অর্থের বিনিময়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় যুবদলের ১১ কমিটি গঠনের অভিযোগ


ইমরান এমি : অর্থের বিনিময়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের আওতাধীন ১১ ইউনিটের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে ওই কমিটি অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর উপস্থিতিতে যুবদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের পর্যালোচনা শেষে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজগর ১১টি ইউনিটে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করেন।

কর্ণফুলী উপজেলা কমিটিতে নুরুল ইসলামকে আহবায়ক ও জাহেদুল ইসলাম শামীমকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। আনোয়ারা উপজেলায় আহবায়ক হারেছ আহমদ ও সদস্য সচিব ফারুক হোসেন। বাঁশখালী উপজেলায় আহবায়ক আবু আহমদ, প্রথম যুগ্ম আহবায়ক মো. রাসেল চৌধুরী। চন্দনাইশ উপজেলায় আহবায়ক মো. আমিনুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নেছার উদ্দিন চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক মো. মোশাররফ হোসেন, সদস্য সচিব তারিকুল ইসলাম টুটুল।

লোহাগাড়া উপজেলায় সাব্বির আহমেদকে আহবায়ক, আব্দুল আজিজ আকাশকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক, আবু তালেব রুবেলকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। দোহাজারী পৌরসভায় আহবায়ক মো. ইফতিয়ার উদ্দিন সুমন, সদস্য সচিব মীর হোসেন মীরু।

সাতকানিয়া পৌরসভায় আরিফ মঈনুদ্দিন শিপনকে আহবায়ক ও মো. মহিউদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। বোয়ালখালী পৌরসভায় মো. খায়রুল বশরকে আহবায়ক ও মো. লোকমানকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে। চন্দনাইশ পৌরসভায় আহবায়ক খালেদ রায়হান, সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান। বাঁশখালী পৌরসভায় আহবায়ক শহীদুল হক চৌধুরী, সদস্য সচিব শহীদুল্লাহ কায়সার বাদশা ও বোয়ালখালী উপজেলায় আহবায়ক এস এম ইকবাল, সদস্য সচিব মো. আতিকুল্লাহ।

ঘোষিত কমিটিগুলোকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে অধীনস্থ ইউনিটের কমিটি গঠন করে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ঘোষিত কমিটিগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মী ও সাবেক ছাত্রদল নেতাদের অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ইউনিট কমিটিগুলো করার সময় স্থানীয় বিএনপির নেতাদের জানানো হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমনকি কমিটির বিষয়টি জানেন না চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান। তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমার জেলায় যুবদলের কমিটি হচ্ছে, অথচ আমি জানি না। আমি ফেসবুকে দেখেছি বিষয়টি। এখন খবর নিচ্ছি কমিটি গঠনের বিষয়ে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, খোদ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ানের নির্বাচনী এলাকা বোয়ালখালীতে তার সাথে থাকা নেতাকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়নি। একইভাবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বাঁশখালী আসনের বিএনপির দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে আলাপ না করেই বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীর অনুসারীদের প্রাধান্য দিয়েই গঠন করা হয়েছে উপজেলা কমিটি। উক্ত কমিটিতে আহবায়ক করা আবু আহমেদের বিরুদ্ধে মাদক ও জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে।

একইভাবে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলা যুবদলের কমিটিতে বিএনপি নেতা সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজামের অনুসারীদের প্রাধান্য দিয়েই করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও লায়ন হেলাল উদ্দিনের অনুসারীদের সেভাবে রাখা হয়নি। আনোয়ারা উপজেলার আহবায়ক হারেছ আহমদ ও ফারুক হোসেন রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নিস্ক্রিয় হলেও জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাদের কমিটিতে এনেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতারা।

চন্দনাইশ উপজেলা কমিটি নিয়ে বিতর্ক না থাকলেও পৌরসভা কমিটির আহবায়ক করা রায়হান এলডিপির ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের নেতা বলে দাবি করেছেন পৌরসভা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রবিউল হোসেন ছোটন।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য লায়ন নাজমুল মোস্তাফা আমিনের কাছ থেকে নগদ অর্থ নিয়ে তার অনুসারীদের লোহাগড়া উপজেলা কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলোচনা না করেই ইচ্ছেমতো আর্থিক লেনদেন করে এ কমিটি হয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম নামের সাবেক এক যুবদল নেতা।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহানকে খোদ তার নিজ উপজেলা আনোয়ারায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ‘বিকাশ শাহজাহান’ উপাধি দিয়ে কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছেন লায়ন হেলাল উদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারীরা।

লোহাগাড়া উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লোহাগাড়া উপজেলায় যাদের নিয়ে যুবদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা কেউ দলের সক্রিয় নেতা নয়, আন্দোলন সংগ্রামে তাদের কোন ভূমিকা ছিল না। এ কমিটি সম্পূর্ণ টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাবো।

চন্দনাইশ পৌরসভা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রবিউল হোসেন ছোটন বলেন, ২০০৬ সালে রায়হান এলডিপির ছাত্র সংগঠনে যোগ দেন, তিনি কোন আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। সম্পূর্ণ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে। আমরা এ কমিটি বাতিল করার আবেদন জানাচ্ছি। না হলে আমরা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের একজন সিনিয়র নেতা একুশে পত্রিকাকে অভিযোগ করে বলেছেন, সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক আজগর আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এসব কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। ১৫ লাখ টাকা নিয়ে লোহাগাড়ার কমিটিতে জেলা বিএনপির সদস্য নাজমুল মোস্তাফা আমিনের অনুসারীদের রাখা হয়েছে। চন্দনাইশ পৌরসভায় ১০ লাখ টাকা নিয়ে এলডিপি নেতা রায়হানকে আহবায়ক করা হয়েছে। আনোয়ারা উপজেলা কমিটির জন্য আহবায়ক করা হারেছের কাছ থেকে ও সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজামের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। একইভাবে বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গিয়ে বিতর্কিত বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তার পিএস আবু আহমদকে আহবায়ক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা দক্ষিণ জেলা যুবদলের পক্ষ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে শীঘ্রই সংবাদ সম্মেলন করবো। কমিটিতে হয় তারা দুইজন থাকবে, না হয় আমরা থাকবো।

অভিযোগের বিষয়ে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, কমিটি হলে অনেকে অনেক কিছু বলবে, সবাইকে তো পদ দেওয়া সম্ভব না। তাই যারা পদবঞ্চিত হয়েছে তারা এসব বলছেন। বিভাগীয় যুবদলের কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে এ কমিটি দেওয়া হয়েছে। যুবদল তারেক রহমানের নির্দেশে পরিচালিত হবে।

আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না। আমি ঢাকায় আছি, চট্টগ্রামে এসে যোগাযোগ করবো।