বীরের সঙ্গে তামাক সেবনকারীদের তুলনা!


ইমরান এমি : বীর শব্দের অর্থ বলবান, সাহসী কিংবা অসামান্য কর্মী। বীর মানেই যোদ্ধা। বীর শব্দ শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে কোন আদর্শবান ব্যক্তির বীরত্বের জয়গান। বীর মানেই আমাদের কাছে কোন অনুসরণীয় ব্যক্তি।

আর এই ‘বীর’ শব্দটিকে বাণিজ্যিক স্বার্থে অপব্যবহার করছে তামাক কোম্পানি। ক্রেতা আকর্ষণে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে ‘বীর’ শব্দটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রচারণার মাধ্যমে তামাক সেবনকারীদেরই তুলনা করা হচ্ছে বীরের সঙ্গে।

নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে তামাকের দোকানে দেখা গেছে, ‘চলো বীর’ ‘অপেক্ষায় থাকুন, দেখা হবে বীরের সাথে’ এই বাক্যগুলোর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন-প্রচারণা চালাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো।

সম্প্রতি তামাকবিরোধী সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস বিটা’র এলাকাভিত্তিক মনিটরিং কার্যক্রমেও বিষয়টি উঠে আসে। ‘বীর’ শব্দটি নিয়ে এমন প্রচারণা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ বলে উল্লেখ করেছে বিটা।

এ বিষয়ে বিটার তামাক প্রকল্পের সমন্বয়কারী প্রদীপ আচার্য বলেন, বীর বলতে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে একজন যোদ্ধার ছবি। তার বীরত্বের জয়গান। কিন্তু তামাক কোম্পানি বীর শব্দটিকে বাণিজিক স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে ‘বীর’ শব্দটির ভুল ব্যাখা উপস্থাপন করছে। ওদের কাছে মনে হতে পারে যারা তামাক গ্রহণ করে তারাই বীর। কোমলমতিদের টার্গেট করে এটা তামাক কোম্পানির নয়া ফাঁদ। তরুণ আর কোমলমতি শিশুদের মনোজগতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এমন অপপ্রচারে নেমেছে তামাক কোম্পানিগুলো।

এদিকে তামাক কোম্পানিগুলোর এ ধরনের প্রচারণা ২০০৫ সালে প্রণীত তামাক আইনের ৫নং ধারাকে লঙ্ঘন করছে। ৫ নং ধারায় বলা আছে ‘কোন কোম্পানি সরাসরি তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচার, প্রচারণা, পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারবে না। কোন ব্যক্তি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।

বিটার তামাক প্রকল্পের সমন্বয়কারী প্রদীপ আচার্য বলেন, তামাক বর্জন করে তামাক কোম্পানির এই অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াতে হবে। নয়তো তরুণ প্রজন্মকে এমন প্রলোভনে জিম্মি করতে সমর্থ হবে কোম্পানিগুলো।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি এখনো আমার নজরে আসেনি। আমি বিষয়টি দেখছি, কেউ যদি এভাবে প্রচারণা চালায় তাহলে তাদের জরিমানা করা হবে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা একুশে পত্রিকাকে বলেন, তামাকজাত পণ্যের প্রচারণা চালানো দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি এ কৌশলে তামাকের প্রচারণা চালায় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব। ম্যাজিস্ট্রেটকে বলে দেব যেন এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।