চট্টগ্রাম: রাত দশটা। চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণেলহাট এলাকার লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংলগ্ন আবর্জনার স্তূপ। সেখান থেকে ভেসে আসছে নবজাতকের কান্না। ছুটে আসে কিছু যুবক। দেখতে পান পড়ে আছে এক নবজাতক। এমন দৃশ্য দেখে স্থানীয় লোকজন খবর দেয় আকবর শাহ থানায়। সেখান থেকে পুলিশ আসে। নবজাতককে ভর্তি করে হাসপাতালে।
এই ঘটনা ঘটেছে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে চিকিৎসাধীন এই শিশুকে নিয়মিত পরিচর্যা করছেন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য নবজাতকের মায়েরা। পুলিশের পাশাপাশি ও উদ্ধারকারী যুবকরাও রাখছেন তার খোঁজ-খবর।
ছোট্ট শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে প্রথমে এগিয়ে যান নগর ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন টিটু ও এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী মোমিন শাহ, ইফতেখায়রুল রানা ও সাব্বিরুল আলভীসহ কয়েকজন। আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষনিকভাবে টহলরত পুলিশকে নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধারের নির্দেশ দেন।
এরপর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর সবাই মিলে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে। শিশুটিকে প্রথমে পাশের আল আমিন হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে মা ও শিশু হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। শিশু হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে সুস্থ আছে ওই নবজাতক।
এরইমধ্যে শিশুটির রাখা হয়েছে, ‘একুশ’। নামটি দিয়েছেন আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য থানায় আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সেসময় খবর পাই, এক নবজাতককে মুমুর্ষ অবস্থায় পাওয়া গেছে। দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করার জন্য সাথে সাথে এসআই নুরুল আলমকে নির্দেশ দিলাম। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ওই শিশুকে বাঁচাতে সেদিন অনেকটা লড়াই করতে হয়েছে। একুশের প্রথম প্রহরের এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে ছেলে শিশুটির নাম ‘একুশ’ রেখেছি।’
এদিকে নবজাতককে উদ্ধার করা নিয়ে বুধবার চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর। এ প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের প্রথম মহানগর হাকিম এসএম মাসুদ পারভেজ নবজাতকের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি নবজাতককে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আকবর শাহ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ওসি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য ২৫ জনের বেশী আগ্রহ দেখিয়ে যোগাযোগ করেছেন। অস্ট্রেলিয়া এবং লন্ডন থেকেও দুজন অভিভাবক বাচ্চাটিকে নেয়ার জন্য যোগাযোগ করেছেন। এমনকি শিশুটিকে পেতে দুইজন ইতিমধ্যে আদালতে আবেদন জানিয়েছেন। হাসপাতালের ছাড়পত্র পাওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে আমরা শিশুটিকে হস্তান্তর করব। আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত শিশুটি পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকবে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জগদীশ চন্দ্র দাশ বলেন, ‘নবজাতকটিকে যখন আনা হয়েছিল তখন তার শরীর ঠাণ্ডা ও ময়লা লাগানো অবস্থায় ছিল। শিশুটি শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। শিশুটি দ্রুত সেরে উঠছে। হাসপাতালের সবাই মিলে তার সেবা শুশ্রূষা করছেন। পাশের বেডের শিশুদের মায়েরা তাকে বুকের দুধ দিচ্ছেন।’