চট্টগ্রাম: সদ্যঘোষিত চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা লীগের কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে মহিলা লীগের একাংশের নেত্রী-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করে ওই কমিটি ঘোষণা করেন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
১২ সদস্যের কমিটিতে আগের কমিটির সিনিয়র সহ সভানেত্রী নমিতা আইচকে সভাপতি এবং সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদিকা তপতী সেনগুপ্তা, ফেরদৌসি নাজিম ও হাসিনা জাফরকে সহ সভানেত্রী করা হয়েছে। সাবেক কাউন্সিলর রেহানা বেগম রানু ও বর্তমান কাউন্সিলর আনজুমানা আরা বেগমকে করা হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা। মর্জিনা আক্তার লুসিকে দেয়া হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদিকা নবুয়াত আরা সিদ্দিকী ও মিলি চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদিকা নাছরিন আক্তার নাহিদা ও প্রচার সম্পাদিকার দায়িত্ব পেয়েছেন রুমা দাশ।
সংবাদ সম্মেলনে নমিতা আইচ বলেন, মঙ্গলবার ঘোষিত কমিটি সম্পর্কে আমরা জানি না। আমাদের সাথে তারা কোন কথা বলেনি। সে কমিটি আমরা মানি না, আমরা প্রত্যাখান করলাম। আমরা কমিটির কিছু নাম ঘোষণা করছি। সবাই বসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করব। তারপর সেটা কেন্দ্রের কাছে পাঠাব। আশা করছি তারা সমন্বয় করে একটি কমিটি দেবেন।
এর আগে ১৮ বছর পর গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কন্ঠভোটে হাসিনা মহিউদ্দিনকে সভাপতি ও আনজুমান আরা চৌধুরী আনজি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা মহিউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে তপতী সেনগুপ্তা বলেন, ‘উনি কে? হু ইজ শী? উনার বাসা কোথায়? উনার বাড়ি কোথায়? উনি কোত্থেকে এসেছেন? মহিউদ্দিন ভাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন, যে কোন সময় চলে যাবেন, তাই একজনকে চট্টগ্রামে রেখে যেতে চাচ্ছেন। এজন্য কি জোর করে তার স্ত্রীকে সভাপতি করা হয়েছে?’
তপতী সেনগুপ্তা বলেন, ‘আমাদের এত বছরের রাজনীতির জীবনের চরম অপমান, লাঞ্ছনা ও দুঃখের কথা জানাতে এসেছি। বহু আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া নারী নেত্রীদের বাদ দিয়ে সাজানো সম্মেলন করে তথাকথিত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমি সাধারণ সম্পাদক। আমাকে না জানিয়ে বর্ধিত সভা করা হয়। আমাকে সম্মেলনে যেতে দেয়া হয়নি। সম্মেলনে ঢুকতে গেলে এলোপাতাড়িভাবে পুলিশ ধাক্কা মারে। আমাকে ছাড়াই সম্মেলন হয়ে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার ঘোষিত কাগুজে কমিটিতে আমাকে (তপতী) সহ সভাপতি ও রেখা আলমকে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয়। অথচ সে সম্মেলনে আমাদের ডেলিগেট কার্ড পর্যন্ত দেয়া হয়নি। কোন মতামতও নেয়া হয়নি। এই কমিটি মানব কিভাবে? কর্মীদের ছাড়া আমি কোন পদে থাকব না।’
‘যে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বলা হয় টাইগার অব চিটাগাং, সেই ফ্যামিলির জন্য আজ এ অবস্থা। বউকে সভানেত্রী করতে তিনি উঠে-পড়ে লেগেছেন। পুলিশ মহিলাদের উপর হাত তুলেছে। এতে আমরা হতভম্ব।’
হাসিনা মহিউদ্দিনের অভিযোগ তপতী সেনগুপ্তা দলীয় কর্মসূচীতে উপস্থিত থাকেন না- এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তপতী বলেন, ‘আমি সবসময় ছিলাম। মহিউদ্দিন ভাইকে মেয়র করার জন্য আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। মহিউদ্দিন ভাইয়ের বাসা থেকে বের হতে রাত দুইটা বেজে যেত। বেরুতে চাইলে বলত, আরেকটু বসেন। এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িও পেতাম না। আমার বাসা দেওয়ানবাজার। আমার আসতে অনেক কষ্ট হত। সত্যিটা হচ্ছে, কর্মসূচীতে আমাকে ডাকা হয় না। গেলেও বাজে কথা বলে অবস্থান না করার পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পাল্টা কমিটির সাধারণ সম্পাদিকা রেখা আলম; তিনি মঙ্গলবার সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষিত কমিটির ২য় যুগ্ন সাধারণ সম্পাদিকা। মূল কমিটির পদ প্রত্যাখান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেখা আলম সাংবাদিকদের সরাসরি কোন জবাব দেননি।
তিনি বলেন, ‘১৮ বছর পর সম্মেলন। সম্মেলন বানচাল নয়, সার্থক করতে চেয়েছি। কিন্তু ৫০০ ডেলিগেট নিয়ে গিয়েও আমরা পুলিশের বাধায় সম্মেলনে ঢুকতে পারিনি। কী কমিটি হয়েছে জানি না। আমাকে অবহিত করা হয়নি। শুনেছি, কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার নাম ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা প্রস্তাব করলে কাউন্সিলররা হইচই করে সেটি পাল্টাতে বাধ্য করেন। এরপর এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করা হলে কাউন্সিলর নীলু নাগের সমর্থকরা সেটাও পাল্টাতে বাধ্য করেন। আমরা কমিটি করারও কেউ না, পদ প্রত্যাখান করারও কেউ না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা সাবেক কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানুর কাছে দুই কমিটি গঠন বিষয়ে বক্তব্য জানতে চান সাংবাদিকরা। এসময় রেহানা বেগম রানু বলেন, ‘আমার কোন মন্তব্য নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা লীগের প্রবীণ নেত্রী অঞ্জলী কুন্ডু, চসিকের প্যানেল মেয়র জোবাইরা নার্গিস খান, কাউন্সিলর আনজুমান আরা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের দি কিং অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তপতী সেনগুপ্তসহ বড় একটি অংশকে সম্মেলনে প্রবেশের কার্ড দেয়নি সম্মেলন আয়োজকরা। তাই তাদের সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের সাথে দিনব্যাপী হাতাহাতি হয় মহিলা আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীর।