চট্টগ্রাম : ছেলে থেকে মেয়েতে রূপ নিয়েছে- এই খবরে কর্ণফুলী নদীর ওপারে একটি পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে। ঘটনার শিকার কিশোরকে একনজর দেখতে দলে দলে লোক আসছেন। আর তাদেরকে মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করছেন কিশোরের বাবা-মা। কয়েকদিনের মধ্যে মেজবানের আয়োজন করে এই আনন্দ উদযাপন করার কথাও ভাবছে পরিবারটি।
ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণফুলি থানার বদলপুরা গ্রামের কাতার প্রবাসী আহমদ হোসেন সিরাজীর বাড়িতে। মেয়ে থেকে ছেলে হওয়ার খবর শুনে ২৯ দিন আগে প্রবাসী আহমদ হোসেন ছুটিতে বাড়ি আসেন। এরপর সন্তানকে নিয়ে ছুটে যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বারডেম ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেয়েটিকে ছেলে মর্মে রিপোর্ট দেওয়ার পর আহমদ হোসেনের বাড়িতে রীতিমতো উৎসব চলছে।
মঙ্গলবার রাতে আহমদ হোসেন সিরাজী একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমাকে আল্লাহ একের পর এক চারটি কন্যাসন্তান দিয়েছেন। তিনবার পবিত্র মক্কা শরীফে গিয়ে আল্লাহর কাছে একটি ছেলেসন্তানের ফরিয়াদ করেছি। আল্লাহ আমার ফরিয়াদ এমনভাবে শুনলেন, আমার বড় মেয়েটাকে ছেলে করে দিলেন।
তিনি বলেন, আমার চার কন্যার মধ্যে মুনতাহিন আহমেদ (১৪) সবার বড়। মেরিন একাডেমি স্কুলের ৮ম শ্রেণীতে পড়ে সে। তিন মাস আগে মুনতাহিন ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে, সে ছেলে হয়ে গেছে। সকালে ঘুম ভাঙার পর দেখতে পায়, সত্যি সত্যি সে ছেলেতে পরিণত হয়েছে। এসময় তার পয়গাম্বরি সুন্নত হয়েছে বলেও দাবি করেন বাবা আহমদ হোসেন।
তিনি জানান, বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা ঢাকার বারডেম হাসপাতাল এবং তাদের পরামর্শে সামরিক হাসপাতাল, সবশেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. তাহমিনা বানুর শরণাপন্ন হই। তারা সবাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমার মেয়েটি ছেলেতে পরিণত হয়েছে বলে রিপোর্ট দেয়। এরপর কয়েকদিন আগে তার লম্বা চুল কেটে ছোট করে দিই, তার জন্য ছেলের কাপড় কিনে আনি। এরপর হুজুর ডেকে দোয়া-দরূদ পড়ে তার নাম রাখি আবদুল্লাহ আল মুহিন। এখন আমার এক ছেলে তিন মেয়ে। আমার ছেলেসন্তানের জন্য তীব্র আকাক্সক্ষা আল্লাহ পূরণ করেছে। এজন্য আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানাই এবং ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ (অবসরপ্রাপ্ত) ডা. তাহমিনা বানু একুশে পত্রিকাকে বলেন, এটা একধরনের ডিজিজ। এই ডিজিজের নাম ‘হাইপোসপিয়াডিয়াস’। জন্ম থেকেই এই রোগে ভুগছিল শিশুটি।
ডা. তাহমিনা বানু বলেন, ‘শিশুটি পুরুষ হয়েই জন্ম নিয়েছিল। তার প্রস্র্রাবের জায়গা যেখানে থাকার কথা সেখানে না থেকে একটু নিচের দিকে ছিল। দুই পাশে অণ্ডকোষও ছিল। তবে পুরুষাঙ্গ কিছুটা অস্পষ্ট। ফলে জন্মের পর বাবা-মা শিশুটিকে মেয়ে ভাবতে শুরু করে। এই ভাবনা থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত মেয়ে হিসেবে বড় হয়েছে সে। এ সময়টাতে ভেতরে ভেতরে তার মেইল ক্যারেক্টার চলে আসলেও সঙ্কোচ, লজ্জায় মা-বাবাকে সে বলেনি।
তিনি জানান, পিরিয়ড শুরু না হলে গত আগস্ট মাসে তার এক মামা তাকে আমার কাছে নিয়ে আসে। আমি তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। সিসটোসকপি (প্রস্র্রাবের রাস্তা দিয়ে মেইল-ফিমেইল নির্ণয়ের ডায়াগনোসিস) করেও নিশ্চিত হই, সে মেইল। পূর্ণাঙ্গ পুরুষের অবয়ব তৈরি ও পুরুষাঙ্গের সাইজ স্বাভাবিক হওয়ার জন্য ছেলেটিকে কয়েকটি ইনজেকশন প্রেসক্রাইভ করা হয়েছে বলেও জানান ডা. তাহমিনা বানু।