সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

‘ট্যাকটিক্যাল বেল্টে’ ফুটে উঠছে পুলিশের ‘সীমাবদ্ধতা’

প্রকাশিতঃ ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ৫:৪৯ অপরাহ্ন


শরীফুল রুকন : উন্নত বিশ্বের আদলে ‘ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’ পরে দায়িত্ব পালনের প্রথম দিন চট্টগ্রামে পুলিশ সদস্যদের ‘জীর্ণশীর্ণ’ চিত্র চোখে পড়েছে।

মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সময় পুলিশ সদস্যদের হাত খালি রাখতে দেয়া এই ট্যাকটিক্যাল বেল্টে থাই হোলেস্টার উইথ আর্মস, এক্সপান্ডেবল ব্যাটন, হ্যান্ড কাফ, ওয়ারলেস, টর্চ লাইট, ওয়াটার বটল, মাইক্রো ফোন থাকার কথা ছিল।

কিন্তু আজ বুধবার চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ট্যাকটিক্যাল বেল্টে এসব সরঞ্জামের বেশিরভাগই দেখা যায়নি। কারও বেল্টে শুধুই পিস্তল, আবার কারও বেল্টে শুধু হ্যান্ড কাফ। কেউ কেউ এক্সপান্ডেবল ব্যাটন (লাঠির মত একটি স্টিক) পেয়েছেন; এটি কাজ শেষে তা আবার বাটনে চাপ দিয়ে রেখে দেয়া যায়।

যদিও গতকাল মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ জানিয়েছিলেন, অস্ত্রসহ অন্যান্য সাত ধরনের জিনিসপত্র বেল্টে থাকবে।

আজ বিজয় দিবস থেকেই নতুন এই ট্যাকটিক্যাল বেল্ট পরছেন সিএমপির অন্তত ৭০০ পুলিশ সদস্য। তবে ঘোষণা অনুযায়ী সবার বেল্টে সবগুলো জিনিস নেই, যা সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সংশ্লিষ্ট সদস্যরা পরিচয় প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজী হননি।

একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ‘বেল্টে মোট সাত প্রকার জিনিজের ব্যাগ বা পাউচ আছে। কিন্তু সাত প্রকার জিনিস সবাইকে দেয়া হয়নি। অথচ বলা হয়েছে, খালি পাউচগুলো বেল্টের সাথেই রাখতে হবে। এটা দেখতে খারাপ দেখায়। চট্টগ্রামের মানুষ বলছে, আমরা ‘ঠোলা’ (খালি ব্যাগ) নিয়ে ঘুরছি।’

অন্য একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সিএমপি থেকে আমি শুধু বেল্টটি পেয়েছি, পাউচ খালি ছিল। তাহলে খালি পাউচ কোমরে রাখার কী দরকার? এসব খালি পাউচের জন্য স্মার্ট দেখানোর পরিবর্তে পুলিশের সীমাবদ্ধতা ফুটে উঠছে।’

তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বেল্টের সাথে পিস্তল পাচ্ছেন। যদিও সবার বেল্টে পিস্তল কভার বা হোলেস্টার দুটি করে লাগানো। তাহলে একটা অতিরিক্ত, এটা খালি থাকবে।’

‘আমার কথা হলো কনস্টেবল ওয়ারলেস ব্যবহার করে না, তাহলে তাকে খালি ওয়ারলেস পাউস কেন লাগিয়ে দিবে?’ বলেন ওই পুলিশ সদস্য।

আরেকজন পুলিশ সদস্য অভিযোগ করে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্যাকটিক্যাল বেল্টের জন্য যে ‘বকলেস’ সদরদপ্তর থেকে সিএমপিতে এসেছে সেটি দেখার মতো ছিল, যা আমি ট্রেনিং চলাকালীন পেয়েছিলাম। কিন্তু অজানা কারণে সেই ভালো মানের বকলেসটা রেখে দিয়ে সাধারণ মানের একটা দিয়েছে। বেল্টে এ ধরনের বকলেস শুধুমাত্র জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা পরে আসছিলেন।’

যদিও গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার ধারা থেকে বেরিয়ে আসা, দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন সহজ ও আরামদায়ক করা, বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক দেশের মত বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলা এবং পুলিশ ও জনগণের মধ্যে মানসিক দূরত্ব কমিয়ে এনে পুলিশি সেবাকে আরও সহজ করতে ‘ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমপির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ বিষয়টি নিয়ে তারা নিজেরাও বিব্রত। দুই-চারদিনের মধ্যে সবাইকে সব সরঞ্জাম দেয়ার চেষ্টা চলছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘পানির বোতল তো দরকার নেই। হাতকড়া আছেই। অন্যগুলোও আমাদের আছে। কিছু সরঞ্জাম সদরদপ্তর থেকে পাঠানো হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত পেয়ে যাবো।’