শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

হেফাজতে ইসলামকে গিলে খেতে চায় জামায়াত!

প্রকাশিতঃ ১১ নভেম্বর ২০২০ | ২:৩৩ অপরাহ্ন


চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা এবং দেশের কওমি মাদ্রাসা-ভিত্তিক সংগঠন হেফাজত ইসলাম কি জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে?

সম্প্রতি মাদ্রাসাটির মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর মাদ্রাসার নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে জামায়াতের নেপথ্য ভূমিকা এমন প্রশ্ন তৈরি করেছে।

জামায়াত-শিবিরের কাঁধে হেফাজত ইসলামের সর্বোচ্চ নেতা আল্লামা আহমদ শফীর মরদেহ বহনে সংগঠনটির গন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

একাধিক সূত্র মতে, হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি নিয়ে ইতোমধ্যে হাটহাজারী ও ঢাকায় একাধিক প্রস্তুতি সভা হয়েছে। এসব সভায় হেফাজতে ইসলামের রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।

অভিযোগ ওঠেছে, সংগঠনটির নেতৃত্ব ঢাকাকেন্দ্রিক করার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামকে বাস্তবে গিলে খেতে চায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর আগে মাদ্রাসায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ইন্ধন জুগিয়েছিল।

সূত্র মতে, হেফাজতে ইসলাম ও দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে নিজেদের দখলে নিতে জামায়াতের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। তারই অংশ হিসেবে আল্লামা শফীর মৃত্যুর অনেক আগে থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতাকর্মীদের আনাগোনা শুরু হয়। কিন্তু জীবদ্দশায় আল্লামা আহমদ শফীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে কওমি মাদ্রাসা-ভিত্তিক শিক্ষাবোর্ডের দখল নিতে জামায়াত-শিবিরের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।

জানা গেছে, আহমদ শফীর জানাজা এবং দাফন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন জামায়াত ইসলামের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জামায়াতের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।

শুধু তাই নয়, আহমদ শফীর জানাজা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতেও জামায়াত-শিবির নেতাদের দেখা গেছে। এমনকি আল্লামা আহমদ শফীর মরদেহবাহী খাটিয়াও কাঁধে নিতে দেখা গেছে জামায়াতের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী ও জামায়াত নেতা মাওলানা মামুনুল হককে। আহমদ শফীর জানাজায় সাবেক শিবির নেতা ও বর্তমান এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবি, শিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল আলিমসহ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

সূত্র মতে, আল্লামা শফীর মৃত্যুর কয়েকমাস আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদীরও হাটহাজারী মাদ্রাসায় আনাগোনা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের বিতর্কিত নেতা মুফতী হারুন ইজহার ও মাওলানা মামুনুল হকেরও হাটহাজারী মাদ্রাসায় আনাগোনা বেড়ে গেছে।

মূলত আল্লামা শফীকে সামনে রেখেই হেফাজতে ইসলামী তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছিল চট্টগ্রামসহ সারাদেশে। তার মৃত্যুর পর আদৌ সংগঠন হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কতটুকু টিকে থাকবে সে প্রশ্নটিও সামনে চলে এসেছে। আর এই পরিস্থিতিতে হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ নিতে কৌশলে আটঘাট বেঁধে নেমেছে জামায়াত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটির রূপরেখায় জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমীরের পদে রাখা হলেও শীর্ষ পদগুলোতে যেমন- মহাসচিব মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী (জামায়াতপন্থী নেতা), এক নম্বর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মুফতী হারুন ইজহারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াত থেকে হেফাজতে ইসলামে অনুপ্রবেশকারী সদস্যদের তালিকা বড় হচ্ছে।

কওমি আলেমরা বলছেন, হাটহাজারী মাদ্রাসাটি চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ ও আলেম-ওলামাদের কাছে অত্যন্ত সম্মান ও আবেগ-অনুভূতির জায়গা। আল্লামা শফীর অক্লান্ত পরিশ্রমে হাটহাজারী মাদ্রাসার খ্যাতি ও ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু সেই সুনাম নিজেদের দখলে নিতে ওঁৎ পেতে আছে জামায়াত। কওমি মাদ্রাসা-ভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে জামায়াতে ইসলামের হাতে তুলে দিতে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরবর্তী মহাপরিচালক হওয়ার দৌড়ে আছেন শফীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত বর্তমান সহযোগী পরিচালক শেখ আহমদও। আল্লামা শফীর মৃত্যুর আগে দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটি সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে অব্যাহতি দিয়ে শেখ আহমদকে ওই পদে বসানো হয়।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল করা হলেও জামায়াত নেতা সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। হেফাজত ও দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে জামায়াতে ইসলামী কব্জায় নেওয়ার চেষ্টা প্রসঙ্গে জানতে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত একাধিক বার ফোন করেও জুনায়েদ বাবুনগরীকে পাওয়া যায়নি।

তবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মুখপাত্র এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আল্লামা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজতের সাথে জামায়াতের আদর্শগত পার্থক্য আছে। আল্লামা আহমেদ শফীর জানাজায় লাখ লাখ লোক অংশ নিয়েছিল। সেখানে জামায়াতের কিছু নেতার অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে কেন? হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এটার সাথে জামায়াতের সখ্যতার প্রশ্নই উঠে না।

আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আওয়ামী লীগের কোন আদর্শ নেই। তারা তো একসময় জামায়াতের সাথে এক মিলে রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। এখনও আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা জামায়াতের টাকায় ব্যবসা বাণিজ্য করছে। কেউ তো সেটাকে অপরাধ বলছেন না?