বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

একতরফাভাবে ঘোষিত কমিটিতে হাসিনা মহিউদ্দিনের অনুসারীরাই

প্রকাশিতঃ ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ | ৭:৫৫ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : একতরফাভাবে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করে ৭১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে নগর মহিলা লীগের একটি অংশকে বাইরে রেখে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের নতুন কমিটিতে সভানেত্রী করা হয়েছে হাসিনা মহিউদ্দিনকে; যিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আনজুমান আরা চৌধুরী আনজী। দুইজনই কণ্ঠভোটে দায়িত্ব পেয়েছেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দফায় দফায় সম্মেলনস্থলে প্রবেশের চেষ্টা চালান সর্বশেষ কমিটির (১৯৯৮) শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী। কিন্তু সম্মেলন কার্ড না থাকার অজুহাতে তাদেরকে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। এসময় ধাক্কাধাক্কি ও হাতিহাতির ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের হামলায় লুসি ও রাজিয়া বেগম নামের মহিলা লীগের দুই কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, মহানগর মহিলা লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন তার অনুসারীদেরকেই শুধুমাত্র সম্মেলনে প্রবেশের কার্ড দিয়েছেন। মহানগর মহিলা লীগের সর্বশেষ গঠিত কমিটির (১৯৯৮) সহ সভাপতি নমিতা আইচ, সাধারণ সম্পাদক তপতি সেনগুপ্তা, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানুসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেত্রী-কর্মীদের কাউকেই সম্মেলনে প্রবেশ করার কার্ড দেওয়া হয়নি। সমেম্মলনে প্রবেশ করতে পারেননি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক প্যানেল মেয়র জোবাইরা নার্গিস খান, সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী, আনজুমান আরা আনজুসহ অনেকেই।

সরেজমিন দেখা গেছে, সম্মেলনের পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল নগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনের অনুসারীদের হাতে। কার্ড দেখিয়ে সম্মেলনে প্রবেশ করতে হচ্ছিল সবাইকে। এমনকি কার্ডের আওতায় আনা হয়েছে সাংবাদিকদেরকেও; সম্মেলনের আয়োজক কর্তৃপক্ষ এ কার্ড সরবরাহ করে। সম্মেলনস্থলের আশপাশে ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা। সম্মেলনের প্রবেশমুখে পুলিশের পাশাপাশি অবস্থান নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একদল কর্মী।

সকাল ১১টা ২৮ মিনিটে কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে আসেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১১টা ৩৫ মিনিটে একটি কারে চেপে সম্মেলনস্থলে আসেন নগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন। এরপর বেলা পৌনে ১২টায় আসেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম ফজিলাতুন-নেসা ইন্দিরা; এসময় তার গাড়ি থামিয়ে বিক্ষুব্ধ নেত্রী-কর্মীরা সম্মেলনে প্রবেশে বাধার বিষয়ে নেত্রীর হস্তক্ষেপ চান। কিন্তু দুই মিনিটের মধ্যে বিক্ষুব্ধ নেত্রী-কর্মীদের ধাক্কা দিয়ে পুলিশ সরিয়ে দেয়; মুহুর্তেই সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করে কেন্দ্রীয় নেত্রী ইন্দিরার গাড়ি।

পুলিশের সাথে ব্যাপক ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন সম্মেলনে প্রবেশ করতে না পারা নেত্রী-কর্মীরা। এদের কেউ কেউ সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় এক নেত্রী ‘ঘুষ’ নিয়েছেন অভিযোগ তুলে স্লোগানও দেন।


ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সম্মেলনে প্রবেশের জন্য কার্ড না থাকায় অনেককে আমরা প্রবেশ করতে দিতে পারিনি। যাদের কাছে কার্ড ছিল শুধুমাত্র তাদেরকে সম্মেলনে প্রবেশ করতে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্মেলনস্থলে প্রবেশের মুখে নারী পুলিশ সদস্যরা হাতে হাত রেখে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাউকেই পুলিশ আহত করেনি। সর্বোচ্চ সহনশীল থেকে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু বলেন, ‘আজকের সম্মেলনটা আমাদের বহু কাক্ক্ষিত। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। এটি কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। দুঃসময়ে আমরা যখন রাজনীতিতে ছিলাম, অসময়ে কাজ করেছি তখন আজকে যারা সম্মেলন নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছেন তারা ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জন্য প্রাণ দিতেও রাজী আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনায় আমরা সম্মেলনস্থলে এসেছি। কিন্তু প্রবেশের কার্ড আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। পুলিশ দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা হয়েছে। আমাদের কর্মী রাজিয়ার চুল ছিঁড়ে ফেলেছে পুলিশ, মর্জিনা আকতার লুসিকে আহত করেছে। একপর্যায়ে আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পাঁচটা কার্ড পাঠিয়েছিল। কিন্তু আমরা তো কর্মী ছাড়া ঢুকতে পারিনা। এই সম্মেলন আমরা মানি না। সম্মেলন আমরা বর্জন করলাম।’

সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী বলেন, ‘এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে মেয়র নির্বাচিত করার জন্য আমরা মহিলা লীগের সদস্যরা কাজ করেছি। জাতীয় নির্বাচনের সময় দিনরাত কাজ করেছি। আর এখন ১৮ বছর পর সম্মেলন হচ্ছে, কমিটি হচ্ছে, সেখানে আমাদেরকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘হাসিনা মহিউদ্দিন কীভাবে সভানেত্রী হলেন? তিনি কি সম্মেলনের মাধ্যমে সভানেত্রী হয়েছেন? আমরা তাকে নেত্রী বানিয়েছি। এখন তিনি এসে বলুক, আমরা আওয়ামী লীগের কেউ না। তাহলে আমরা চলে যাব।’
প্রসঙ্গত সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের স্ত্রী নীলুফার কায়সারকে সভাপতি এবং তপতী সেনগুপ্তাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল।