সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

সঙ্কট-স্বল্পতায়ও পরিবর্তনের ছোঁয়া বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে

প্রকাশিতঃ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১১:১৫ অপরাহ্ন


জোবায়েদ ইবনে শাহাদত : তথ্যমন্ত্রী হিসেবে চট্টগ্রামের সন্তান ড. হাছান মাহমুদ দায়িত্ব গ্রহণের পর মানসম্মত ও দর্শক-চাহিদা উপযোগী অনুষ্ঠান পরিচালনা করে ইতোমধ্যেই সকল মেজাজের দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র। ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল ৬ ঘণ্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচারে যাওয়া বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র ৯ ঘণ্টা সম্প্রচারে উন্নীত হয় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের হাত ধরে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে এই কেন্দ্রের সম্প্রচার সময় আরো চার ঘণ্টা বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টায় উন্নীত হয়। শুধু তাই নয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বহির্বিশ্বেও।

বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা জানান, আগে শুধু বাংলা সংবাদ বুলেটিন প্রচার হলেও প্রথমবারের মতো বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে ইংরেজি সংবাদ বুলেটিন চালু হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ইংরেজি সংবাদ বুলেটিনের জন্য পাঠক-পাঠিকাদের চূড়ান্ত অডিশন। সংবাদ পাঠক-পাঠিকাদের তিন দিনব্যাপী প্রাথমিক অডিশন নেয়া হয় গত ২১ আগস্ট থেকে। যাতে অংশগ্রহণ করেন ১৬৫ জন আগ্রহী। আর প্রাথমিক অডিশনে উত্তীর্ণদের চূড়ান্ত অডিশন নেয়া হয় গত ১২ সেপ্টেম্বর। এই অডিশনে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন, অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম এবং বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন।

তথ্য মতে, ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি নতুন পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র স্থাপিত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রথমবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর। কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা অনুষ্ঠান স্থানীয়ভাবে প্রচার করা হতো। এরপর এই কেন্দ্রের অনুষ্ঠান উন্নীত করা হয় ৩ ঘণ্টায়। সে সময় চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার করা অনুষ্ঠান ঢাকা কেন্দ্রে দেখা যেতো না। তারপর চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রে রূপান্তর করার জন্য ৪৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রটিকে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র হিসেবে ৬ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করা হয়। একইসঙ্গে ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্যাবল টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করে এই কেন্দ্র।

খবর, সংগীতানুষ্ঠান, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, টকশোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে বাড়তে থাকে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জনপ্রিয়তা। চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান পরিচালনা, পরিবেশনা ও গুণী প্রতিভার খোঁজে সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে অডিশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল। সে সময় বেশ কিছু প্রতিভার সন্ধান পেলেও এরপর অজানা কারণে অডিশন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দীর্ঘ ২১ বছর পর পুনরায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জন্য আধুনিক সংগীত/ লোকগীতি/উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী, উপস্থাপক/উপস্থাপিকা, সংবাদ পাঠক/পাঠিকার খোঁজে পরিচালনা করা হচ্ছে অডিশন কার্যক্রম।

ইতিমধ্যে উপস্থাপক, অনুষ্ঠান ঘোষক, সংবাদ পাঠক/পাঠিকা নির্বাচনে অডিশন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই অডিশন কার্যক্রম এখনও চলমান। গত ফেব্রুয়ারিতে রবীন্দ্র সংগীতের অডিশন কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। মার্চে নজরুল সংগীতের অডিশন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম সপ্তাহে নজরুল সংগীতের অডিশন কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। এই মূহুর্তে লোকসংগীতের অডিশন চলছে। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে উচ্চাঙ্গসংগীত এবং তৃতীয় সপ্তাহে আধুনিক গানের অডিশন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিক অডিশন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হবে দাপ্তরিক কার্যক্রম। তারপর স্ক্রিন টেস্ট বা চূড়ান্ত অডিশনের কাজ শুরু হয়ে তা আগামি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে কেন্দ্রের দেড় ঘণ্টার সম্প্রচার শুরুর সময়ে যে লোকবল আর বাজেট ছিল এখনও সেরকমই রয়ে গেছে। বছরে মাত্র ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে। বাজেটের পাশাপাশি রয়েছে লোকবল সংকটও। মাত্র ৯ জন প্রযোজক নির্মাণ করছেন কেন্দ্রের সব অনুষ্ঠান। প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৪০টি অনুষ্ঠান বানাতে হচ্ছে প্রত্যেক প্রযোজককে। এছাড়া কেন্দ্রে থাকা দুটি স্টুডিওর একটি ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় মাত্র একটি স্টুডিওতে নির্মাণ করতে হচ্ছে সব অনুষ্ঠান।

লোকসংগীতের অডিশন দিতে এসে নিজের অনুভূতির কথা একুশে পত্রিকাকে জানিয়ে তমা চৌধুরী বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে অডিশন দিতে এসেছি। শুরুতে এতো গুণীজনদের সামনে অডিশন দিতে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু চমৎকার পরিবেশ আর বিচারকদের আন্তরিক ব্যবহারে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে অডিশন দিয়েছি। সব কিছুই খুবই নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমি খুবই আনন্দিত এই রকম একটি ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের চেয়ে নান্দনিক অনুষ্ঠানমালা নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে। নাটক, দর্শকদের উপস্থিতিতে বহিরাঙ্গনে স্কুল বিতর্কসহ নির্মাণ করা হচ্ছে নানান অনুষ্ঠান। আর এই অডিশন কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রামের শিল্পী সমাজ এবং সংস্কৃতিসেবীদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকলেও নানান সংকটের কারণে তা পরিপূর্ণতা পাচ্ছে না। এই সংকট মোচন করা গেলে এ ধরনের কার্যক্রমের পরিধি আরো বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে, প্রথমবারের মতো ইংরেজি সংবাদ বুলেটিন সম্প্রচারের বিষয়ে নিতাই কুমার ভট্টাচার্য একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি অডিশনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এরপর আমরা চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রথমবারের মতো ইংরেজি সংবাদ বুলেটিন সম্প্রচার শুরু করব।’

অডিশনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অডিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকে বিচারকই আলাদা আলাদা নম্বর দিয়েছেন। যার ফলে স্বজনপ্রীতি বা পক্ষপাতিত্ব করে কাউকে বাদ দেয়া কিংবা কারো অনুরোধে কাউকে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। ভবিষ্যতের অডিশনগুলোতেও এই স্বচ্ছতা থাকবে।’