সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি: সীতাকুণ্ডে টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও দাম না পাওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের। নূন্যতম ১২ টাকা কেজি দরে টমেটো উৎপাদন করে ৬ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। এই উপজেলায় নেই কোনো কোল্ড স্টোরেজ।
দীর্ঘ দিন ধরে এই উপজেলায় কোনো কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় নষ্ট হচ্ছে শতশত কেজি টমেটো, উপযুক্ত দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৩৬০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। শিম চাষ হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর, ফুলকপি চাষ হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে সীতাকুণ্ড মোহন্তের হাট, শুকলাল হাট, বড় দারোগারহাট, বাড়বকুণ্ড, কুমিরা ও ভাটিয়ারি সাপ্তাহিক সবজি হাট ঘুরে দেখা গেছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে হাটে নিয়ে আসেন। সবকটি হাট ঘুরে টমেটোর সরবরাহ বেশি লক্ষ করা গেছে যা বাম্পার ফলনেরই কথা বলে।
সীতাকুণ্ড হাটে কথা হয় গুলিয়াখালীর কৃষক মো. তাহের এর সাথে। তিনি জানান, এ মৌসুমে ৫’শ শতাংশ জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন।সার,বীজ, কীটনাশক, মজুরি সব মিলিয়ে ১৪ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ তার।
বাজারে টমেটোর ভালো দাম পাচ্ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, মূলধনের এক তৃতীয়াংশই এখনো উঠে আসেনি। মৌসুম শেষের দিকে হলেও লাভের মুখ দেখছি না। প্রায় প্রত্যক হাটেই পানির দরে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। এতো কম দামে টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে যে প্রতি কেজি টমেটো উৎপাদনে যে টাকা খরচ পড়ে তা ওঠে আসা মুশকিল।
সৈয়দপুর ইউনিয়নের শেখের হাটের কৃষক রাসেল বলেন, এ বছর ৪৮ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছি। বেশি টাকায় কীটনাশক ও সার কিনতে হয়েছে। সেচ, শ্রমিকের মজুরি সবমিলিয়ে দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছি। ফাল্গুনের শেষ হতে চললেও আসলের এক চতুর্থাংশের অর্ধেকও ওঠে আসেনি। যে পরিমাণে টমেটো বিক্রি করছি সে অনুযায়ী দাম পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরণের লোকসানে পড়তে হবে।
কৃষক ও কৃষিবিদরা মনে করছেন সীতাকুণ্ডে সংরক্ষণাগার স্থাপন করা হলে কৃষকরা পেতেন উপযুক্ত দাম সেই সাথে মৌসুমের যেকোন সময় অপ্রতুল সবজিও কিনতে পারত ক্রেতারা।
সীতাকুণ্ড নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব লায়ন গিয়াস উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চল এলাকাটি সবজির রাজ্যখ্যাত। প্রতিবছর এখানে ব্যাপক সবজি উৎপাদন হয়। বিশেষ করে শিম ও টমেটোর বিশাল উৎপাদন ক্ষেত্র এই সীতাকুণ্ড। দীর্ঘদিন এখানে উদ্যোগের অভাবে হয়নি কোনো কোল্ড স্টোরেজ। ফলে সীতাকুণ্ডের প্রথম শ্রেণির ও জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষকেরা ন্যার্য দাম না পেয়ে প্রত্যক বছর বহু টাকা লোকসান গুনছে। সংরক্ষণাগার কিংবা সসের কোন কারখানা না থাকায় শতশত কেজি টমেটো নষ্ট হয়ে যায় বা পঁচে যায়।
তিনি আরো বলেন, কোল্ড স্টোরেজ করা হলে সেটির রক্ষণ ব্যয় বাদ দিয়েও লাভবান হতো কৃষকরা।
তবে ভরা মৌসুমে ফলন বেশি হওয়ায় বাজারে দাম একটু কম থাকে বলে মনে করছেন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রঘু নাথ নাহা। তিনি বলেন, কোল্ড স্টোরেজ থাকলে কৃষকরা তাদের সবজি সংরক্ষণ করে দাম না পাওয়া পর্যন্ত ধরে রাখতে পারতো, একইসাথে বছরের অন্য সময়ও মৌসুমি সবজি বাজারে পাওয়া যেতো। কিন্তুু সীতাকুণ্ডে কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় তা হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের বিষয়ে উধ্বতন মহলে জানানো হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের কোন খবর আপাতত জানা নেই।