রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

তারেক রহমানের শিক্ষিকার বিস্ময় !

প্রকাশিতঃ ২৫ মার্চ ২০১৭ | ২:৩৬ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম : বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় অর্থপাচারসহ নানা বিতর্কিত ভূমিকায় ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক মাজেদা বেগম। তিনি বলেন, তারেক রহমানের শুরুটা ছিল অসাধারণ। নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা ও মিতব্যয়িতার মাধ্যমে জীবন শুরু করা তারেক রহমান ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে এতটা নিন্দিত মানুষ হয়ে উঠবেন কখনো ভাবেননি তিনি।

মাজেদা বেগম দীর্ঘদিন ধরে কানাডা প্রবাসী। সম্প্রতি ছুটিতে তিনি দেশে আসেন। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে মেয়ের বাসায় তারেক রহমান নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। এসময় তিনি নানা স্মৃতিচারণ করেন তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানের পরিবার নিয়ে।

মাজেদা বেগমের বাড়ি কুমিল্লা শহরের ঝাউতলায়। ১৯৫৯ সালে কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন তিনি। এরপর ১৯৬০ সালে লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা সরকারি কর্মকর্তা আবু নাছেরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে স্বামীর অনুপ্রেরণায় তার কর্মস্থলের সুবাদে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রিতে অনার্সে ভর্তি হন মাজেদা বেগম। কিন্তু লেখাপড়ার মাঝপথেই গতি পরিবর্তন। অনার্স বাদ দিয়ে পাস কোর্সে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেন।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর স্বামীর সঙ্গে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭২ সালের মার্চের শুরুতে কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট পরিচালনাধীন ইস্পাহানি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারি শিক্ষিকা পদে পরীক্ষা দেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে মুখোমুখি হন ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের তৎকালীন ব্রিগেড কমান্ডার জিয়াউর রহমানের। পদাধিকার বলে জিয়াউর রহমান ছিলেন ইস্পাহানি স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান। সে হিসেবে নিয়োগ কমিটির প্রধানও তিনি। মেধার জোরে জিয়াউর রহমানের হাতেই নিয়োগ পেয়ে পরদিনই সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন মাজেদা বেগম।

জুন মাসে ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ পদে পদোন্নতি পাওয়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন মাস পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমানকে। জিয়াউর রহমান নিজেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকার্যক্রম তদারকি করতেন। সপ্তাহে একবার হোস্টেল শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের সঙ্গে ডাইনিংয়ে বসে খেতেন। সেই সুবাদে জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ডাইনিংয়ে একাধিকবার খাবার সুযোগ হয়েছিল মাজেদা বেগমের। গিয়েছেন জিয়াউর রহমানের ক্যান্টনমেন্টের বাসায়। খালেদা জিয়ার সঙ্গেও গড়ে উঠে ঘনিষ্ঠতা।

উপরের ক্লাশে পড়ানোর পাশাপাশি যেসব শিক্ষক শিশুবান্ধব তাদের দিয়ে কেজি ওয়ান, কেজি টু-র ক্লাশও করাতেন অধ্যক্ষ। সেই হিসেবে মাজেদা বেগমকেও মাঝে মাঝে শিশুদের ক্লাশ নিতে হতো। এসময় কেজি টুতে জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমানকে পেয়েছিলেন মাজেদা বেগম।

মাজেদা বেগম জানান, ‘ক্লাশে তারেক রহমান অনেক শান্তশিষ্ট ছিলো। নিয়মিত হোমওয়ার্ক করতো। ক্লাসে ভালো রেসপন্স করতো। ক্লাশের খাতায় উভয় পৃষ্ঠায় লেখার নিয়ম না থাকলেও তারেক রহমান উভয় পৃষ্ঠায়ই লিখে আনতো। এ নিয়ে একদিন তারেককে প্রশ্ন করি। জবাবে তারেক জানায়, বাবা বলেছেন, মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। কাগজ নষ্ট করা যাবে না। তাই কাগজের দুপাশে লিখতে।

একজন ব্রিগেড কমান্ডারের শিশুসন্তানের মুখে এমন কথা শুনে বিস্মিত হন শিক্ষক মাজেদা বেগম। তিনি ভাবেন, বিনাপয়সায় পাওয়া কাগজ ব্যবহারেও সন্তানকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক। সবেমাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। গরিব দেশ, চারদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে সাশ্রয়ী ও কৃচ্ছতাসাধনে অভ্যস্ত হতে হবে। সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিবারের এই শিক্ষা মাজেদা বেগমকে আপ্লুত করে। তিনি বিশ্বাস করতেন- একদিন এই শিশু তারেক অনেক বড় মানুষ হবে।

৪৪ বছর পরে এসে সেদিনের শিশু তারেক রহমান আর আজকের তারেক রহমানের মাঝে বিস্তর ফারাক দেখে রীতিমত বিস্মিত মাজেদা বেগম। তিনি বলেন, অসীম ক্ষমতা মানুষকে কতটা বদলে দিতে পারে, নিন্দিত করে তুলতে পারে তার বড় উদাহরণ আজকের তারেক রহমান। তারেক রহমান অনেক ‘বড়’ হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ‘মানুষ’ হতে পারেননি। তাই প্রিয় ছাত্রের আজকের এই অবস্থায় কষ্ট পান, নিঃশ্বাস ফেলেন মাজেদা বেগম।