দুদক ‘দায়মুক্তি’ দিলেও জিয়াউলকে ছাড়ছে না খাদ্য অধিদপ্তর


মোহাম্মদ রফিক : ২০১৪ সালে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে খাদ্য কর্মকর্তা জিয়াউল করিম মো. তারেকের বিরুদ্ধে। তখন অভিযোগটির সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

৩ বছর পর ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন জানিয়ে দেন জিয়াউলের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের সত্যতা মিলেনি।

দুদকের কাছ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সময় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন জিয়াউল করিম মো. তারেক। বর্তমানে

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিয়াউল করিম মো. তারেকের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। চার বছর পর ২০১৭ সালে তাকে দায়মুক্তি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের (চলাচল ও সংরক্ষণ) সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

বর্তমানে জিয়াউল করিম মো. তারেকের বিরুদ্ধে আবারও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও চাকুরিবিধি অমান্য করে বিদেশে ভ্রমণের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বিভাগীয় মামলা রুজু করেন। তবে এই কর্মকর্তা এখন আর খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে নেই। তিনি বর্তমানে অবসরকালীন ছুটিতে (এলপিআর) আছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আনোয়ারা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে দায়িত্ব পালনের সময় ২০২০ সালে জিয়াউল করিম মো. তারেকের বিরুদ্ধে মেসার্স আল হোসাইন অটো রাইস মিলের মালিক মো. ইউসুফ লিখিতভাবে খাদ্য অধিদপ্তরে নানা অভিযোগ করেন।

অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহ জামানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।

তদন্তের অংশ হিসাবে জিয়াউল করিম মো. তারেককে আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন তথ্য ও রেকর্ডপত্র জমা দিতে নির্দেশ দেয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু তিনি তথ্যাদি না দিয়ে কমিটিকে অসহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ উঠে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র একুশে পত্রিকাকে জানান, চাকুরিতে যোগদানের পর থেকে জিয়াউল এবং তার স্ত্রী ও সন্তানের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ এবং তার মূল্যমানসহ অর্জিত অর্থের উৎস সম্পর্কে তথ্য দিতে বলা হয়। কিন্তু জিয়াউল করিম তারেক নিজের কোন স্থাবর সম্পত্তি নেই বলে তদন্ত কমিটিকে জানান।

পরে জিয়াউলের দাখিল করা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন পর্যালোচনা করে দেখেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। উক্ত আয়কর রিটার্ন ফরমে মোট ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ আছে। পাশাপাশি বিএস খতিয়ান নম্বর ১০৩৮৪ মৌজা- ঝিলংজা কক্সবাজার ২ দাগে ১০ শতাংশ, বিএস খতিয়ান নম্বর ৩২০১ মৌজা কাকারা চকরিয়ায় ৪০ শতাংশ জায়গা জিয়াউলের নামে রেকর্ডভুক্ত পাওয়া যায়।

অভিযোগে আছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তারেক তার স্ত্রী ও মায়ের নামে ৬০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। চট্টগ্রাম জিপিও থেকে এসব সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেন তিনি। এ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য তার মা ও স্ত্রীর এনআইডির কপি তদন্ত কমিটির নিকট দাখিল করতে বলা হলেও তা না দিয়ে টালবাহনা করেন জিয়াউল।

অভিযোগ আছে, চাকুরিবিধি অমান্য করে তারেক একাধিকবার ওমান, ইরান, বাহরাইন ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি পাসপোর্টের কপি দিতে বললেও তা দেননি জিয়াউল।

এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ মুজিবুর রহমান আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগ তদন্তে কমিটিকে সহযোগিতা না করার দায়ে জিয়াউল করিমের বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে বিধি অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের (চলাচল ও সংরক্ষণ) সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিয়াউল করিম মো. তারেক একুশে পত্রিকাকে বলেন. ‘তদন্ত কমিটির কাছে আমি সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের একটি কুচক্রী মহল সাংবাদিকদের বিভ্রান্তমূলক তথ্য দিচ্ছে। ৬০ লাখ টাকা তো দূরের কথা ৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রও আমার কাছে নেই। আমি কোন দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত নই।’

তাহলে আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা কেন হলো? এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি জিয়াউল করিম মো. তারেক।