জোবায়েদ ইবনে শাহাদত : চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার পদুয়ায় বসতভিটা, আবাদি জমি ও রাস্তা ভাঙনের হুমকিতে ফেলে হাঙ্গর খাল থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে।
ভাঙনের কবলে পড়ে উত্তর পদুয়া গ্রামের আকাম উদ্দিন সওদাগর পাড়া, বদলা পাড়া, ঘোনা পাড়া ও মনির আহমদ পাড়ার বেশকিছু বাড়ি খালে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পাশের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ছহির পাড়ার সাথে লোহাগাড়ার সংযোগ রক্ষাকারী ব্রিজটিও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা থাকলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কিন্তু সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কয়েক বছর ধরে অবাধে বালু উত্তোলন করে তা বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে।
বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ও প্রভাবশালী বলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো লাভ হয় না বলে। একই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ দিতেও সাহস পাচ্ছেন না। পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিনও এ বিষয়ে চুপ রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বালু উত্তোলনের কারণে খালের আশেপাশের বাড়িঘর বিলীন হচ্ছে। এছাড়া ছোট রাস্তা দিয়ে বড় ট্রাকের বালু নিতে আসার কারণে রাস্তাঘাটের অবস্থাও বেহাল।’
তিনি বলেন, বালু তোলায় যুক্ত ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় এসব অপকর্ম জানার পরও প্রশাসন চুপ করে আছে। এখানে আইনের শাসন নেই বললেই চলে।
একই এলাকার বাসিন্দা ভ্যান চালক ওয়াহিদ মিয়া একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বালু তোলার কারণে খালের পাড় ভাঙতে ভাঙতে এখন রাস্তায় এসে গেছে। ভ্যান চালিয়ে যখন রাস্তা দিয়ে যাই ভয় লাগে কখন আবার ভেঙে পড়ে যায়। সমস্যার সমাধানের জন্য কাকে বলবো? যাদের বলবো তারাই তো এর সাথে জড়িত।’
এ বিষয়ে পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘কারা এই বালু তুলছে সেটা আমি ঠিক জানি না। তবে হাঙ্গর খাল পরিদর্শন করে আমি বালি তোলার ড্রেজার দেখেছি। যাদের বিরুদ্ধে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে বলেছি, বালু তোলার অনুমতি থাকলে দেখাতে। তবে প্রশাসনের উপর মহল থেকে যদি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে আমার কী করার আছে বলুন?’
বালু উত্তোলনের বিষয়ে প্রশাসনের চুপ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফার ইয়াসমিন চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ইজারার মাধ্যমে খাল থেকে বালু তোলার নিয়ম আছে। কিন্তু কোনভাবে ড্রেজার ব্যবহার করা যায় না। আসলে আমাকে কেউ এখন পর্যন্ত বিষয়টি জানায়নি। আমি দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবো।’
এ বিষয়ে লোহাগাড়া থানার ওসি জাকির হোসেন মাহামুদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরাও এই বালু উত্তোলন নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছি। পরিবেশ আইন অনুযায়ী, আমরা চাইলেই অভিযান পরিচালনা করতে পারি না। তবে এসি-ল্যান্ড বা ইউএনও যদি আমাদের সহযোগিতা চায় তাহলে আমরা অবশ্যই আন্তরিক সহযোগিতা করবো।’
সেভ দ্য ন্যাচার অফ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে খালের পাড় ভেঙে যায় এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে পানির ঢলে ভাঙন অনেক গুণ বেড়ে যায়। এছাড়া বালু তোলার কারণে খালের গভীরতা বাড়ার ফলে ভূপৃষ্ঠের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর।