দীর্ঘ হলো ওদের ‘জীবনপরীক্ষা’!

ঢাকা : ঢাকায় কোনো স্বজন-শুভার্থী নেই। সামর্থ্য নেই হোটেলে থাকার। তাই একদিন আগে থেকে ঢাকায় অবস্থানের ইচ্ছেটাও যেন বন্দী সামর্থ্যরে বেড়াজালে। অগত্যা আগের রাতেই দ্রুতগামী চেয়ারকোচের যাত্রী হতে হলো।

সমীকরণ বলছে, ঠিকমতো গাড়ি চললে ঢাকার সায়েদাবাদে পৌঁছার পর হাতে থাকবে অন্তত দুই থেকে তিনঘণ্টা। ‘বিশাল’ এই সময়ের রশি ধরেই স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন, পৌঁছে যাবেন জীবন আর জীবিকা নিশ্চিতের পরীক্ষায়। বিধিবাম! স্বপ্নের ‘নিরাপদ জীবিকা’র সুযোগটি আটকে গেলো পথেই, গাড়ির চাকায়। পথে পথে ভয়াবহ যানজট ঠেলে সায়েদাবাদ পৌঁছতেই বাজলো বেলা সাড়ে ১১টা। ততক্ষণে শুরু হয়ে শেষও হয়ে গেলো পরীক্ষা। নিয়মানুযায়ী যা হবার তাই হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলো ওদের ‘জীবনপরীক্ষা’।

এই ‘জীবনপরীক্ষা’র মুখোমুখি হওয়া দুই তরুণের নাম আরেফিন আজাদ ও আব্দুল কাইয়ুম। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ যাত্রাসেন হাট এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে ২০১৫ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন আরেফিন আজাদ আর কাইয়ুম মাস্টার্স করেন নৃবিজ্ঞানে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন ‘সিকিউরিটি সাব ইন্সপেক্টর’ ও ‘অফিস সহায়ক’ পদে লিখিত পরীক্ষা দিতে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি থেকে হানিফ পরিবহনের গাড়িতে উঠেন দুই তরুণ।

শুরুর দিকে ভালো ভালোয় চললেও রাত ৩টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দিতে এসে তাদের বহনকারী গাড়িটি যানজটে আটকা পড়ে। জ্যাম না থাকলে এখান থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র দুই ঘণ্টার। সেই হিসেবে খুব বেশি টেনশন কাজ করার কথা নয়। কিন্তু যখন দেখলেন মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে আরও দুই ঘণ্টা। ভয়ঙ্কর চেপে বসা উৎকণ্ঠার মাঝেই নিজেদের সমর্পণ করলেন তারা। কায়মনো বাক্যে ডাকতে লাগলেন সৃষ্টিকর্তাকে। কিন্তু পথ যেন শেষ হয় না, বরং বাড়তে থাকে পথের পরিধি। দুই তরুণের রুদ্ধশ্বাস সঙ্গী করে অবশেষে গাড়ি যখন সায়েদাবাদে পৌঁছে তখন বেলা সাড়ে ১১টা। ঢাকার আকাশে দিনভর কপাল চাপড়িয়ে সন্ধ্যায় ইউনিক পরিবহনের গাড়িতে করে চট্টগ্রাম ফিরে যান হতভাগ্য এই দুই তরুণ।

সেখান থেকেই একুশে পত্রিকার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন আরেফিন আজাদ। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে হানিফ পরিবহনের গাড়িতে তারাসহ মোট চারজন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকার পথে রওয়ানা দেন। কিন্তু ভয়াবহ যানজটে পড়ে তাদের কেউ আর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। অবশ্য এ নিয়ে কারো বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই, আছে কেবল দীর্ঘশ্বাস। সমাজে অনেক বড় বড় ঘটনার দায় যেখানে কেউ নেয় না, সেখানে আমাদের দীর্ঘশ্বাসের দায় কে নেবে- বলেন আরেফিন আজাদ।