ইমরান এমি : তিন মাসের জন্য গঠিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি এক বছর পার হতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও ইউনিট কমিটি গঠন না হওয়ায় কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা।
পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও আসছে এখন। এ পরিস্থিতি দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা এনেছে
এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরের শুরুতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, বোয়ালখালীর মোস্তাক আহমদ খানকে সদস্য সচিব ও কর্ণফুলীর আলী আব্বাসকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৬৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কমিটির অনুমোদন দেন। আহ্বায়ক কমিটিকে ৩ মাসের মধ্যে জেলার আওতাধীন বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির কমিটি গঠন করতে বলা হয়। পরে উপজেলা ও পৌরসভার নেতাদের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার কথা থাকলে সেটাও হয়নি।
জানা যায়, এক সময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নিয়ন্ত্রক ছিলেন দল থেকে পদত্যাগ করা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান। নানা কারণে তিনি কোনঠাসা হয়ে পড়ার পর বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির একটি অংশ চলে যায় সুফিয়ানের দিকে।
চট্টগ্রামের একজন কেন্দ্রীয় নেতার সুপারিশে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক হন সুফিয়ান। সদস্য সচিব করা হয় তারই অনুসারী বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপি নেতা মোস্তাক আহমদ খানকে। এনিয়েও চলে আলোচনা-সমালোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দুই নেতার হাতে বন্দি হয়ে গেছে দক্ষিণ জেলা বিএনপি।
আহবায়ক কমিটিকে তিনমাসের সময় দিলেও নানা বাহানায় ইউনিট কমিটি গঠন বা দৃশ্যমান কোন দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারেনি এ কমিটি। যদিও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আছে এ কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে।
কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আবু সুফিয়ান চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসন থেকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। সে নির্বাচনের যাবতীয় খরচ দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির নেতারা বহন করেছেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র দাবি করেছে। অর্থ সহায়তা দেয়া অনেককে কমিটিতে স্থান দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এরপরও দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক কমিটির উপর ক্ষোভ বিরাজ করছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে। এর জের ধরে যে কোন সময় ঘটতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনাও। এমনটা জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীরা। কমিটিতে স্থান হবে না এমন শঙ্কায় এখনই পরিচয় প্রকাশ করতে চান না তারা।
এদিকে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।
তিনি বলেন, আমি দুইবার জাতীয় নির্বাচন করেছি, কারো কাছ থেকে টাকা নিই নি। ৩৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কেউ বলতে পারবে না আর্থিক সাপোর্ট নিয়েছি। তবে অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে সামান্য সহায়তা দিয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
বছর হতে চললেও উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে আবু সুফিয়ান বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কমিটি করতে পারিনি। করোনাকালীন সময়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি তৈরি আছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা যখনই পাবো, তখনই কমিটি ঘোষণা করা হবে।
অপরদিকে মোস্তাক আহমদ খান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সুপারিশে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হয়েছেন বলে দলে আলোচনা আছে। মহাসচিবের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিতি থাকায় থানা ও উপজেলা কমিটির পদপ্রত্যাশীরা তাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছেন বলেও অভিযোগ আছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খানের মুঠোফোন কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি হওয়ার পর বোয়ালখালী আসনে উপ-নির্বাচন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন চলে আসে। যার কারণে নির্ধারিত সময়ে কমিটি করতে পারেনি। এরপর করোনাকালীন সময়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমও স্থগিত হয়ে আছে।
তবে চলতি ১৫ আগস্টের পর উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির এ সাংগঠনিক সম্পাদক।