হাসিনা আকতার নিগার : নিজের মত করে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন সবাই দেখে। কিন্তু সে স্বপ্নকে বাস্তব করার পথ সকলের জন্য সহজ হয় না। বিশেষ করে নারীদের পথ আমাদের সমাজে কণ্টকময় এখনো। মেয়েদের যতই মেধা বা গুণ থাকুক তার মূল্যায়ন হয় বিয়ে দিয়ে। ভালো পাত্রস্থ করতে পারলেই মা-বাবা খুশি। তাই আধুনিক সমাজেও উচ্চশিক্ষা দেবার পরিবর্তে মাধ্যমিক পাশের পরই বিয়ে দিতে চায় অনেকে।
তবে এ অনুকুল পরিস্থিতিকে জয় করতে এখন মেয়েরা বেশ সচেষ্ট। তারা চায় অগ্রসরমান সমাজে নিজেদের এগিয়ে নিতে। আর এর জন্য মেয়েদেরকে শিক্ষিত হতে হবে। শুধু ঘর-সংসার করার জন্য নারীর জন্ম হয়নি। আধুনিক সমাজে একজন নারীকে সংসারের প্রয়োজনেও শিক্ষিত হতে হয়। কেননা পারিবারিকভাবে সন্তানকে সুষ্ঠুভাবে মানুষ করার জন্য একজন সুশিক্ষিত মা আবশ্যক। এর পাশাপাশি নারীকে স্বাবলম্বী হয়ে চলতে জানতে হয়। সংসারে স্বামী-স্ত্রীর সম অধিকার ও দায়িত্বটা নিজস্ব বোঝাপড়ার মাধ্যমে বজায় রাখা উচিত। সার্বিকভাবে একজন পুরুষের মতই নারীকে আপন পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে।
আর এ জন্য নিজের ইচ্ছাশক্তিটা খুব বেশি জরুরি। একজন নারী তার ইচ্ছে আর একাগ্রতা দিয়ে অনেক কিছু করতে পারে। নিজের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা, মেধা, সময় আর বয়সের সাথে শেষ হয়ে গেছে- এমন ধারণা করা ভুল। সমাজ সংসার, সন্তান, স্বামীর প্রতি যেমন নারীর দায়িত্ব আছে। তেমনিভাবে নিজের প্রতি নিজের একটা দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ববোধ থেকে আত্মপরিচয়টা তৈরি করতে হবে।
কন্যা, জায়া, জননী-এ তিনটা পরিচয় দিয়ে নারী চরিত্রকে আবদ্ধ করা হয় ছোটবেলা থেকে। মেয়েকে পরের ঘরে ভালো স্ত্রী হওয়ার আর সন্তানের লালন পালনের শিক্ষা দেয়ায় মুখ্য বিষয় হয়ে উঠে। কিন্তু একজন পুরুষকে পুত্র, স্বামী, পিতার ভূমিকার সাথে সাথে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার জ্ঞান দেয় মা-বাবা। কারণ ছেলের আত্মপরিচয়ে সমাজে মান-মর্যাদা বাড়ে। এ বৈষম্যতা সমাজ থেকে দূর করতে হলে নারীকেই বিকশিত হতে হবে আপন পরিচয়ে।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে সাজসজ্জার পাশাপাশি মনের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক মানুষের ভেতর বিশেষ একটা গুণ থাকে। যা দিয়ে সে পারে নিজের নামটি সর্গবে বলতে। এখন প্রশ্ন হলো সে গুণটি প্রকাশ করার মত ইচ্ছাটা আছে কিনা। সময় আর ব্যস্ততার অজুহাতে নিজেকে দমিয়ে রাখলে ইচ্ছে হারিয়ে যায়। তাই হাজারো ব্যস্ততা থেকে নিজের জন্য কিছু সময় বের করতে হবে।
জীবনে চলার পথে দায়িত্ব, সমস্যা, অশান্তি এসব নিয়ে চলতে হয়। আর নারী সবার মন জুগিয়ে চলতে গিয়ে নিজের আমিকে হারিয়ে ফেলে। যা বড় ভুল। দিনান্তে সে একাকীত্বের বেদনাতে ফেলে চোখের জল। তাই সময় আর বয়সের বাহনাকে ঝেড়ে নিজেকে খুঁজতে হবে, নিজের মত করে। যে কাজটি করতে সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছে মন, সে কাজটি করার চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই। ধুলো পড়া হারমোনিয়াম কিংবা রং তুলিটা হাতে তুলে নিয়ে নিজের আপন গল্পে আবির্ভাব হতে শুধু ইচ্ছে শক্তিটা জাগিয়ে রাখতে হবে। কে কি বলবে তা নিয়ে ভাবতে গেলে হতাশা আসবে জীবনে।
আজকাল তথ্য-প্রযুক্তির বদৌলতে আমরা অনেক সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ দেখে বিস্মিত হই। চেনাজানা নারীদের এ নতুন পরিচয় অন্যদের উৎসাহিত করে। সামাজিক মাধ্যমে নারীদের নানা ধরনের প্লাটফর্মে কাজ করছে অনেকে। যার একটি হলো চট্টগ্রামের মেয়ে শাকিলা গাফফারের (Gaffar Shakila) ‘Dreamer women’s’ ও colours of life; এ প্লাটফর্মে নারীদের স্পিরিট প্রমাণ করে ‘নারী দশভুজা’।
তাই একজন নারী হয়ে আবারও বলবো, নিজেকে সাজান নিজের মত করে। আর সে জন্য মনের ভেতরের ইচ্ছা শক্তিটা ধরে রাখতে হবে। নারী তার স্বমহিমায় আগামীতে এগিয়ে যাবে এ দৃঢ় প্রত্যয়টা হোক আমার, আপনার সকলের।
লেখক: কলাম লেখক