ইমরান এমি : কাউন্সিলরদের জায়গায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৪১টি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা, উন্নয়নসহ সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল; গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত অফিস আদেশটি প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে খোদ চসিকের ভেতরেই ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয়।
এ ক্ষোভ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে সেই তিন কর্মকর্তাকে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তদারকির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা হলেন- সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ূয়া ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম।
চসিক প্রশাসক হিসাবে খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব পাওয়ার থেকে সহায়ক পরিষদ গঠনের কথা উঠলেও পরবর্তীতে সেদিকে যাননি তিনি। চসিকের কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই কাজ চালিয়ে নিতে সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ জন্য মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিকভাবে সম্মতি পান সুজন।
এ প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা স্বাক্ষরিত এক আদেশে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচিত কাউন্সিলররা দায়িত্ব পালন না করা পর্যন্ত ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড তদারকির জন্য তিন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ওয়ার্ডের দায়িত্ব পাওয়া তিন কর্মকর্তার মধ্যে সচিব আবু শাহেদ চৌধুরীকে ২৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ূয়াকে ১৫ থেকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলমকে ১ নম্বর থেকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তারা চসিকের স্ব স্ব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করবেন বলেও উক্ত আদেশে জানানো হয়েছিল।
সূত্র জানায়, এ তিন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি তিন কর্মকর্তাকে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ তদারকি করার নির্দেশনা দেওয়ার কারণেই এ ক্ষোভ বিরাজ করে।
এ নিয়ে প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে সভা করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী। সভায় নানা বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করার পাশাপাশি তিন কর্মকর্তার কাছ থেকে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখাশোনার বিষয়টি বাদ দেওয়ার জন্য সুপারিশও করা হয়।
চসিকে কর্মরত একাধিক কর্মরত একাধিকজনের অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনিযুক্ত প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট ঘিরে ধরেছে। তারাই মূলত তাকে নানাভাবে সমালোচনার মুখে ফেলার জন্য তৎপর রয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ বলেন, কাউন্সিলর না থাকার কারণে ৪১ ওয়ার্ডের জন্য তিন কর্মকর্তাকে রুটিন কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে প্রকৌশল বিভাগ কোনোভাবেই জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়।
তিনি বলেন, অফিস অর্ডারে তাদের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ তদারকির বিষয়টি ভুল করে বা জেনে-শুনে করেছে অতি উৎসাহী কেউ। এটা তারা করতে পারেন না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ তিন কর্মকর্তারা দেখবেন না, এটা ভুলে অফিস অর্ডারে চলে এসেছিল।
জামায়াত নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, বাসায় বিড়াল লালন করি ইঁদুর ধরার জন্য, যে বিড়াল ইঁদুর ধরবে না তাকে আমি রাখবো না। আর সিটি কর্পোরেশনে যে কর্মকর্তা আছেন তাদের আমি নিয়োগ দিই নাই, তাই এখানে রাজনীতি না এনে কিভাবে কাজ আদায় করা যায় সেটা আমাদের নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী শিখি গেছেন৷ অপেক্ষা করুন, দেখবেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চারদিন অফিস করতে পেরেছি। একদিনও বসে থাকিনি ঘরে।