জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত : বাংলাদেশের জন্মদিন অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস যে ২৬ মার্চ, এই তথ্য জানা নেই খোদ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু’র।
আজ বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ।’ লিখে নিজের ফেইসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা ইমু।
সেই স্ট্যাটাসে অনেকেই ‘বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা’ লিখে কমেন্ট করলেও বেশ কয়েকজন সুর মিলিয়েছেন ইমুর সুরে। তারা কমেন্টে লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন, শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ, শুভ জন্মদিন ভালোবাসার বাংলাদেশ, শুভ জন্মদিন প্রিয় মাতৃভূমি, শুভ জন্মদিন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।’
তবে মোহাম্মদ পারভেজ নামে একজন কমেন্টে লিখেছেন, ‘সরকারিভাবে বাংলাদেশের জন্মদিন ২৬শে মার্চ।’
এদিকে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা ইমুর এমন স্ট্যাটাসে অনেকে যেমন হয়েছেন অবাক, তেমনি কেউ কেউ হয়েছেন বিভ্রান্ত।
ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের ঐতিহাসিক ‘প্রোক্লেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স’ এর ঘোষণায় বলা হয়েছিল- “বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা ও সংগঠন করছি এবং এত দ্বারা ইতিপূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণাকে সমর্থন করছি। এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।”
প্রোক্লেমেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্সকেই স্বাধীনতার মূল দলিল বলা হয় এবং সেই কারণেই সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের জন্ম ২৬ মার্চ। বাংলদেশকে যদি ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র বিবেচনা করা হয় তাহলে মুজিবনগর সরকার অবৈধ হয়ে যাবে, কারণ রাষ্ট্র না থাকলে সেখানে সরকারের অস্তিত্ব থাকে না। বাতিল হয়ে যাবে মুজিবনগর সরকারের সমস্ত অর্ডিন্যান্স, চুক্তি ও বাহিনী।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের যাত্রা শুরু না ধরার আরেকটি কারণ হচ্ছে, এই তারিখের আরও দুই সপ্তাহ আগে থেকে বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রদান করে। শুধু তাই নয়, সাংবিধানিকভাবে ২৬ মার্চ থেকেই বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বলেই পাক আর্মিকে দখলদার বলা হয়ে থাকে।
অর্থাৎ আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল ২৬ মার্চ। এর মধ্যখানের ৯ মাস স্বাধীন বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে রেখেছিল পাকিস্তানী আর্মির দল। যার জন্য আমাদের করতে হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। আর ৯ মাস যুদ্ধের পর আমরা পেয়েছি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র।
মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুর এমন কাণ্ডকে ইতিহাস বিকৃতির সমতুল্য মনে করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মনে হয় অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সে এই স্ট্যাটাসটি দেয়নি। বাংলাদেশের অভ্যুদয় বা সৃষ্টি এই চিন্তা করে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে চেয়েছে। তবে এ ধরনেরর কিছু সকলের সামনে তুলে ধরার আগে অবশ্যই সে বিষয়ে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘সে ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল একটি পদে আছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আবেগী হওয়ার সুযোগ নেই। আবেগকে দূরে রেখে তার জেনেশুনে কথা বলা উচিত ছিল। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ভুল তথ্য দিলে কর্মীরা বিভ্রান্ত হয়।’
তিনি বলেন, ২৬ মার্চ, মানে স্বাধীনতা দিবসই বাংলাদেশের জন্মদিন। আর এটা সংবিধানেও উল্লেখ আছে। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। জয়ন্তী মানেই তো জন্মদিন। ইতিহাস নিয়ে সকলে যাতে সঠিক তথ্য জানায় আমি সেই আশাই করবো।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘যদি আমার ভুল হয়ে থাকে তাহলে আমাকে ‘কোটেশন’ দিন! আমারও ভুল হতে পারে, এক্ষেত্রে আমার ভুলটা ‘কোটেশন’ করে দিলে আমি সংশোধন করে নিবো।’
ইমু বলেন, ‘আমার মনে হয় ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশের পতাকা, ভূখণ্ড স্বীকৃত। ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর কাছে স্থাপিত হয়েছে। এই ‘লজিক’ থেকেই আমি স্ট্যাটাসটা দিয়েছি। ২৬ মার্চ যে বাংলাদেশের জন্মদিবস এটা আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনে কোথাও দেখিনি।’
এসব কথা বলার পর ‘প্রোক্লেমেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্সের’ কথা জানানো হলে তিনি বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে জেনে আপনার সাথে আবার কথা বলবো।’
এর কিছুক্ষণ পর প্রতিবেদককে ফোন করেন ইমরান আহমেদ ইমু। তিনি বলেন, ‘আসলে এটা আমার ভুল ছিল। আমি আমার অভিভাবকের কাছে এই বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, আমি ভুল। তার মানে আমি ভুল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চই বাংলাদেশের জন্মদিন।’
পরবর্তীতে সেই স্ট্যাটাসটি নিজের ওয়াল থেকে সরিয়ে ফেলেছেন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান আহমেদ ইমু।