শান্তনু চৌধুরী : বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে তেমন উৎসাহ উদ্দীপনা ধরতে গেলে এক দশক ধরেই নেই। কিন্তু সম্প্রতি যেন সে পালে হাওয়া লেগেছে। বিরোধীপক্ষ না থাকাতে সরকারি দলের লোকজন নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। তবে এতে আনন্দ পাচ্ছেন পাঠকদর্শক। করোনার এই মাস্কবদ্ধ সময়ে একটু প্রাণখুলে হাসতে পারাটা নিশ্চয় কম আনন্দের নয়। পৌরসভা নির্বাচনের পাশাপাশি বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও। নির্বাচনকে ঘিরে খুনোখুনির ঘটনাও হয়েছে। ফলাফল যদিও আগে থেকে আঁচ করা যায় তবুও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বেশ বেশিই বলা চলে।
আমার কলামেও একটু নির্বাচনী প্রচার চালাই। সংরক্ষিত আসন ১০ এর ১১, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করছেন রাধারানী দেবী। সে আমার বন্ধু। কিন্তু ১৮ জানুয়ারি কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানলাম, তাকে শুধুমাত্র হিন্দু বলে গালিগালাজ করা হয়েছে এবং নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে একটা সাম্প্রদায়িক আবহ তৈরি করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে সেখানকার হিন্দু সমাজ। এছাড়া রাধা দেবী একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সে অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
নির্বাচন এলে সবকিছুর মধ্যে যেমন উৎসবের ভাব আসে তেমনি চায়ের দোকানে আড্ডার সাথে পান বিড়ি সিগারেট খাওয়ারও ধুম পড়ে। ছেলেবেলায় আমরা গ্রামে শুনেছি, ‘আধা চা-আধা বেলা ঝুন্টু ভাইয়ের শেষ খেলা’। আর কে না জানে চট্টগ্রামে বেলা বিস্কুটের একটা আলাদা সুনাম রয়েছে আর ঝুন্টু হচ্ছেন নির্বাচনের প্রার্থী। বাঙালি আর যাই হোক রসনাবিলাসে যে এগিয়ে সেতো বেশ আগে থেকেই সবার জানা। বাঙালির রসনাবিলাস নিয়ে বেগম রোকেয়া লিখেছিলেন, ‘তৎকালীন মুসলিম সমাজের রন্ধনশালার ত্রাহি ত্রাহি গন্ধে আচারনিষ্ঠ ব্রাহ্মণেরও পৈতা ছেঁড়ার সাধ জাগে।’
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন ‘হেমন্তের নতুন ধান খেয়ে হাঁসের গায়ে চর্বি হয়, সেই হাঁস নতুন আলু দিয়ে ভুনা করে শীতের সকালে চালের রুটি দিয়ে খাওয়ায় যে কী স্বাদ’ অথবা ‘চাকচাক করে কাটা আলু ঘিয়ে ভেজে তার সঙ্গে ভাজা শুকনামরিচ মাখিয়ে ভাতের সঙ্গে খাওয়া’। চীনারা নানা উল্টাপাল্টা জিনিস খায় বলে দুর্নাম রয়েছে। বিশেষ করে উহান থেকে করোনা ছড়ানোর পর সেটি আরো বেশি আলোচনায় আসে। তবে আমি সেটা মানতে নারাজ।
খাদ্যাভাস গড়ে উঠে রুচি নিয়ে, খেতে খেতে কোনো একটি খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পর। তাই আমার কাছে যেটি ভালো খাবার সেটি অন্যের কাছে অরুচিকর হতেই পারে। তাই যে তেলাপোকার জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ সেটিও কারো কারো প্রিয় খাবার বটে। এমনকি জলজ্যান্ত তেলাপোকা খাওয়ারও প্রতিযোগিতা হয় বিশ্বে। ফ্লোরিডার এক পোষা প্রাণীর দোকানদার আয়োজন করেন এমনই এক তেলাপোকা খাওয়ার প্রতিযোগিতার। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পাবেন একটি মূল্যবান পোষা অজগর। এতে একজন ৩৫টি বড়সড় কেঁচো ও এক বালতি জ্যান্ত তেলাপোকা খেয়ে বিজয়ী হন। কিন্তু বিধিবাম, বিজয়ী আর্কবল্ড লোকটি মারা যান। কারণ খুঁঁজতে গিয়ে প্রথমে অনেকে ভাবছিলেন, হয়তো পোকার প্রতি অ্যালার্জির কারণের তার এই করুণ পরিণতি। কিন্তু লাশের ময়নাতদন্তে জানা গেছে, তিনি দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন।
আসলে প্রতিযোগিতায় খাওয়ার সময় ভদ্রলোক তেলাপোকাগুলোকে ভালোভাবে না চিবিয়ে অতিদ্রুত গিলে ফেলেছিলেন। ফলে জ্যান্ত থেকে গিয়েছিল অনেক তেলাপোকাই। পরে ওই জ্যান্ত তেলাপোকাগুলো ওপরের দিকে উঠে আসার চেষ্টা করতেই শ্বাসরোধে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আর্কবল্ড ছাড়া আর কেউ অবশ্য এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কোনো শারীরিক সমস্যায় পড়েননি। এতো গেল তেলাপোকা খাওয়ার কথা। এবার বলি পিপঁড়া খাওয়ার বিষয়ে। বাংলাদেশের বড় বড় সিনেমা হলগুলোর কথাই ধরা যাক। সিনেমা আর পপকর্ন যেন অভিন্ন জুটি। কিন্তু সব দেশে এই দৃশ্য দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে কলম্বিয়ায় সিনেমা হলগুলোয় পপকর্নের বিকল্প খাবার হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্যাকেটজাত পিঁপড়া। লোকজন সিনেমা হলে ঢোকার সময় প্যাকেটজাত পিঁপড়া নিয়ে যান আর চিবুতে চিবুতে খান।
ব্যাচেলর জীবনে একটা কথা সবাই বলে থাকেন। তাদের নাকি বাঁচিয়ে রাখে ডিম। যেমন, গৃহকর্মী মানে কাজের আপা বা বুয়া আসলো না তো রান্না করবে কে? কোনো রকমে ফুটিয়ে ডিম সিদ্ধ বা ভেজে নিলেই হলো। তবে এই ডিম সিদ্ধ বা ভেজে খাওয়ার মাঝেও নাকি নানা কিছু প্রকাশ পায়। কী সেগুলো? ডিম ভুনা পছন্দ করেন অনেকেই। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের বেশি খাওয়া হয় এটি। রক্ষণশীল, তবে সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে থাকেন এই পদ্ধতিতে ডিম খেতে পছন্দ করা ব্যক্তিরা। দাওয়াতের মধ্যমণি হয়ে না থাকলেও সব দাওয়াতেই থাকেন তাঁরা। তবে মানুষ আপনাকে আপনার কারণেই পছন্দ করে। আপনি যে কারও সঙ্গেই ভালোভাবে মিশে যেতে পারেন। আপনি যদি ডিমভাজি খাওয়া পছন্দ করা একজন নারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার মধ্যে মাতৃসুলভ আচরণ প্রবল।
সবাইকে সান্ত¡না দেওয়া ও এক জায়গায় নিয়ে আসার বিষয়টিতে আপনি দুর্দান্ত। আপনি যদি ডিম সেদ্ধ পছন্দ করে থাকেন, তাহলে চারিত্রিকভাবে আপনি উদ্যমী। আপনি একজন ক্রীড়াবিদ, যিনি অ্যাথলেটদের মতো খেয়ে থাকেন এবং রক্ষক হওয়ার মনস্থির করেন। এতোক্ষণ বললাম মানুষের খাবার নিয়ে, এবার বলি বানরের খাবার নিয়ে! পর্যটকদের এটাসেটা খপ করে নিয়ে যায় বানর। পরে খাবারের বিনিময়ে সেটা ফিরিয়েও দেয়। এটা মোটামুটি পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু তারা যে বেছে বেছে পর্যটকদের সঙ্গে থাকা দামি জিনিসটিই চুরি করে, এটা হয়তো জানা ছিল না অনেকের। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব লেথব্রিজের গবেষকদের করা গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
কানাডার ওই গবেষক দল ইন্দোনেশিয়ার বালিতে উলুওয়াটু মন্দিরে ২৭৩ দিন ধরে বানরের ওপর গবেষণা চালায়। গবেষণায় দেখা যায়, পর্যটকদের কাছে কোন জিনিসটি সবচেয়ে দামি এবং কিসের বিনিময়ে তারা সবচেয়ে ভালো খাবার পেতে পারে, এ বিষয়ে বানরদের পরিশীলিত জ্ঞান রয়েছে। গবেষকেরা বানর ও পর্যটকদের মধ্যে দুই হাজারটি বিনিময় পর্যবেক্ষণ করে এই তথ্য দিয়েছেন। পর্যটকদের জিনিস ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনটি খাবারের ওপর পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকেরা।
তাঁরা দেখেন বানরদের দেওয়া ডিম, ফল ও বিস্কুটের মধ্যে একেক সময় বানর একেকটি নেয়। মানে দামি জিনিসটির বিনিময়ে তারা দামি খাবারটিই নেয়।
এসব বিনিময়ের ঘটনা ধারণ করা ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, চুরি করা জিনিসটি কতটা মূল্যবান, এটা বানরেরা বুঝতে পারে। অনেক সময় পর্যটকদের কাছ থেকে চুরি করা মুঠোফোন, টাকার ব্যাগ ও ক্যামেরার মতো জিনিস তারা আরও ভালো বা দামি খাবার পেতে আটকে রাখে। অভিজ্ঞতা ও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বানরেরা এই জ্ঞান অর্জন করে। অপেক্ষাকৃত কম বয়সী বানরেরা পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারে না।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক