চট্টগ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নৈরাজ্য, নেপথ্যে কারা?


শরীফুল রুকন : চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত শ্বাসকষ্ট থেকে জীবন রক্ষায় চাহিদা বেড়েছে সিলিন্ডার ভর্তি অক্সিজেনের। তিন মাস আগেও ৬.৮ কিউবিক মিটারের যে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যেত আট থেকে দশ হাজার টাকায়। সেটা কিনতে এখন ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগছে।

শুধু তাই নয়, অক্সিজেন মিটারের দাম কয়েকগুণ বেশি রাখা এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিলিন্ডারও সরবরাহ করা হচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় চড়া দামেও মিলছে না জীবন রক্ষাকারী এই অক্সিজেন। এভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার কারসাজির মাধ্যমে অসাধু চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজকে নগরের বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, হাসান ট্রেডার্স, ব্রাদার্স প্রকৌশলী ওয়ার্কস ও জিলানী অক্সিজেন লিমিটেড নামের চারটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট সাইজের প্রতিটি অক্সিজেন সিলিন্ডারে ১৪ হাজার টাকার বেশী নেয়া হচ্ছে। এসব সিলিন্ডারের প্রায় সব মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন নয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন প্রস্তুত করে আসা সীমা এন্টারপ্রাইজ, এয়ার গ্যাস, মদিনা এন্টারপ্রাইজ, গোল্ডেন অক্সিজেন ইন্ডাস্ট্রিজ ও জিডি সুবেদার ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে এসব সংগ্রহ করা হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, সিলিন্ডার কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের কোনো ধরনের রশিদ দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া মজুদ থাকার পরও দাম বাড়বে, এমন ধারণা থেকে কেউ কেউ অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করছেন না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে নগরীর সদরঘাটে মেসার্স ব্রাদার্স প্রকৌশলী ওয়ার্কস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক দিলীপ কুমার বলেন, ‘আমাদেরকে এখন বেশি দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে, তাই দামও বাড়তি নিতে হচ্ছে। কেউ রশিদ চাইলে দেয়া হচ্ছে।’ তবে বাড়তি দামে মালামাল কেনার রশিদ দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।

আসকারদিঘীর পাড়ের হাসান ট্রেডার্স-এর একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘দাম তো সামনে আরও বাড়বে। বিক্রির জন্য আমরা নিজেরাই অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচ্ছি না। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর ফোন পাচ্ছি।’

এদিকে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ থাকার পরও গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পাঁচলাইশের বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে।

আনিসুর রহমান নামে পাঁচলাইশের একজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের বেশকিছু সিলিন্ডার সার্জিস্কোপ হাসপাতালের ভেতরে রাখা হয়েছে। অথচ কিনতে গেলে তারা বলছেন, নেই। কয়েকদিন পর দাম আরও বাড়বে সেই চিন্তা থেকে হয়তো তারা মজুদ করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল আলম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে মাসে ২-৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হতো। সবাই সিলিন্ডার ভাড়ায় নিয়ে যেতেন। কেউ কেউ সিলিন্ডারে অক্সিজেন নিতে আসতেন। তখন মানুষ সিলিন্ডার বাসায় তেমন নিত না। আমি কয়েকজন কর্মচারী রেখেছি, শুধু সিলিন্ডার হাসপাতালে সরবরাহ দেয়ার জন্য।’

‘আর এখন দোকানে মানুষ ভিড় করছে, অথচ তাদেরকে দিতে পারছি না। অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকায় আজকে দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। যাদের আমদানি করার কথা, তাদের কাছ থেকে সিলিন্ডার পাচ্ছি না। সাতদিন থরে অক্সিজেন রেগুলেটর নেই। কেউ বলছে বন্দরে এসেছে, কেউ বলছে বিমানে এসেছে। কিন্তু এখনো পাচ্ছি না।’ বলেন শহীদুল আলম।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব গেইটে সাহান মেডিকো নামে একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, অক্সিজেন মিটার বিক্রি করা হচ্ছে তিন হাজার টাকা। অথচ করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে এক হাজার টাকার মধ্যে পণ্যটি পাওয়া যেত। দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, বিক্রেতার এক কথা- তাদেরকে এখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসায় সম্পৃক্ত রয়েছে ৪০টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি কারসাজির সাথে জড়িত। এছাড়া অনলাইনভিত্তিক ৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবসায়। এর মধ্যে অনিয়মে জড়িত ৫টি। তবে অনিয়মে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম জানায়নি প্রশাসন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক একুশে পত্রিকাকে বলেন, করোনার কারণে জনজীবন স্থবির হওয়ার সুযোগ নিয়ে চিকিৎসা সরঞ্জামের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করতে আগে নেয়া হতো ১২০-১৫০ টাকা। আর এখন নেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। অক্সিজেন মিটারের দামও ইচ্ছেমতো নেওয়া হচ্ছে। অনিয়মে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে দেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেডিকেল সরঞ্জাম ব্যবসায় যুক্ত একজন ব্যক্তি একুশে পত্রিকাকে বলেন, মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেনের চাহিদা বেশি থাকায় কিছু প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে অক্সিজেন নিয়ে ক্রসফিলিং ও টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে মেডিকেল গ্রেডের সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডীন ডা. সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন সিলিন্ডার শ্বাসকষ্টের রোগীর কোনো কাজে আসবে না। সিলিন্ডারে সমস্যা থাকলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। এছাড়া ক্রসফিলিং বা টেম্পারিং করা এসব সিলিন্ডার বাসায় মজুত করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন প্রস্তুত করে এমন শীর্ষ তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, চট্টগ্রামের সাগরিকায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ মালিকানার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ, কালুরঘাট এলাকার এস্পেকট্রাম অক্সিজেন লিমিটেড ও নারায়ণগঞ্জের ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটর নেই। তারা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন প্লান্ট প্রস্তুত করে দেয়। পরবর্তীতে সে প্লান্টে অক্সিজেন গ্যাস সাপ্লাই করে।

মেডিকেল সরঞ্জামের ব্যবসায় যুুক্ত চট্টগ্রামের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, অক্সিজেনের সিলিন্ডার ও অক্সিজেন মিটার অনেকটাই আমদানি নির্ভর। চীন, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসব সরঞ্জাম আসে। এখন সেসব দেশেও সংকট চলছে। ফলে সেখানেও বেড়ে গেছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, মিটারের দাম।

চট্টগ্রামে আগে হাতে গোনা কিছু ব্যবসায়ী অক্সিজেন সামগ্রী বিক্রির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে এখন চট্টগ্রামে শতাধিক মৌসুমী ব্যবসায়ী, ফার্মেসি মালিক যুক্ত হয়েছেন এই ব্যবসায়। চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে প্রায় দোকানে সিলিন্ডার। মান যাছাই করার, দর দাম করার সুযোগ নেই সেখানে। আনা হচ্ছে, আর বিক্রি হয়ে যাচ্ছে- এমন অবস্থা।

আগে যে অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা নেয়া হতো, এখন একই সিলিন্ডার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। আগের মতো ভাড়ায় মিলছে না সিলিন্ডার। প্রায় পাঁচ গুণ দাম বেড়ে মাঝারি মানের একটি অক্সিজেনের সিলিন্ডার ও আনুসাঙ্গিক সরঞ্জাম বিক্রি হচ্ছে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ তিন মাস আগেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের এই সেট পাওয়া যেত পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায়।

চট্টগ্রামে রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক একুশে পত্রিকাকে বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অক্সিজেন মিটার আমদানি আমদানি করা প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকা কেন্দ্রীক। মিডফোর্ডে বিএম ভবনে তাদের অফিস আছে, এই লোকগুলো আড়ালে থাকে। সেখানে বিশাল গোডাউন। তারা আমদানি করে সারা দেশে ছেড়ে দেয়। কয়েক হাত ঘুরে চট্টগ্রামে ডিলার, খুচরা বিক্রেতাদের হাতে আসে অক্সিজেন সিলিন্ডার, মিটার।

অক্সিজেন সরবরাহের সামগ্রীর উচ্চ মূল্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ‘পেপারলেস ব্ল্যাক মার্কেটিং’য়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাস্তবে দাম বাড়লেও নথিপত্রে আগের দামই লেখা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, সিলেট থেকে একজন চায়নার তৈরি পাঁচটি অক্সিজেন মিটার পাঠিয়েছে আমার কাছে। রশিদে লিখে দিয়েছে প্রতিটি দুই হাজার টাকা। অথচ আমার কাছ থেকে নিয়েছে প্রতিটি ৫ হাজার ২০০ টাকা করে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তিনি জবাব দেন, তারও নাকি রশিদে উল্লেখ করা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। কিন্তু রশিদে সে বেশি দেখাতে পারবে না। না নিলে ফেরত দিতেও বলে। এখন এই মিটার আমি কত টাকা বিক্রি করবো?

এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুইজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই দুই হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম মেডিকেলে একটা লাইন দিয়ে পাঁচজনকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। যে পরিমাণ অক্সিজেন দরকার তত পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদার ১০ ভাগের এক ভাগ মিলছে অক্সিজেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনা রোগীর যখন অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, তিনি অক্সিজেন ছাড়া আর কিছু চিনেন না, বুঝেন না। শুধু বলতে থাকেন, আমাকে আরও অক্সিজেন দিন, আর বাড়িয়ে দিন। যত অক্সিজেন বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তত তিনি শান্তি অনুভব করেন। নিঃশ্বাস ফেলতে ভালো লাগে।’

অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসায়ী শহীদুল আলম বলেন, ৮ কোটি মানুষের এই দেশে ৫ হাজার সিলিন্ডারও ছিল না। সংকট শুরু হওয়ার পর অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানি করা হচ্ছে, তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় এখনো অনেক কম। মানুষের এত সিলিন্ডার প্রয়োজন হচ্ছে, যা আগে ধারণাও করা যায়নি। আর আমদানি চাইলে তাৎক্ষণিক করা যায় না। সরকারের কিছু নিয়ম-নীতি আছে, সেগুলো মানতে হয়। এসব নিয়ম মানতে গিয়ে দ্রুত আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এদিকে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৪ হাজার ছুঁই ছুঁই। অথচ হাসপাতালে শয্যা আছে তিনশ’র কিছু বেশী। ফলে আড়াই হাজারের বেশী রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ডাক্তার-হাসপাতাল না পেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত এসব রোগীর স্বজনরা সর্বস্ব দিয়ে হলেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের পেছনে ছুটছেন।

অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাহাকারের মধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে, আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ধনী পরিবারগুলো অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা হিসেব করে বিত্তবানরা আগে থেকে সিলিন্ডার মজুত করে রাখছেন বলে তথ্য দিয়েছেন অক্সিজেন ব্যবসায় যুক্ত একাধিক ব্যক্তি।

করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর দেশের একটি শীর্ষ শিল্প গ্রুপের মালিকের পরিবার বাসায় ৬০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করেছিল বলেও তথ্য পাওয়া গেছে; যদিও তাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন ছিল না। সিলিন্ডার সরবরাহ দেয়া প্রতিষ্ঠানের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এভাবে এক শ্রেণীর মানুষের মজুতের কারণে দরিদ্র রোগীরা প্রয়োজনে উচ্চ মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে পারছেন না। রোববার চট্টগ্রাম মেডিকেলের পূর্ব গেইটে সৌদিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি দোকানে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে যান যান জাহাঙ্গীর আলম; তিনি বলেন, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন আমার বাবা। হাসপাতালও ভর্তি নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে সিলিন্ডার কিনে বাসায় নিতে হচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বাজার থেকে কিনে অক্সিজেন সরবরাহের পদ্ধতিটি খুবই ইতিবাচক। এর ফলে অনেক প্রাণ হয়ত রক্ষা করা সম্ভব হবে। সাধারণ রোগীর শরীরে অক্সিজেনের উপস্থিতি ৯০ শতাংশের নিচে নামতে শুরু করলেই অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। পালস অক্সিমিটার নামে একটি সহজ ডিভাইসের মাধ্যমে অক্সিজেনের শতকরা উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। অক্সিজেন যদি ৮০ শতাংশ বা এর আশপাশে থাকে তখন বাসায় রেখে অক্সিজেন দিয়েও সঙ্কট মোকাবেলা করা যায়।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব বলেন, অক্সিজেন বেশি মাত্রায় নিলে ক্ষতির ঝুঁকি আছে। এই ঝুঁকি থেকেই বড় সংকটের সৃষ্টি হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে বিরূপ প্রভাব দেখা দিতে পারে। এ জন্য অক্সিজেন নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করেই তা দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সিনিয়র ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক বাবু একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমরা এখন অমানুষ হয়ে গেছি। অক্সিজেন নিয়েও আমরা ব্যবসা করছি। অক্সিজেন হচ্ছে নিঃশ্বাস নেয়ার একটা অবলম্বন। সেটা নিয়ে কিছু অমানবিক মানুষের ব্যবসা মেনে নেয়া যায় না। মরার উপর খাড়ার ঘা হচ্ছে, কিছু ব্যক্তি এখনো অসুস্থ হয়নি। কিন্তু তারা ঘরের সদস্য হিসাব করে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা শুরু করেছে।

তিনি বলেন, একটা বাড়িতে একটা সিলিন্ডার কেনা যায়, সবাই মিলে ব্যবহারের জন্য দরকার আছে। কিন্তু সুস্থ থাকার পরও এখন সবাই যদি জনপ্রতি একটা করে সিলিন্ডার কেনা শুরু করেন এটা দুঃখজনক। এমনিতে আমাদের চাহিদার সাথে জোগানের মিল নেই। তার উপর বিত্তবানরা মজুত করছে। এর মাধ্যমে ওই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে আরও ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

মানবাধিকার নেতা আমিনুল হক বাবু বলেন, ‘সিন্ডিকেট করে দাম যারা বাড়াচ্ছে তারা যেমন অপরাধ করছে, তেমনি যেসব বিত্তবান বিনা কারণে মজুত করছে তারাও অপরাধ করছে। মাঝখানে ভুক্তভোগী হচ্ছে গরীব জনগণ, যারা এই মুহুর্তে অসুস্থ, তারা এটার ফল ভোগ করছে।’

অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধে পুলিশের পদক্ষেপের বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) শ্যামল কুমার নাথ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে যদি কেউ অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করেন- এ সংক্রান্ত অভিযোগ শুনে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সিএমপি। অক্সিজেন সিলিন্ডারের মজুদ ও মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।’