পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষকই প্রশ্নোত্তর বলে দিচ্ছেন!

কক্সবাজার : দুই মিনিট সাত সেকেন্ডের একটি ভিডিও। তাতে দেখা যায়, পরীক্ষা কেন্দ্রে এক ছাত্রীকে উত্তরপত্র লিখতে সাহায্য করছেন এক শিক্ষক। শিক্ষকের হাতে নোট। সেখান থেকে দেখে ‘ই’ প্রশ্নের উত্তরে বলে দিচ্ছেন ইংরেজি শব্দ ‘সাফার’ লিখতে। তা আবার বানানও করে দিচ্ছেন- ‘এস ইউ ডাবলএফ ই আর’। এরপর বলছেন ‘৭ নম্বর লেখ’- বি+আই+এইচ বলেই পরীক্ষার্থীর গালে বসিয়ে দিলেন জোড়ে এক থাপ্পড়।

আবার শুরু করলেন- বি+আই+এইচ+ই+জে+ই+জে+ই+এ+এফ+এ+ই। এরপর শুরু হলো ৮ নম্বর প্রশ্নোত্তর- ‘এ’ হলো বলেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষক। বলেন- প্রশ্নে কেন, খাতায় লেখ- বলতে না বলতে ভিডিও’র ডিউরেশান শেষ। আলোচ্য এই শিক্ষকের নাম আব্দুস সালাম। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফ হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

জানা যায়, গেল জেএসসি পরীক্ষায় টেকনাফের আল আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের এভাবেই উত্তরপত্রে লিখতে সাহায্য করেন তিনি। অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে উত্তরপত্রে লিখতে সহায়তা করার এমনতর একটি দৃশ্য তার অগোচরেই মোবাইল ফোনে ভিডিওবন্দী হয়ে যায়। সেই ভিডিওটি সম্প্রতি একুশে পত্রিকার হাতে এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে লিখতে সাহায্য করার বিষয়টি একুশে পত্রিকার কাছে স্বীকার করেন। তবে এ কাজ তিনি জেএসসি পরীক্ষায় নাকি টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় করেছেন সেটি তার মনে নেই বলে জানান।

তিনি বলেন, সম্পর্কের কারণে কোনো কোনো পরীক্ষার্থীর প্রতি একটু-আধটু খেয়াল রাখতে হয়। আমিও তাই করেছি। চলার পথে ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। সেখান থেকে শিক্ষা নিতে পারলে পরে আর ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না- যোগ করেন এই শিক্ষক।

২০১০ সালে হ্নীলা স্কুলে যোগদানের পর স্কুলের পড়ালেখার মান ও পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্য বেড়েছে দাবি করে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘২০১৪ সালে জেএসসিতে ৯৫, ২০১৫ সালে ৯৬ এবং ২০১৬ সালে ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ১৯২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে চলতি বছর ২৮ জনই জিপিএ ৫ পেয়েছে। তার মধ্যে ৯ জন গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে।’

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রামমোহন সেন-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষায় একজন শিক্ষকের এমন আচরণ খুবই লজ্জাজনক। কোনোরকম কথা ও টোকাটুকি ছাড়াই সুন্দর পরিবেশে কক্সবাজার জেলায় জেএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার যে কৃতিত্ব, সেটাকেই প্রকারান্তরে ম্লান করে দিলেন এ শিক্ষক।’

বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।