:: একুশে প্রতিবেদক ::
চট্টগ্রাম: ‘ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় দৃশ্য এটি, আমি গুরুতর আহত। আমাদের দলের দুই নারী নেত্রীর সহায়তায় কোনোভাবে একটি বাসে উঠেছিলাম। সেদিন আমার জীবন রক্ষা করার জন্য তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। যখন আমি হাসপাতালের পথে তখন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মনে হচ্ছিল আমার সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যদি আর এক ঘণ্টা দেরি হতো তাহলে সেদিন অন্যকিছু হয়ে যেতে পারতো। এখনো আমার শরীরের নিচের অংশে ৪০টি স্প্রিন্টার আছে। আমাদের সবার উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে সেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস এটি। বুধবার বিকেল ৫ টার দিকে নিজের ফেসবুকে ইংরেজিতে এই স্ট্যাটাসের সঙ্গে দুর্লভ ছবিটি জুড়ে দেন তিনি।
ছবিতে দেখা যায়, গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ রক্তে রঞ্জিত। তাঁর সারা শরীরে রক্ত ঝরছে। রক্তে লাল হয়ে গেছে পরনের শার্ট। কাঁদছেন হাছান মাহমুদ। খুলে গেছে শার্টের বোতাম। এমন দৃশ্যেই দলের দুই নারী নেত্রীর কাধে ভর দিয়ে হাসপাতালের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। হাছান মাহমুদের সাহায্যে এগিয়ে আসা সেই দুই নারী নেত্রীর একজন অ্যাডভোকেট রুবিনা মিরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে ঢাকা জজকোর্টে আইনপেশায় নিয়োজিত আছেন তিনি।
অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এই ছবি ও স্ট্যাটাস দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইক-কমেন্টে ভরে উঠে ফেসবুক। সহানুভূতি, সহমর্মিতা জানানোর পাশাপাশি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় রাজনীতিতে হাছান মাহমুদের ত্যাগ ও অবদান স্মরণ করতে দেখা যায় অনেককেই। ফেসবুকের বাইরে রাজনৈতিক মহলেও এই নিয়ে হচ্ছে আলোচনা, মূল্যায়ন। সেই মূল্যায়ন থেকে বেরিয়ে আসছে নানা কথা, নানা তথ্য।
বলা হচ্ছে, সেদিন গ্রেনেড হামলার সময় দলের যে ক’জন নেতা শেখ হাসিনাকে রক্ষার জন্য মানবব্রহ্ম তৈরি করেছিলেন তাদের একজন হাছান মাহমুদ। এক-এগারোর সময় দলের বেশিরভাগ নেতা যখন আত্মগোপনে কিংবা সংস্কারপন্থীর ভূমিকায়, তখন হাছান মাহমুদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ান। শেখ হাসিনার গ্রেফতারের পর প্রতিদিন গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে দেশবাসীকে কারান্তরীণ শেখ হাসিনার খবর জানানোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব রক্ষা ও নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দিতেন।
আর এসব করতে গিয়ে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকারের বিভিন্ন হুমকি ও রক্তচক্ষুর মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। প্রতিনিয়ত তাড়া করে গ্রেফতার ও গুমআতঙ্ক। তবুও এক মুহূর্ত্বের জন্য তিনি ছেড়ে যাননি আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ প্রধানকে।
এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে চারপাশে চলমান চক্রান্তের নীল-নকশা, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নানা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব কণ্ঠ, প্রতিবাদের মানুষ ড. হাছান মাহমুদ। প্রতিদিন বক্তৃতা, বিবৃতি ও গণমাধ্যমে কথা বলছেন তিনি।
এজন্য নিয়ত তাকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিত্যনতুন হুমকির। আর এই হুমকি নিয়েই শেখ হাসিনার মিশন-ভিশন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছেন এই মানুষটি, প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন আওয়ামী লীগের অন্যতম ‘সিপাহশালার’ তিনি।