চট্টগ্রামে বিএনপির ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি উপেক্ষিত, তৃণমূলে ক্ষোভ


আবছার রাফি : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নীতি নির্ধারকরা দলকে শক্তিশালী করতে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিলেও চট্টগ্রাম বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনে এ নীতি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

‘কাউকে বঞ্চিত করা আবার কাউকে বেশি পদ দেওয়া’- এই দ্বৈত অবস্থান দলের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল করে দিচ্ছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ কেউ দুই পদে তো আছেনই, আবার কেউ কেউ তিন পদেও দায়িত্ব পেয়েছেন।

বর্তমান সময়ে কারাবন্দি বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়কের সাথে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব পদে দায়িত্ব পেয়েছেন। আবু সুফিয়ান দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কের সাথে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পেয়েছেন।

মোশাররফ হোসেন দিপ্তী চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতির সাথে কেন্দ্রীয় যুবদলের বিভাগীয় সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। আহমেদুল আলম রাশেদ কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের সাথে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। মো. সাহেদ কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদকের সাথে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন।

এছাড়া ব্যরিস্টার মীর হেলাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। মো. রাশেদ খান নগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি সেচ্চাসেবক দল চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বেলায়েত হোসেন ভুলু চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর সেচ্চাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভাগীয় সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন।

মো. আলী মর্তুজা খান ও মো. জমির উদ্দীন নাহিদ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদের পাশাপাশি একই সাথে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদেও দায়িত্ব পেয়েছেন। মো. জিয়াউর রহমান জিয়া চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি পদে থাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পেয়েছেন।

মো.মোশারফ হোসেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক পদের পাশাপাশি মহানগর ছাত্রদলেও একই পদে দায়িত্ব পেয়েছেন। মো. গাজী সিরাজ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক পদের পাশাপাশি মহানগর ছাত্রদলে সভাপতি ও বাকলিয়া থানা ছাত্রদলের সভাপতি পদে দায়িত্ব পেয়েছেন।

এদিকে এক নেতা এক পদ রাখতে গিয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে ছাড়তে হয়েছে ‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক’-এর পদ। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকেও ছাড়তে হয়েছে ‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক’-এর পদ। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির এই দুই নেতাকে এক পদের জন্য অন্য পদ ছেড়ে দিতে হলেও চট্টগ্রামের অনেক নেতাকেই ছাড়তে হয়নি তাদের দ্বৈত পদ।

এমনিতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। তার উপর রাজনৈতিক মামলা-হামলায় অনেকটা কোণঠাসা বলা যায় চট্টগ্রাম বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ অবস্থায় নিজ দলের এমন বৈষম্য দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের জন্য যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা একুশে পত্রিকাকে বলেন, দলের দুঃসময়ে অনেক ত্যাগী কর্মীদের যেখানে ন্যুনতম সাংগঠনিক পরিচয় মিলছে না, সেখানে একজনের দুই বা ততোধিক পদ আঁকড়ে থাকাটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। এসময় দলের নীতি-নির্ধারকদের ‘এক নেতা এক পদ’ নীতির দ্রুত কার্যকর করার আহ্বানও জানান তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারাদেশেই একই অবস্থা। আল্টিমেইটলি এটা মানতে হবে। যখন সব কমিটিগুলো পরিপূর্ণ করা হবে তখন কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ কারণে কাউকে থাকতে হলে থাকবে, নয়তো সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে।’