এক মামলায় দুই জামিন পেয়ে বিপাকে আসামি

শরীফুল রুকন: এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে পলাতক ছিলেন মো. তুষার। ধরা পড়ে কারাগারে যান তিনি। এরপর চট্টগ্রামের একাধিক আদালতে আবেদন করেও জামিন পাননি। নিম্ন আদালতে জামিন না পাওয়ায় এবার যান উচ্চ আদালতে। এ সময়ই ‘কপাল পুড়েছে’ তুষারের। একটি মামলায় তুষারের জামিনের জন্য হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চে করা হয় আবেদন। এরপর একইদিন হাইকোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চ তুষারকে জামিন দেয়। জামিনের দুটি আদেশ এক সাথে চট্টগ্রামে আসলে বন্ধ হয়ে যায় তুষারের মুক্তির পথ।

আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার ১(২)১৪ নং মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দি আছেন মো. তুষার। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও এ কে এম শহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ৩৮৮৭০/২০১৬ ফৌজধারী মিস মামলায় মো. তুষারকে চার মাসের জামিন দেয়। একইদিন ৩৮৯২৬/২০১৬ ফৌজধারী মিস মামলায় তুষারকে ছয় মাসের জামিন দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর তুষারের জন্য পৃথক দুটি পৃথক জামিননামা চট্টগ্রামে আসার পর বন্ধ হয়ে যায় তার মুক্তির প্রক্রিয়া। এরপর সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ দুটিকে অবগত করে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য একই বছরের ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চিঠি দেন চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম মো. শাহজাহান কবির।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আদালতের নিবন্ধন শাখার পাহাড়তলী থানার (জিআরও) এএসআই আবুল মনসুর বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী এক মামলায় জামিনের জন্য উচ্চ আদালতের কোন একটি বেঞ্চে আবেদন করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তুষারকে দ্রুত মুক্ত করার জন্য তার শ্বশুরপক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়। একই সময়ে তুষারের পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয় আরেকটি আবেদন। এরপর একসাথে দুটি জামিননামা চট্টগ্রামে আসায় মুক্তি পাচ্ছেন না তুষার।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বজনরা তুষারকে দ্রুত মুক্ত করতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এক মামলায় দুই জামিননামা আসার পর আড়াই মাস ধরে বন্দি আছেন তিনি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি।’

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলী ডা. ফজলুল হাজরা ডিগ্রি কলেজের সামনে আরাফাত স্ট্রীল ইন্ড্রাষ্টীজের কর্মচারী মো. রুবেলকে ছুরিকাঘাত করেন মো. তুষার। এ ঘটনায় তুষারসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করে একই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পাহাড়তলী থানায় মামলা করেন মো. রুবেল। তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন পাহাড়তলী থানার এসআই তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল হক। ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকা মো. তুষারকে ২০১৬ সালের ৩ মে সাঁজা পরোয়ানামূলে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হচ্ছিলেন মো. তুষার।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘স্বজনরা আইনের বিধান না জেনে অথবা দুটি আবেদন করার তথ্য গোপন রেখে আইনজীবির মাধ্যমে দুটি জামিন আবেদন করেছে। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন হাইকোর্ট এ বিষয়ে সমাধান না দেওয়া পর্যন্ত তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।’