বিনা দোষে বছরের পর বছর জেল, তারপর মুক্তি। কিন্তু সেই মুক্তির পরও বন্দিজীবন। সাজার মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর সিলেট কারাগারে বন্দি আছেন ভারতের ১১ জন নাগরিক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, তামাবিল সীমান্ত দিয়ে দফায় দফায় ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলেও ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ার অজুহাতে তাদেরকে গ্রহণ করছে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আরো দুজন
সিলেট কারাগারে জেল খাটছেন ১২ বছর ধরে। আছেন বিচারাধীন হাজতিও।
বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় তারা সবাই ফিরতে চান মাতৃভূমিতে। প্রয়োজনে নিজের দেশে, নিজের মাটিতেই সাজা ভোগ করবেন তারা।
গত বছরের নভেম্বরে পাসপোর্ট, ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে স্বজনদের দেখতে আসেন ভারতের শিলচর-এর বাসিন্দা মহিম উদ্দিন। জকিগঞ্জ চেকপোস্টে তাকে মাদক চোরাচালানি সন্দেহে আটক করে বিজিবি। এরপর থেকে তার ঠিকানা হয়ে উঠে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার।
মহিম উদ্দিন বলেন, প্রায় সাড়ে চারটা মাস বিনা অপরাধে জেলটা খাটছি। যদি পাসপোর্ট ছাড়া চোরাই পথে আসতাম, যদি আমার কাছে অন্য কিছু থাকতো তাহলে আমার দেশের কাস্টম কি আমাকে বাংলাদেশে আসার
সুযোগ দিতো-উল্টো প্রশ্ন মহিমের।
পশ্চিম বঙ্গের কুচবিহার থানার রাজু আলীসহ ১১ জনের গল্পটা আরো করুণ। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। সাজা ভোগ শেষ হয়েছে ৪-৫ বছর আগে। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করায় তাদের দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখন তারা সিলেট কারাগারে রিলিজড প্রিজনার (আরপি) হিসেবে বন্দি।
রাজু আলীর মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে অনেক আগে। এরপরও কারাগার তিনি বের হতে পারছেন না। কেন বের হতে পারছে না সে প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।
আর বিদেশ বিভূঁইয়ে ১২ বছর ধরে সাজা খাটা সুজন, রাজনের আকুতি- বাকি সাজাটুকু তারা খাটতে চান নিজ দেশে ফিরে। বন্দিবিনিময় চুক্তি অনুযায়ী এ সুযোগ থাকলেও অজানা কারণে তাদেরকে ফেরত নিচ্ছে না ভারত সরকার।
কারাবন্দি স্টার রবিন বলেন, ১২ বছর ধরে জেল খাটছি। দুই দেশের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকলেও তা আমাদের বেলায় কার্যকর হচ্ছে না। এভাবেই আটকে আছি বছরের পর বছর।
একই কথা রাজনেরও; তিনি বলেন, আমরা ইন্ডিয়া ফেরৎ যেতে চাই। প্রয়োজনে নিজ দেশেই জেল খাটবো।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. সগির মিয়া বলেন, ভারতীয় এসব বন্দিদের বেশ কয়েক দফা তামাবিলসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ার অজুহাতে তাদেরকে সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠায় সেদেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
ভারত-বাংলাদেশের সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের বৈঠকে ভারতীয় এ বন্দিদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বেশ কয়েকবার আলোচনা হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি বলে জানান সিলেট কারাগারের এ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।