তাপস কুমার নন্দী : হালকা হাওয়ায় দুলতে থাকা কাশফুল চোখে পড়ছে এবছর অনেকের। গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে শিউলি ফুলের গন্ধ জানান দিয়েছে দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গেছে। সেই পূজো মণ্ডপ, সেই আলোর বাহার, সেই একচালা থেকে নানা বিহঙ্গে মায়ের রূপ। তবু কোথায় যেন ছন্দ কেটে গেছে। এবার এক অন্য পূজোর সাক্ষী আমরা।
সাধারণ নিয়মে আশ্বিনের শারদ প্রাতে মহালয়ার পূণ্য লগ্ন থেকে শুরু হয়ে যায় দেবীপক্ষ। মায়ের বোধন হয় সাতদিন পর ষষ্ঠীতে। এবার শুরুতেই তাল কেটেছে। ষষ্ঠীর সকালেই আকাশের মুখ ভার। পঞ্জিকা মেনে এবার মহালয়ার পরদিন থেকে শুরু হয়েছে মলমাস। তাই এবার ৩৫ দিন অপেক্ষার পর মায়ের বোধন হল। কিন্তু এ তো নিছক নিয়মের বেড়াজাল।
এবার উৎসবের আনন্দে প্রাণ খুলে মেতে থাকার ইচ্ছায় যেন বেড়ি পরিয়ে দিয়েছে করোনা। এক করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গোটা দুনিয়া পদানত। পূজোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষের আবেগ সুরক্ষিত রাখতেই মণ্ডপে দল বেঁধে দর্শনার্থী প্রবেশে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দূর থেকে দফায় দফায় অঞ্জলি দেওয়ার সুযোগ তো থেকেছে। পূজো পরিচালনায় লোকবল কিছুটা বাড়ানোর আদেশ দিয়েছিল সরকার। একসঙ্গে ৪০জনের বেশি প্রবেশ নিষেধ ছিল।
ঢাকের বাদ্যি ছাড়া পূজো আবার হয় নাকি? তাঁদের জন্যও ব্যবস্থা ছিল। ঢাকিরা থেকেছে ‘নো এন্ট্রি জোনে’। মাস্ক ও অন্যান্য প্রোটোকল মানতেই হয়েছে।
গত কয়েক বছরের মতো এবার রাতে বহু পূজো মণ্ডপেই সেরকম ভিড় দেখা যায়নি। ব্যতিক্রমও ছিল। তবে মণ্ডপ দর্শনের জন্য ব্যারিকেডের বাইরে থেকে উঁকিঝুঁকির চেষ্টা যে একেবারেই হয়নি তাও নয়। নামী কিছু মণ্ডপের সামনে ব্যারিকেডের ধারে ভিড়ও হয়েছে। প্রতিমা দর্শনের সুযোগে খামতি নেই।
একদিকে করোনা সংক্রমণ, অন্যদিকে আবহাওয়া অফিসের ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস কিন্তু আশঙ্কা জিইয়েই রেখেছিল। এবার পূজো একটু অন্যরকম হয়েছে।
তাই, সুরক্ষাবিধি মেনে আনন্দ করেছে ভক্তজন, কিন্তু উদ্যাপন নয়। উৎসবের আনন্দে ভেসে যাওয়া হয় নি। ভক্তজন সতর্ক থেকে পা ফেলেছে রাস্তায়। যাই হোক পূজো শেয, মা আজ চলে যাবেন বাপেরকুল থেকে শ্বশুরকুলে। আমরা যারা মায়ের দীন ভক্ত, আমাদের জন্য রেখে গেছেন আর্শীবাদ। জয় মা দুর্গা।