জোবায়েদ ইবনে শাহাদত : জেলা প্রশাসক পদে দায়িত্বে একজন নারীকে দেখতে বান্দরবানবাসীকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। আর পুলিশ সুপার পদে বান্দরবান জেলায় প্রথমবারের মতো একজন নারীকে নিয়োগ দেয়া হয় ২০১৯ সালের একেবারে শেষে। এই মুহূর্তে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় কর্মরত জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও পুলিশ সুপার (এসপি) জেরিন আখতার দুইজনই নারী। বান্দরবানে জেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পদে প্রথমবারের মতো এ দুইজন নারী কর্মকর্তা দায়িত্ব পেয়েছেন। বর্তমানে একই সময়ে এ দুই নারী কর্মকর্তা বান্দরবানে কাজ করছেন, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্যই।
পার্বত্য তিন জেলার অন্যতম বান্দরবানে এখন আর আগের মতো শান্তিপূর্ণ অবস্থা নেই। দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সামাজিক অপরাধ ও রক্তপাতের এক অশান্ত ভূমিতে পরিণত হয়েছে এই জেলা। মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিবদমান গ্রুপগুলো বান্দরবানে নিজেদের অস্তিত্ব ও অবস্থান শক্তিশালী করার প্রতিযোগিতায় নামার ফলেই এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। সশস্ত্র গ্রুপগুলো জড়িয়ে পড়েছে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক পাচারের মতো অপরাধে। এমন অবস্থায় বাড়তি কিছু চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি থাকার পরও ভালোভাবেই বান্দরবান পার্বত্য জেলা সামলাচ্ছেন ডিসি ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও এসপি জেরিন আখতার।
দুইজনের পটভূমি দুই রকম
বান্দরবান জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়া ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির জন্ম পাহাড়ি এলাকায়। তাঁর বাড়ি রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায়। কাপ্তাই ও চট্টগ্রামেই বেড়ে ওঠেছেন তিনি। তাছাড়া বাবা সৈয়দ শামসুদ্দীন আহমদ তিবরীজিও ছিলেন বিসিএস ক্যাডার। চাকরীজীবনে বাবার পোস্টিংয়ের সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া ও থাকা হয়েছে তাঁর।
নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়ালেখা করেন তিবরীজি। মূলত হোস্টেল সুবিধার কারণেই এই কলেজে লেখাপড়া করেছেন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান উচ্চশিক্ষা জন্য। সেখানে, ম্যাককুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘গভরনেন্স অ্যান্ড পাবলিক পলিসি’ বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি ২২তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। চাকরি জীবনের শুরুতে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরে পদায়ন করা হয় তাকে। সেসময় পিরোজপুরে তিন বছর কাজ করেছেন তিনি। ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজি ২০১২ সনের ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বান্দরবান সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘আমার আজকের এই অবস্থানে আসার কৃতিত্বের বেশিরভাগই আমার মা সৈয়দা হাসিনা বেগমের। মানব সেবাকে প্রথম স্থানে রাখতে শিখিয়েছেন আমার মা। অল্প বয়সে বাবাকে হারানোর পর থেকেই আমার মা স্বাবলম্বী হওয়ার সাহস যুগিয়ে পথ দেখিয়েছেন। মা আমাকে শিখিয়েছেন আত্মনির্ভরশীল হতে, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেশের জন্য কাজ করতে।’
অন্যদিকে বান্দরবানের প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জেরিন আখতারের বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, সেই সুবাদে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আগারগাঁও সরকারি কোয়ার্টারে থাকতেন পরিবারের সাথে। ঢাকায় থাকার কারণে জেরিন আখতার পড়াশোনাও করেছেন ঢাকাতেই। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ থেকে স্নাতক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে তিনি জেনেটিক্স এবং উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
লেখাপড়া শেষে বিসিএস ২৪ তম ব্যাচে জেরিন আখতার ২০০৫ সালের ২ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। চাকরির শুরুতে ঢাকা মেট্রোতে (উত্তর) সিআইডিতে (ক্রাইম) কাজ করেন তিনি। এরপর ২০১১ সালে জাতিসংঘ মিশন হাইতি-তে যান তিনি। ২০১২ সালে মিশন থেকে ফিরে পুনরায় সিআইডিতে যোগ দেন। ২০১৫ সালে নিজের দ্বিতীয় মিশনে লজেস্টিক অফিসার হিসেবে কঙ্গো-তে যান তিনি। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন জেরিন।
২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পদোন্নতি দিয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) করা হয় জেরিন আখতারকে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এসবি’র পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন তিনি। ২০১৯ সালে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পান জেরিন আখতার। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর পুলিশ সুপার হিসাবে বান্দরবানে নিয়োগ দেওয়া হয় জেরিন আখতারকে। তিনি বলেন, ‘সিআইডি-তে কাজ করার সুবাদে কাজে অনেকরকম ভেরিয়েশন পেয়েছি। বিভিন্ন জটিল মামলা দেখেছি। এছাড়া ডিএমপি-তে ক্রাইম ওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত থাকা আমার জন্য টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। কারণ যারা পুলিশে চাকরি করেন তাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে ক্রাইম ডিটেকশন করা। এসবি-তে আমি কাজ করেছি। যেখানে ইনফরমেশন কালেকশন করতে হয় নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে, এগুলো স্পেশাল কাজ।’
এসপি জেরিন বলেন, ‘এছাড়া আমি যখন প্রটেকশনে কাজ করেছি বিভিন্ন সংস্থার সাথে আমাকে কাজ করতে হয়েছে। সেই সুবাদে গণভবনেও বিভিন্ন মানুষের সাথে কাজ করেছি। অনেকগুলো সংস্থার সাথে টিমওয়ার্ক করতে পেরেছি। আর ভিআইপিদের প্রটেকশন দেওয়ার দায়িত্বটাও আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। কারণ এখানে সিকিউরিটি সিস্টেমগুলো ফুলপ্রুফ থাকতে হয়। একটু বেখেয়ালি হলেই কোনো জায়গায় যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই অনেক পেশারের মধ্যেই কাজগুলো করতে হয়েছে।’
জেরিন আখতার বলেন, আসলে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কাজ ঠিকমত করতে পারাকেই আমি জীবনের বড় অভিজ্ঞতা মনে করি। আর এসব জায়গায় কাজ করতে গিয়ে আমি সাকসেসফুলও হয়েছি। আমার কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান হিসেবে আমাকে বিপিএম পদক দেওয়া হয়েছে। কাজের মাধ্যমে যখন মানুষের উপকার ও সহযোগিতা করতে পারি তখন নিজের কষ্ট স্বার্থক মনে হয়। এটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে বড় অর্জন।’
ইতিহাস গড়া দায়িত্ব
জনপ্রশাসনে জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, ডিসি পদকে। তৃণমূলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ডিসির পদটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বান্দরবানে এই পদে প্রথমবারের মতো একজন নারীর অংশগ্রহণ করার বিষয়ে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘বান্দরবানের জেলা প্রশাসক হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এটা নিঃসন্দেহে আমার জন্য খুবই আনন্দের। প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করছি।’
অন্যদিকে বান্দরবানের প্রথম নারী এসপি জেরিন আখতার বলেন, ‘বান্দরবানে বদলি হয়ে ভালো একটি কর্মস্থল পেলাম। কারণ এর আগে এখানে কোন নারী পুলিশ সুপার ছিলো না। এতে করে আমার যোগদানের মাধ্যমে একটি ইতিহাস হলো। পাশাপাশি বান্দরবানের মানুষের মাঝে এক ধরনের চাপ তৈরি হবে। আগামীতে এখানকার নারীরাও সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবে।’
বান্দরবান নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা নিয়ে ভাবনা
পার্বত্য এলাকা হওয়ার কারণে বান্দরবানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ঢাকা, চট্টগ্রামের চেয়ে স্বাভাবিকভাবে কম। এছাড়া নীরব পরিবেশের কারণে কারও মধ্যে নিরাপত্তা নিয়েও আতঙ্ক কাজ করে। এ কারণে শাস্তিস্বরূপ বান্দরবানের মতো দুর্গম এলাকাগুলোয় কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়ে থাকে বলে নেতিবাচক আলোচনা আছে। এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘একটা বিজ্ঞাপনে আমি এই বিষয়টি লক্ষ করেছি, যেখানে বান্দরবানকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে বলা হয়, ওভারনাইট বান্দরবান পাঠিয়ে দিব। আমার কাছে এটা দৃষ্টিকটু লেগেছিল। এই বিষয়ে পার্বত্যমন্ত্রী মহোদয়কে আমি বলেছি, স্যার আপনাদের এখানে মানুষ থাকবে কীভাবে, এ জায়গা নিয়ে তো নেতিবাচক প্রচারণা হয় টেলিভিশনে। পরে জনপ্রশাসন সেক্টরসহ বিভিন্ন জায়গায় এই বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য এলাকার এমপি মহোদয়রা এই বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে কথা বলেন। জানুয়ারিতে এই বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ শুরু করি, মার্চে সেই বিজ্ঞাপনটি বন্ধ হয়। বান্দরবানের প্রতি মানুষের নেগেটিভ ধারণা দূর করতে আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
‘একটা বিজ্ঞাপনে আমি এই বিষয়টি লক্ষ করেছি, যেখানে বান্দরবানকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে বলা হয়, ওভারনাইট বান্দরবান পাঠিয়ে দিব। আমার কাছে এটা দৃষ্টিকটু লেগেছিল। এই বিষয়ে পার্বত্যমন্ত্রী মহোদয়কে আমি বলেছি, স্যার আপনাদের এখানে মানুষ থাকবে কীভাবে, এ জায়গা নিয়ে তো নেতিবাচক প্রচারণা হয় টেলিভিশনে। পরে জনপ্রশাসন সেক্টরসহ বিভিন্ন জায়গায় এই বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য এলাকার এমপি মহোদয়রা এই বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে কথা বলেন। জানুয়ারিতে এই বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ শুরু করি, মার্চে সেই বিজ্ঞাপনটি বন্ধ হয়। বান্দরবানের প্রতি মানুষের নেগেটিভ ধারণা দূর করতে আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, ‘বান্দরবান নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা হলেও গত দেড় বছরে তেমন কোনো বাধার সম্মুখীন আমাকে হতে হয়নি। অন্যান্য জায়গার তুলনায় বান্দরবানে অপরাধ কম হয়। বান্দরবানের সাধারণ মানুষগুলো যেমন সহজ সরল, ঠিক তেমনি সাহায্যকারী।’ তিনি বলেন, ‘এরপরও কিছু সমস্যা-চ্যালেঞ্জ তো থাকবে। এসব মোকাবেলা করেই আমাকে কাজ করতে হবে। তবে আমি চেষ্টা করি সর্বনি¤œ সীমায় সমস্যাগুলোকে রাখতে। আর কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো জাতীয় ইস্যু। যেখানে ইচ্ছে হলেই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে কিছু করতে পারবো না। এসব ইস্যু সরকারি নির্দেশনায় তদারকি করতে হবে।’
‘বান্দরবান নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা হলেও গত দেড় বছরে তেমন কোনো বাধার সম্মুখীন আমাকে হতে হয়নি। অন্যান্য জায়গার তুলনায় বান্দরবানে অপরাধ কম হয়। বান্দরবানের সাধারণ মানুষগুলো যেমন সহজ সরল, ঠিক তেমনি সাহায্যকারী।’ তিনি বলেন, ‘এরপরও কিছু সমস্যা-চ্যালেঞ্জ তো থাকবে। এসব মোকাবেলা করেই আমাকে কাজ করতে হবে। তবে আমি চেষ্টা করি সর্বনি¤œ সীমায় সমস্যাগুলোকে রাখতে। আর কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো জাতীয় ইস্যু। যেখানে ইচ্ছে হলেই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে কিছু করতে পারবো না। এসব ইস্যু সরকারি নির্দেশনায় তদারকি করতে হবে।’
বান্দরবানে পর্যটক-সেবা কতটুকু বেড়েছে?
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির দায়িত্ব গ্রহণের পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন কেন্দ্র মেঘলায় কায়াকিং বোট যুক্ত হয়েছে, প্রান্তিক লেকে কায়াকিং বোটের পাশাপাশি বেশকিছু সোলার বোটও দেয়া হয়েছে। মেঘলায় প্রথমবারের মতো ‘ব্রেস্ট ফিডিং’ জোন করা হয়েছে; সেখানে মায়েরা বিশ্রাম নেয়ার পাশাপাশি নারীদের নামাজ পড়ার ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি বান্দরবানের বাসিন্দা বা পর্যটক কাউকেই যাতে হয়রানির শিকার হতে না হয়। এক্ষেত্রে পর্যটন স্পটগুলোতে পূর্বের তুলনায় সেবা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছি। মেঘলায় কায়াকিং বোট দিয়েছি। প্রান্তিক লেকে কায়াকিং বোটের পাশাপাশি বেশকিছু সোলার বোট দিয়েছি যাতে একসাথে বেশ কয়েকজন লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘নিলাচল মসজিদে আগে পানির সমস্যা সহ বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। আমি সম্পূর্ণ মসজিদটিকে টাইলস করে দিয়েছি এবং সবসময় যাতে পানি থাকে সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। আর বান্দরবানে দুটো ভিআইপি কটেজ ছিল। যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। আমি সেই কটেজে যাওয়ার রাস্তায় আলোকায়ন করার পাশাপাশি কটেজগুলো সংস্কার করে নতুন করে সেগুলো চালু করেছি।’
পর্যটক-সেবা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, ‘পর্যটকদের ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ নজর রাখতে হয়। মাঝে মাঝে তাদের অবস্থান ট্র্যাক করা হয়, কখন আসলেন বা কখন যাচ্ছেন- এসব বিষয় পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আমাদের মনিটরিং করতে হয়। আর অনেক সময় বান্দরবানে নেটওয়ার্ক থাকে না, তাই এর কারণে কেউ যাতে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো সমস্যায় না পড়েন তা আমাদের তদারকি করতে হয়।’
বান্দরবানের সংস্কৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কৃষি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা
বাঙালি ছাড়াও আরো ১১টি নৃগোষ্ঠী এই জেলায় বসবাস করে। কিন্তু নানা কারণে ধীরে ধীরে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সম্পৃক্ত জিনিসগুলো হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। তাদের সৃষ্টি ও সংস্কৃতি যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য একটি মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানান বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। তিনি বলেন, ‘উক্ত মিউজিয়ামে পার্বত্য নৃগোষ্ঠীর সকল ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করা হবে। শুধু তাই নয়, বান্দরবানের কিছু কৃষি পণ্য আছে যেগুলোর চাহিদা সারা দেশে রয়েছে।
মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে, চাষীরা যাতে ন্যায্যমূল্যে এসব কৃষিপণ্য অনলাইনে বিক্রি করতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। কৃষকরা যাতে অনলাইনে কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারে সেই বিষয়ে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা আমার আছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কিছু বিভাগ কাজ শুরু করেছে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বান্দরবানের পাহাড়, খাল ও ঝিরি-ঝর্ণা থেকে অবৈধভাবে বিভিন্নসময় পাথর উত্তোলন করা হয়, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই পাথর উত্তোলন বন্ধ করার জন্য আমরা খুবই শক্ত অবস্থান নিয়েছি। প্রত্যেকটি উপজেলায় এজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি।’
এদিকে বান্দরবানের কৃষি পণ্য নিয়ে কাজ করবেন জানিয়ে পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, ‘আমার লেখাপড়া যেহেতু কৃষি নিয়ে, আমি আমার কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে এখানকার কৃষি নিয়ে কিছু করতে চাই। বান্দরবানের মানুষেরা ফলমূল শাকসবজিতে কোনো ফরমালিন ব্যবহার করেন না। এখানে প্রত্যেকটা খাবার ফ্রেশ। এই তরতাজা কৃষিপণ্য গুলো যাতে সকলেই হাতের নাগালে পায়, আর এখানকার কৃষিখাতকে যাতে আরো উন্নত করা যায় সেই বিষয়ে কাজ করতে চাই।’
শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা বান্দরবান নিয়ে ডিসি-এসপির ভাবনা
সৌন্দর্যের দিক দিয়ে বান্দরবানকে বাংলার দার্জিলিং বলা হলেও শিক্ষার দিক দিয়ে জেলাটি তেমন অগ্রসর হতে পারেনি। কারণ, এখানে শিক্ষার হার এখনও অনেক কম। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। এ লক্ষে আমি কিছু কর্মকৌশল ঠিক করেছি। অচিরেই এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। আমি বান্দরবানের মানুষদের বলবো আপনার সন্তানদের লেখাপড়া ও শিক্ষার বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করুন। দেশ, দেশের বাইরেও তাদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সুতরাং তারা যদি শিক্ষিত হয় তারা তাদের শ্রম এবং মেধাটাকে কাজে লাগাতে পারবে। দেশকে কিছু দিতে পারবে।’
অন্যদিকে পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, ‘বান্দরবানে শিক্ষার হার কম, আবার নারী শিক্ষার হার আরও কম। কিন্তু অনেক নারীকে আমি বলতে শুনেছি, বান্দরবানের নারী ডিসি-এসপি তাদের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণার জায়গা। যদি আমরা তাদের অনুপ্রেরণা হতে পারি, তাহলে তারাও অবশ্যই একদিন অন্য কারো জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি তাদের বলি, চেয়ারের ওপাশে বসার চেয়ে এপাশে এসে তারা যাতে বসতে পারে সেই চেষ্টা যেন তারা করে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমি এখানকার স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কাজ করতে চাই। এখানে একটি বিষয় আমি খেয়াল করেছি। ছোট ছেলে-মেয়েরা না বুঝেই আনহেলদি রিলেশন করে ফেলে যার ফলে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে। এধরনের বেশকিছু কেইস আমি পেয়েছি। আমি মনে করি এই বিষয়ে তাদের পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় তারা এধরণের ভুলগুলো করছে। আর বাচ্চাদের কিছু বিষয় ছোট থেকেই শিখাতে হয়, অন্যথায় বড় হলে সেই বোধটা তাদের মধ্যে থাকে না। স্কুল বন্ধ থাকায় আমার এই প্রচেষ্টা শুরু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। স্কুল খুললে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করবো।’
করোনাকালে ডিসি-এসপির মানবিক সহায়তা
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসক, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি সারা দেশের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। বান্দরবানের মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, ত্রাণ বিতরণ, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন ডিসি ও এসপি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাঠপর্যায়ে কাজগুলো করতে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। কারণ, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের বেশ উপস্থিতি থাকছে। আবার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কর্মহীন মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ত্রাণের চাহিদা বাড়ছে। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।
পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, ‘করোনার প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অনেকেই ঘরবন্দি। লোকলজ্জা কিংবা আত্মসম্মানহানির ভয়ে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে কিংবা অন্য কোন উপায়ে প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করতে পারছিলেন না, এমন অনেকেই আমাকে নিজের সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। তাদের এই বিষয়টা আমাকে প্রচণ্ড রকমের নাড়া দেয়। এমন মানুষদের গোপনে সহযোগিতার জন্য কয়েকটি হটলাইন নাম্বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এসপি বান্দরবান’ নামক আইডি থেকে প্রচার করে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি।’
‘ইতিমধ্যে অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আশেপাশের কেউ যাতে না জানে সেভাবেই আমরা তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। যে সকল ব্যাগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ হচ্ছে সে রকম ব্যাগে আমরা এই সাহায্য দেইনি। এমনভাবে সাহায্যের ব্যাগগুলো দিয়েছি যা দেখে যে কেউ মনে করবে মাত্র তারা বাজার করে আসলেন। কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী আমাকে বলেছেন এ বিষয়ে আমি যাতে দুয়েকটি ছবি তাদের দিই, নিউজ করার জন্য। কিন্তু ছবি তো দুরের কথা, কখন এই সাহায্য সামগ্রী বিতরণ করেছি সেটাও আমি কাউকে জানাইনি। সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে আমি যে কিছু করতে পেরেছি এটা আমাকে অনেক বেশি তৃপ্তি দেয়।’ বলেন এসপি জেরিন আখতার।
একই সঙ্গে চাকরি এবং সংসার দুটোই সামলাচ্ছেন ডিসি-এসপি
একই সঙ্গে চাকরি এবং সংসার দুটোই সামলাচ্ছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও পুলিশ সুপার জেরিন আখতার। ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি কর্মক্ষেত্রে এতদূর আসার পেছনে স্বামী খালেদ বিন চৌধুরী (একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান) ও তিন কন্যা সন্তানের কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান। তাঁর মতে, স্বামী-সন্তানদের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছেন বলেই তিনি দীর্ঘ চাকরিজীবন পার করতে পেরেছেন। তাই তো শত ব্যস্ততার মাঝেও বাচ্চাদের পছন্দের খাবার নিজের হাতে রান্নার করতে, ছুটির দিনে পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে কিংবা আড্ডা দিতে ভুলেন না তিনি।
অন্যদিকে পরিবারের সহযোগিতায় নিজের দায়িত্ব আরো সুন্দর ও সহজে পালন করতে পারেন বলে জানিয়েছেন জেরিন আখতার। তিনি বলেন, ‘আমার এক মেয়ে ও স্বামী (বাংলাদেশ ব্যাংকে ডিজিএম) আমাকে খুবই সাপোর্ট করে। আমি ব্যস্ততার কারণে তাদের খুব একটা সময় দিতে পারি না। কিন্তু তারা কখনো এতে বিরক্ত হয়নি, উল্টো আমার কাজ ঠিকমত করতে আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছে। তবে আমিও চেষ্টা করি সময় পেলেই তাদের সাথে সময় কাটাতে। আমার মেয়ে আমার রান্না খুবই পছন্দ করে। তাই ছুটির দিনে তার জন্য আমি রান্না করি।’
ডিসি-এসপিকে নিয়ে যা ভাবছেন বান্দরবানের মানুষজন-জনপ্রতিনিধি
বান্দরনবানের নারী ডিসি ও এসপির কর্মকা- নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন সমালোচনা শোনা যায়নি। অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে বান্দরবানবাসীর কাছে রোল মডেল হয়ে ওঠেছেন এ দুই কর্মকর্তা। বান্দরবানের বাসিন্দা সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ঠ ব্যক্তিরাও ডিসি ও এসপির কর্তব্যপালনের ধরণ নিয়ে প্রশংসা করেছেন। বান্দরবানে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্তিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পার্বত্যাঞ্চলের সচেতন মহল।
লামা উপজেলার বাসিন্দা ঝন্টু বাবু তঞ্চঙ্গা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে অনেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বান্দরবানে এসেছেন, দায়িত্ব পালনও করেছেন। কিন্তু এই দুই নারী দায়িত্বপালনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে এতটা ভালোবাসবেন তা আমারা কল্পনাও করতে পারিনি। বিশেষ করে আদিবাসীদের প্রতি তাদের সহযোগিতা-সহমর্মিতা আমাদের সত্যি অবাক করেছে। আমাদের মনেই হয় না তারা বাইরের কেউ। তাদের আচার-ব্যবহারে মনে হয় তারা বান্দরবানেরই বাসিন্দা।’
লিপ্টন থিগিদি নামের একজন বলেন, ‘ঈদের সময় জেলা প্রশাসককে নিজে ঘুরে ঘুরে আমাদের মুসলিম পাড়ার মানুষের খবর নিতে দেখেছি। তেল, চিনি, সেমাই নিয়ে ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছেন তিনি। আর পুলিশ সুপার নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি করোনায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছেন। এই কাজগুলো না করলেও তাদের কোন সমস্যা ছিলো না। কিন্তু ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে, এই জনপদের মানুষকে ভালোবেসে তারা নিজ উদ্যোগে এসব করেছেন। আমরা সৌভাগ্যবান তাদের মত অভিভাবক বান্দরবানে পেয়ে।’
রোয়াংছড়ির বাসিন্দা হলা সিং ন্যু একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বান্দরবানের নারীরা একটু লাজুক স্বভাবের। নিজের অধিকার সম্পর্কে তারা তেমন একটা সচেতন নয়। কিন্তু ডিসি ও এসপি যখন আমাদের মাঝে আসেন, কথা বলেন তখন তাদের কথায় নারীরা অনুপ্রাণিত হয়। নিজেদের কাজের বাইরেও এই দুই নারী কর্মকর্তা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে বান্দরবানবাসীর পাশে থাকেন। তারা বান্দরবানের সকল নারীর জন্য আইকন।’
বান্দরবানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসলাম কোম্পানী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমানে বান্দরবানের ডিসি ও এসপির কাজ দেখলে নারী কর্মকর্তা হিসেবে আলাদা করে ভাবার সুযোগ নেই। এ দুই নারী কর্মকর্তার বেশ কিছু ইতিবাচক দিক আছে। নারী হওয়ায় মেয়ে বা বোন হিসেবে সহজেই অসহায় মানুষ নিজেদের সমস্যার কথা তাদের বলতে পারেন। তাতে কাজগুলো সহজে সমাধানও হয়। এ দুই নারী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনেও অধিক যতœবান। সব মিলিয়ে তাঁরা কিন্তু খুব ভালো করছেন।’
বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মো. ইসলাম বেবি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের দায়িত্বে যারা আছেন, দুইজনই নারী। তারা নিজেদের দায়িত্ব এতো সুনিপুণভাবে পালন করে যাচ্ছেন যে তাদের কাজে নারী-পুরুষ কোন ব্যবধানই পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো তাদের দেখে বান্দরবানের নারী-পুরুষ সকলেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। আর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই জেলার অগ্রগতিতে নিজেদের মেধা, যোগ্যতার সর্বোচ্চ দিয়ে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের আমন্ত্রণ জানাই, আবার তাদের সাহায্যও চাই। কোনো ক্ষেত্রেই তারা আমাদের নিরাশ করছেন না। তারা নিজেদের কাজকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এমনকি আমাদের মন্ত্রী মহোদয় তাদের দুজনকে সবসময়ই বান্দরবানবাসীর কাছে অনুকরণীয় হিসেবে উদাহরণ দেন। নারীরা যে চাইলে সব পারে এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমাদের ডিসি ও এসপি।’
বান্দরবান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে নারীরা যেভাবে কাজ করেন অনেক সময় পুরুষেরাও এভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এগুলো হলো নারীদের অন্যতম গুণ, যা পুরুষদের চেয়ে তাদের অনেক বেশি এগিয়ে রাখে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মধ্যেও আমরা এসব বিষয় লক্ষ্য করেছি। বান্দরবানের মত পার্বত্য জেলায় কাজ করা কিন্তু খুব একটা সহজ কাজ না। কিন্তু তারা খুবই নিপুণভাবে এই কাজ করে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘তাদের যে বিষয়টি আমাকে অবাক করেছে সেটি হচ্ছে পাহাড়ি মানুষের সাথে খুব সহজেই তারা মিশে যেতে পারেন। খুব সাধারণভাবেই চলাফেরা করেন। বান্দরবানের নারী সমাজের জন্য এ দুই নারী বর্তমানে আইকন হয়ে ওঠেছেন। সবাইকে সাথে নিয়েই তারা যে কোনো কাজ করেন। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বকে প্রাধান্য দিয়ে এই জেলার সমৃদ্ধিতে তারা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা একদিকে যেমন প্রশংসার দাবিদার অন্যদিকে আমাদের জন্যও গৌরবের।’