রেলের স্মৃতিজাগানিয়া সমৃদ্ধির চনমনে ইতিহাস

খন রঞ্জন রায় : রেলযাত্রার দুই অঞ্চল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগ আর অধিক সংখ্যক যাত্রী পরিবহন নিয়ে পূর্বাঞ্চল। পদ্মার পশ্চিম পারের অংশটুকু নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল। ইদানীং দুই অঞ্চলেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেল দুর্ঘটনা। রেলযাত্রা ও পরিবহনকে আতংকগ্রস্ত করছে। অথচ রেলযাত্রার সাথে জড়িয়ে আছে মানুষের দৃষ্টিসুখজাগানিয়া বিশেষ কিছু অনুভূতি। রোমাঞ্চকর, ঝুটঝামেলাহীন বিশেষ স্মৃতি।

সিনেমার প্যানশটের মতো চোখের সামনে দিয়ে মুহূর্তে বেরিয়ে যায় নদী-নালা, পাহাড়-জঙ্গল, ফসলের মাঠ, নগর-বন্দর। কখনো ধুঁধু বিল, দূরে পানি টলটলে ঝিল, আরো দূরে হিজল-তমাল, সুপারির সারি। রেলওয়ে যুগে যুগে দেশ-বিদেশের কবি-সাহিত্যিকদের মনোভূমিতেও প্রভাব বিস্তার করেছে। বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থাতেও জাতীয়ভাবে রয়েছে এক ঐতিহাসিক উজ্জ্বল স্মৃতিজাগানিয়া সমৃদ্ধির চনমনে ইতিহাস।

১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা ও জগতির মধ্যে ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টিম রেলওয়ের ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ লাইন চালুর মাধ্যমে রেলওয়ের অভিষেক ঘটে এ বাংলা ভূখণ্ডে। ১ জানুয়ারি ১৮৭১ দর্শনা থেকে রেললাইন গোয়ালন্দ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। ১৮৭৪ থেকে ১৮৭৯ সাল এ পাঁচ বছরে পাকশী থেকে চিলহাটি, পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর, পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া এবং দামুকদিয়া থেকে পোড়াদহ পর্যন্ত রেললাইন চালু হয়। ১৮৮২ সালে বেঙ্গল সেন্ট্রাল রেলওয়ে কোম্পানি খুলনা বেনাপোল রেললাইন নির্মাণ করে। ১৮৮৫ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের মধ্যে ১৪ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার মিটারগেজ রেললাইন যাতায়াতের জন্য চালু হয়। একই বছর ঢাকা ও ময়মনসিংয়ের মধ্যেও রেলচলাচল শুরু হয়। ১৮৯০ সালে চালু হয় আসাম বেঙ্গল মিটারগেজ রেললাইন।

১৮৯৫ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা (১৪৯ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার) এবং লাকসাম-চাঁদপুর (৫০ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার) মিটারগেজ লাইন চালু হয়। সে বছরের ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া এবং আখাউড়া থেকে করিমগঞ্জ (১৮৯৬), ময়মনসিংহ-জগন্নাথগঞ্জ (১৮৯৯), সান্তাহার থেকে ফুলছড়ি (১৯০০), লাকসাম-নোয়াখালী (১৯০৩), কাউনিয়া- বোনারপাড়া (১৯০৫), আখাউড়া-টঙ্গী (১৯১৪) এবং কুলাউড়া-সিলেট (১৯১৫) সেকশন চালু হয়। ১৯১৬ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে সারা-সিরাজগঞ্জ, গৌরীপুর-ময়নসিংহ-নেত্রকোনা এবং খুলনা-বাগেরহাট রেললাইন চালু হয়। শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ লাইন চালু হয়। শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ লাইন হয় ১৯২৮ সালে। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী, ১৯৩০ সালে হাটহাজারী-নাজিরহাট এবং ১৯৩১ সালে ষোলশহর-দোহাজারী সেকশন চালু হয়। ১৯৩৭ সালেল ৬ ডিসেম্বর মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত হয় রাজা ষষ্ঠ জর্জ রেলওয়ে সেতু, যা ভৈরববাজার ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সংযুক্ত করে। ১৯৪১ সালে জামালপুর থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাট রেললাইন চালু হয়।

১৮৮৪ সালে ব্রিটিশ সরকার এই ইস্টার্ন বেঙ্গলকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে এনে নাম দেয় ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে। তখন বিশ্ববাজারে সোনালি আঁশ পাটের ব্যাপক চাহিদা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যও ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে এ অঞ্চল থেকে পাটের জোগান দিতে। তবে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছিল খরস্রোতা পদ্মা। তাই পরিকল্পনা হয়েছিল পদ্মার ওপর দিয়ে রেলসেতু নির্মাণের। সেটা বাস্তবায়িত হতে বেশি সময় লাগেনি। পদ¥ার ওপর তৈরি হওয়া ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ। ভারত বিভাগের পর ২১ এপ্রিল ১৯৫১ যশোর দর্শনা এবং ১৯৫৪ সালের অক্টোবর সিলেট-ছাতক বাজার লাইন চালুর মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান যৌথ সীমান্ত রেলওয়েপথকে পৃথক করা হয়। এর ৪৪ বছর পর ২৩ জুন ১৯৯৮ জয়দেবপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু অবধি বাংলাদেশে প্রথম রেললাইন নির্মিত হয়।

বিভিন্ন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন স্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখনকার পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান উত্তরাধিকারসূত্রে পায় দুই হাজার ৬০৬ দশমি ৫৯ কিলোমিটার রেললাইন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে রেলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টলেশনস ধংসপ্রাপ্ত হয়। এর মধ্যে ছিল পাঁচ শতাধিক ব্রিজ চারটি মেজর ব্রিজ বা কি-পয়েন্ট ইনস্টলেশন, এক হাজার ১৪ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক, ৩৪টি স্টেশনের ইন্টারলিংকসহ সিগন্যালিং ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, ১৪০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), ৭৭২টি যাত্রীবাহী কোচ, এক হাজার ৪৪৮টি মালবাহী ওয়াগন, ২০টি মেরিন ভ্যাসেল, রোপওয়ে এবং ১০ হাজার ৩০০টি সার্ভিস ও রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিং পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধ্বংসযজ্ঞ রেলওয়ের কাঠামোকে পঙ্গু করে ফেলে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী দীর্ঘ সময় ছিল রেলওয়ের জন্য বেঁচে থাকার আপ্রাণ প্রচেষ্টা বা পিরিয়ড অব স্ট্রাগল স্বল্পমেয়াদী বঙ্গবন্ধু সরকার রেলকে নিয়ে মহাপরিপকল্পনা এঁকেছিলেন। এরপরের কলংকজনক ইতিহাস তো সবারই জানা। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে রেলের কপালে নেমে আসে দুর্গতি। একমাত্র যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে রেল সংযোগ ছাড়া বড় ধরনের কাজ রেল খাতে হয়নি।

রেল আজকের পৃথিবীর অনেক দেশের অন্যতম গণপরিবহন। শহরের ভেতরে, শহর থেকে গ্রামে, দেশে থেকে দেশে ছুটে চলছে রেল। দেশে দেশে রেলই সবচেয়ে নির্ভরশীল পণপরিবহন। প্রতিযোগিতা চলছে গতি- দ্রুতগতি আরাম, সম্প্রীতি- সৌহার্দ্য ব্যবস্থা জড়িয়ে। প্রতিযোগিতামূলক খরচে অল্পসময়ে যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছে একদেশ থেকে আরেক দেশে, এক মহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে অন্য এক মহাদেশে। চীনা রেল কর্তৃপক্ষ, বেইজিং থেকে গুয়াংজু পর্যন্ত দু’হাজার কিলোমিটার রুটে চালু করেছে বুলেট ট্রেন। চালাচ্ছে উড়াল ট্রেন, পাতাল রেল। লন্ডনে বিশ্বের প্রথম পাতালরেল নির্মাণ হয়েছিল ১৮৬৩ সালের ৯ জানুয়ারি।

উপমহাদেশে প্রথম পাতালরেল চালু হয় কলকাতা শহরে, ১৯৮৪ সালে। এটি ভারতের প্রথম মেট্রোরেল পরিষেবা দ্বিতীয়টি ‘দিল্লি মেট্রো’ চালু হয় ২০০২ সালে। এখন আবিষ্কার হয়েছে টিউবট্রেন যা সব যানকে ছাড়িয়ে যাবে। এই ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৬৫০০ কিলোমিটার।

বিশ্বের বহুদেশে রেলওয়ে রাষ্ট্রীয় খাতের অংশ। যাত্রীদের আর্শিবাদস্বরূপ। দুর্ভাগ্য আমাদের, লোকসানের ধুয়া তুলে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১০ সাল সময়ে রেলওয়ের ৬৫টি মেইল ও লোকাল ট্রেন ছেড়ে দেয়া হয়েছে বেসরকারী খাতে। আয়-ব্যয়ের ঘাটতি ব্যবধানকে সমন্বয় করতে নিকট অতীতে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় মোটা অঙ্কের বিনিময়ে অনেক দক্ষ ও কারিগরী জ্ঞানসম্পন্ন কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়। শুধু কারিগরী জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কর্মচারী স্বেচ্ছায় গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসর নেয়ার কারণে বর্তমানে দক্ষ জনবলের অভাবে অনেক স্টেশন বন্ধ এবং সময়ানুবর্তিতা বজায় রেখে নিরাপদ ট্রেন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সাথে বাড়তে থাকছে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন ছয় শতাধিক ছোটবড় ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন রুটের ট্রেন। সেতু ছাড়াও রেললাইন, রেলইয়ার্ড, ইঞ্জিন, বগি এবং রেলক্রসিংগুলো নিয়মমাফিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের অভাবে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

গত এক বছরে মেইন লাইনে ৬৯টি, শাখালাইনে ৩৭টি, লুপলাইনে ৬টি এবং ইয়ার্ডে ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে আন্তনগর, মেইল ও লোকাল মিলে সারা দেশে ২৮১টি ট্রেন চলে। এর বাইরে চলে কিছু কনটেইনার ও মালবাহী ট্রেন। ইঞ্জিনের তুলনায় বেশি ট্রেন চলাচল করার কারণে একই ইঞ্জিন বিরামহীনভাবে ব্যবহার করতে হয়। ফলে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটছে বেশি। অতি সম্প্রতি অল্প কিছু কোচ সংযুক্ত হলেও সারাদেশে চলাচলকারি ট্রেনসমূহে মোট দেড় হাজারের বেশি কোচ নেই।

সারাদেশে রেলস্টেশন আছে ৪৪০টি। রেলকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পাকশি ও লালমনিরহাটÑএই চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৭টি, চট্টগ্রামে ২১টি, পাকশিতে ৪৪টি ও লালমনিরহাটে ২৭টি স্টেশন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আংশিকভাবে বন্ধ আছে ঢাকা বিভাগে সাতটি, চট্টগ্রামে সাতটি, পাকশিতে ১৩টি ও লালমনিরহাটে ১২টি স্টেশন। সব শ্রেণী মিলিয়ে রেলওয়েতে অনুমোদিত কর্মীপদ আছে ৪০ হাজার ২৬৪। বর্তমানে কর্মরত আছে ২৩ হাজার ৫৭২টি। শূন্যপদ ১৬ হাজার ৬৯২। স্বল্পব্যয়ের আরামদায়ক জনপ্রিয় এই পরিবহনকে অবহেলা আর অব্যবস্থাপনায় মৃতপ্রায় অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে দেশে ২০ হাজার কিলোমিার সড়ক-মহাসড়ক তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু রেলের আয়ুষ্কালকে জরাজীর্ণ করা হয়েছিল। আশার কথা, আনন্দের বার্তা জনবান্ধব জননেত্রীর বর্তমান দুর্দান্ত দুরন্ত নেতৃত্ব রেলকে পুণর্জন্ম দিচ্ছেন। ভূমি থেকে গড় ১৫ মিটার উঁচুতে খুঁটির উপর সার্কুলার আকারে হচ্ছে উড়াল রেললাইনের কাজ। চালু হওয়ার অপেক্ষায় জনঘনত্বের ঢাকা মেট্রোরেল। স্বপ্নের পদ্মায় রেল চলার ব্যবস্থায় কাজ চলছে দুর্বার গতিতে। চলছে দেশের ওয়ার্কশপগুলো আধুনিকীকরণ করে সেখানে লোকোমোটিভ, কোচ ও ওয়াগন এসেম্বলিংয়ের প্রয়োজনীয় সংস্কার। মিটারগেজ কনক্রিট স্লিপার তৈরি প্লান্টের ক্যাপাসিটি উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে ব্রডগেজ ও ডুয়েলগেজ কনক্রিট স্লিপার তৈরির প্লান্ট। রেলওয়ের ব্রিজ ওয়ার্কশপে নির্মাণের যাবতীয় নির্দেশনায় ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। কোচ, ওয়াগন মেরামত তৈরির ব্যবস্থা নিতে সৈয়দপুর কারখানাকে পুরোদমে, পুর্ণোদ্যমে কাজ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নিকট অতীতের দিকে তাকালে দেখতে পাই, ১৯৫৯ সালে আন্তর্জাতিক সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতিসংঘে একটি সিদ্ধান্ত হয়। উদ্দেশ্য ছিল, এশিয়া অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি এশিয়াকে ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করা। বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের সভায় এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প নামে আন্তর্জাতিক সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের কর্মসূচিটি অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তী সময়ে এশিয়ান ল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ইফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট নামে নেওয়া একটি কর্মসূচির আওতায় ৩টি লক্ষ্য চিহ্নিত করা হয়- এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ও স্থল যোগাযোগ সুবিধা উন্নয়ন। এশিয়ার ৩২টি দেশের ৫৫টি রুটে এই হাইওয়ে তৈরি করা হবে। ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য আছে ১ হাজার ৮০৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় ২০তম দেশ হিসাবে- ৯ নভেম্বর ২০০৭ সালে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বিশ্ব সংযুক্তির এই লাইনে।

রাশিয়াসহ মধ্য এশিয়া ও ককেসাস অঞ্চলের আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, জর্জিয়া, কিরঘিস্তান, তাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের জন্য ১৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ এশিয়া ও ইরান, তুরস্ক অঞ্চলের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার মধ্যে ২২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার ট্রান্স এশিয়ান রেলপথের সংযোগ থাকবে। এই রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে এখন এশিয়া ও ইউরোপের ২৬টি দেশের সহজ এবং দ্রুততম যোগযোগ স্থাপিত হবে। এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক নির্মাণের মহাপরিকল্পনায় বাংলাদেশ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের উদ্দেশ্য হচ্ছে, পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ রেলওয়েসেবা প্রদান করা।

বিপুল সম্ভাবনাময় এই রেলওয়েকে উন্নত করতে হলে, অনেক বিষয়েই একসঙ্গে হাত দিতে হবে। বাড়াতে হবে সেবার মান, যোগ করতে হবে দ্রুতগতির জ্বালানিসাশ্রয়ী নতুন নতুন ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ), যাত্রীবাহী কোচ, আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থা, সেই সঙ্গে রেললাইনের পরিধি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়েগুলোতে ডবললাইন স্থাপন করতে হবে। এ জন্য পরিকল্পনা হতে হবে দীর্ঘমেয়াদী। এ ব্যাপারে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে, খুঁজে বের করে দিতে হবে রেলওয়ের “কালো বিড়াল”।

খন রঞ্জন রায় সমাজচিন্তক, গবেষক ও সংগঠক