‘হাদিয়া’ দিলেই পুত্র সন্তানের নিশ্চয়তা দেন কুতুবী হুজুর!

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার এ যুগে সন্তানসম্ভবা কোনও নারীর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিসকেরাও বলে দিতে পারেন আগত সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে হবে। কিন্তু মায়ের ধারণ করা সন্তান ছেলে হলে মেয়ে বানানো যায় না। ঠিক মেয়ে হলে ছেলে সন্তানে রূপান্তর করা যায় না।

কিন্তু চট্টগ্রামে এমন একজন কবিরাজের সন্ধান পাওয়া গেছে, যিনি টাকা ‘হাদিয়া’ দিলেই মায়ের গর্ভে থাকা মেয়েকে ছেলে সন্তানে রূপান্তর করতে পারেন। আর এই অসাধ্য সাধন যে কবিরাজ করছেন তার নাম মাওলানা ফরিদুল আলম কুতুবী।

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার পশ্চিম ফরিদের পাড়া এলাকায় কথিত এ কবিরাজের আস্তানা। পুত্র সন্তান লাভের আশায় প্রতিদিন তার আস্তানায় অসংখ্য নারী-পুরুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।

অভিযোগ আছে, কোরআনি ঝাঁড়ফুকের নামে কথিত এ কবিরাজের হাতে প্রতিদিন নিঃস্ব হচ্ছেন অনেক নারী। সরলতার সুযোগ নিয়ে ওই কবিরাজ হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। তার ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হওয়ার কথা একুশে পত্রিকাকে জানিয়েছেন অনেক নারী।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নরেশ মল্লিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার ডা. বিজয় কৃষ্ণ সরকার বলেন,  ‘মায়ের গর্ভে থাকা কন্যা সন্তানকে ছেলে সন্তানে রূপদান করার অভিনব  ‘অফার’ ফরিদুল আলম কুতুবির ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। তার এ চিকিৎসার পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এটা স্রেফ প্রতারণা।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চান্দগাঁও থানার পশ্চিম ফরিদের পাড়ায় থাকেন ফরিদুল আলম কুতুবী। তিনি সেখানকার আকবর মুন্সী জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন। বেশ কিছুদিন আগে তিনি সেই ইমামতির চাকরি ছেড়ে মসজিদের পাশেই একটি ঘরে আস্তানা গাড়েন। সেখানে আসরের নামাযের পর থেকে এশা পর্যন্ত ঝাঁড়ফুকের মাধ্যমে বিভিন্ন নারীদের চিকিৎসা করেন। মায়ের গর্ভে থাকা মেয়ে সন্তানকে ছেলে সন্তান বানিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে হাতিয়ে নেন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রোগী সেজে  ফোন করা হয় ফরিদুল আলম কুতুবিকে। এসময় তিনি প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা জানতে চান। ‘বিয়ের পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুটি কন্যা সন্তান হয়েছে। এক মাস অতিবাহিত হলো-আমার (প্রতিবেদক) স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। আমি ছেলে সন্তান চাই। আপনাকে (কুতুবি) টাকা পয়সা বা হাদিয়া কী দিতে হবে – উত্তেজিত কণ্ঠে কুতুবী হুজুর প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনার স্ত্রী নিয়ে আমার আস্তানায় চলে আসুন। মোবাইল ফোনে এত কথা বলা সম্ভব নয়।’

এরপর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন কুতুবী হুজুর। ঠিক ১০ মিনিট পর ফিরতি ফোন করে ফরিদুল আলম কুতুবী সবিস্তারে জানতে চান প্রতিবেদকের কাছে। সব শুনে পুত্রসন্তান এনে দিতে পারবেন জানিয়ে দ্রুত তার আস্তানায় যেতে বলেন স্ত্রীকে নিয়ে।

এক পর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফরিদুল আলম কুতুবি বলেন, ‘আমি কোরআনের আলোকে চিকিৎসা করি। নারীদের পিরিয়ড বন্ধ হওয়ায় সাথে সাথে যেগাযোগ করলে কুরআনি চিকিৎসার মাধ্যমে কন্যা সন্তানকে ছেলে সন্তানে রূপদান করা যায়। আমি ভণ্ড বা প্রতারক নই। দেশের অনেক চিকিসক বা করিবাজের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ উঠে। আপনার ভাল না লাগলে আমার কাছে আসবেন না।’